শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০০৮

ইসলামে পিতার মর্যাদা



ইসলামে পিতার মর্যাদা


সৃষ্টিজগতে মানুষের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রহ প্রদর্শনকারী ব্যক্তি হচ্ছেন পিতামাতা। পিতামাতাই মানুষের সর্বাধিক আপনজন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেন­ “আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণ করার আদেশ দান করেছি, তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছেন এবং অতিকষ্টে তাকে প্রসব করেছেন।” (সূরা আহকাফ, ১৪)


উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ্‌তালা বিশেষভাবে মায়ের গর্ভধারণ কষ্ট প্রসবকালীন কষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন। আর সন্তানদের জন্য পিতামাতার কষ্ট স্বীকার করাকে তারা তার কাছ থেকে সদাচরণ পাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পিতামাতার আনন্দ ও আনুগত্যের ওপরই সন্তানের পার্থিব-অপার্থিব শান্তি, সুখ ও মুক্তি নিহিত। পিতামাতার অবাধ্যতা ক্ষমার অযোগ্য কবিরা গুনাহ। আর এটা সন্তানের পরকালীন দুর্দশার প্রধান কারণ। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাঃ এরশাদ করেন, ‘করুণাময় আল্লাহতায়ালা বান্দার সব গুনাহই ক্ষমা করেন কিন্তু পিতামাতার অবাধ্যতার গুনাহ ক্ষমা করেন না।’ অপর হাদিসে রাসূল সাঃ পিতামাতার অধিকার সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে এরশাদ করেন, ‘তারা উভয়েই তোমার জন্য বেহেশত ও দোজখ।’ ইসলামের দৃষ্টিতে তথা কুরআন-হাদিসের বিধান মতে সন্তানের কাছে মাতাপিতা উভয়ই সমান মর্যাদাবান। কোনো প্রকার পার্থক্য করা যাবে না। তবে অধিকারের ক্ষেত্রে পিতার চেয়ে মাতার অধিকার তিন গুণ বেশি, কিন্তু পরিবারের সবার কর্তা হিসেবে পিতার মর্যাদা ও সম্মান সবার ওপর। সে হিসেবে মাতাকে বাদ দিয়ে পিতার মর্যাদা ভাবার অবকাশ নেই। কুরআন ও হাদিসের যেখানেই মাতাপিতার কথা এসেছে, সেখানেই পিতামাতার কথা একসাথেই আলোচনা করা হয়েছে। এটি সুস্পষ্ট যে রাসূল সাঃ-এর অনেক হাদিসেই মাতাকে পিতার চেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন বলে উল্লেখ করেছেন। কাজেই পিতার আদেশ যদি পালনীয় হয় তবে মাতার আদেশ আরো বেশি গুরুত্বের সাথে পালনীয় হবে। সন্তানের জন্ম থেকে লালন-পালনের ক্ষেত্রে পিতার চেয়ে মাতার কষ্ট সবচেয়ে বেশি।


হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেছেন, মানুষের সর্বোত্তম অনুগ্রহের কাজ হলো, পিতার মৃত্যুর পর তার পিতার বন্ধুদের সাথে সদাচরণ করা। (মুসলিম শরিফ) এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, পিতা যাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছেন তারাও পিতার সমতুল্য সদাচরণের মর্যাদা লাভের অধিকারী। অপর হাদিসে রাসূল সাঃ বলেছেন, প্রতিপালক আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে। (তিরমিজি শরিফ)। তিরমিজির এক হাদিসে পিতাকে বেহেশতের মধ্যবর্তী দরজা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বেহেশতে প্রবেশের উত্তম উপলক্ষ হলো পিতার হক আদায় করা। হাদিসের ইঙ্গিত হলো, পিতামাতার অবাধ্য ব্যক্তির নেক আমল কোনো কাজে আসবে না।

পিতার নির্দেশে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের বিধানঃ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন, ‘আমার বিবাহবন্ধনে এক মহিলা ছিল, আমি তাকে ভালোবাসতাম। অথচ আমার পিতা হজরত ওমর রাঃ তাকে ঘৃণা করতেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি এ মহিলাকে তালাক দিয়ে দাও। আমি অস্বীকার করলাম। তখন আমার পিতা হজরত ওমর রাঃ রাসূল সাঃ-এর কাছে এলেন এবং তাকে ঘটনাটি বললেন। তখন রাসূল সাঃ আমাকে বললেন, তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। (তিরমিজি, আবু দাউদ) এ ব্যাপারে শরিয়তের বিধান হলো­ পিতামাতা যদি পুত্রবধূর মধ্যে ধর্মীয় কোনো বিধান যেমন ফরজ, ওয়াজিব লঙ্ঘন বা অস্বীকার করতে দেখেন, তাহলে মুত্তাকি পিতামাতার নির্দেশে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করা জায়েজ। কেউ কেউ বলেছেন ওয়াজিব। কিন্তু পিতামাতা যদি ব্যক্তিগত কোনো কারণে বা আক্রোশে তালাক দিতে বলেন, তাহলে পুত্রের জন্য তা পালন করা অপরিহার্য নয়। পিতার প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টিতে তাকানো সওয়াবের কাজঃ রাসূল সাঃ বলেছেন, যখন কোনো সন্তান নিজের পিতামাতার প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখেন, আল্লাহ্‌তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি মকবুল হজের সওয়াব লিপিবদ্ধ করেন। সাহাবায়ে কেরাম রাঃ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি সে দৈনিক একশতবার দৃষ্টিপাত করে? উত্তরে বললেন, হ্যাঁ তারও বিনিময়ে এক শ’ হজের সওয়াব দেয়া হবে। আল্লাহ অতি মহান ও পবিত্র। পিতা সন্তানের জন্য বেহেশত ও দোজখঃ এক ব্যক্তি পিতামাতার হক সম্পর্কে রাসূল সাঃ-এর কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘পিতামাতা হচ্ছে তোমার জান্নাত আর তোমার জাহান্নাম।’ যে সন্তান পিতামাতর হক আদায় করবে, তাদের সেবাযত্ন করবে, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে­ সে সন্তানের জন্য বেহেশত অপরিহার্য। যে সন্তান এর বিপরীত করবে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত।


ডা. শেখ জামিল মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন

কোন মন্তব্য নেই: