সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০০৮

পৃথিবী একটি ট্রানজিট স্টেশন

পৃথিবী একটি ট্রানজিট স্টেশন



এম. হায়দার উজ্জামান
আমরা পৃথিবীতে যারা এই মুহ‚র্তে আছি, চোখ বন্ধ করে যদি একবার ভাবি কোথা থেকে আমরা প্রত্যেকে এলাম, বড় হলাম, আবার-কোথায় চলে যাওয়া। কি এক অবাক ব্যাপার, জীবন নিয়ে আমরা একদিন এলাম, এভাবেই আমাদের বংশধররা এসেছেন জীবন কাটিয়েছেন, পৃথিবীর আলো, বাতাস, সম্পদ সম্ভার এর সদ্বব্যবহার অপচয় করে আবার জীবন সায়ান্যে চলে যাওয়া। সে যাত্রা কোথায় কেউ আমরা জানি না। তবে পৃথিবীতে আসবার পর যেতে হবে এর কোন ব্যত্যয় এখনো মানব ইতিহাসে ঘটেনি, ঘটার সম্ভাবনাও নেই। মুরুব্বিদের সামনে যখন এসব তত্ত¡ কথা নিয়ে আলোচনা করতে গেছি সবাই থামিয়ে দিয়েছেÐ একথা বলে যে আলøাহর সৃষ্টি নিয়ে এত মাথা ঘামানো ঠিক না- তাই এ নিয়ে আলোচনার কোন সুযোগ কখনো পাইনি। কিন্তু আমার মনের মাঝে যখন ভেসে ওঠে আমার বাবার কথা, তিনি এক সময় জন্ম নিয়েছিলেন, ছিলেন শিশু, তারপর বড় হওয়া, কত ঘটনা বহুল জীবন এরপর একদিন তিনি চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। আমার জীবদ্দশায় তার সাথে সাÿাতের কোন সুযোগ নাই। তিনি চলে গেছেন এক অসীম ভবিষ্যতের দিকে। তিনি এখন হয়ে গেছেন গত। সামনে যে কোন সময় আমাদের সবার এমনই রা¯Íা বা গন্তব্য। মনের মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করে উত্তর একটাই পেয়েছি, ঠিকানা আমাদের একটিই তা সে আমার, আপনার মার্কিন মূলুকের প্রতাবশালী রাজা জর্জ বুশ আর আমার বাড়ীর কাজের সহযোগী রওশন বা সিরাজ, সকলের অরিজিন আর ডেসটিনেশন এক।
আমার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য, দেনা পাওনা নিয়ে সময়ে সময়ে অনেকেই অনেক ভাল ব্যবহার করেন- আবার চরম দুর্ব্যবহারও করেন-অনেক সময় কষ্ট হয় নিজেকে সামাল দিতে। রাতদিন খাটা-খাটির পর মাঝে মাঝে মনে হয় ছেড়ে দেই সব। অনেকের সাময়িক দাম্ভিকতা, প্রতাপ সকল কিছু দেখে মাঝে মাঝে আমি একা মনে হাসিÐ ভাবনা একটাই, আজব এ দুনিয়া রাজ্য। এ যেন একটি ফ্লাইট তার যাত্রা হয়ত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, পথে দুবাইতে কয়েক ঘন্টার যাত্রা বিরতি- তারপর আবার যাত্রা এবং নিশ্চিত গন্তব্য। তাই বন্ধুদের আর আমার স্ত্রীর সাথে যখন মন খুলে কথা বলি তখন মনের এই অনুভ‚তির কথা বুঝাতে পারি। অনেকেই এসব কথা শুনতে চায় না। তারুণ্য যৌবনের শক্তির বলে, অর্থ বিত্তের প্রভাবে, সাময়িক রাজনৈতিক অবস্থানের দাপটে, অফিসিয়াল অবস্থানের কারণে আমরা সবাই নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় আচরণ করি। হয়ত অনেকের ভাবনায় কখনো আসেই না আমাদের যাত্রা পথ দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে- সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে তীব্র গতিতে। পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ যার একটি আন্দাজ করে হিসেব করলেও দেখা যাবে আমরা কেউই পৃথিবীতে নিজের আয়ুর কত শূন্য শূন্য দশমিক সময় এখানে থাকছি- আর সবার জন্য নির্ধারিত স্থানে ছিলাম আর থাকব নিরানব্বই দশমিক নিরানব্বই শূন্য শূন্য অংশ সময়। কি আশ্চর্যভাবে আলøাহ পাক এই দুনিয়া তৈরী করেছেন। অথচ আমরা সামান্য সময়ের জন্য এখানে এসে কত হিংসা বিদ্বেষ, হানাহানি, কাটাকাটি, অবজ্ঞা, পাপ, ভুল, অন্যায়, জবর দখল, কত কি যে করছি। আমার হাসি পায় মনে মনে। আমি জানি আমার এই লেখা পড়ে অনেক পাঠক আমাকে গালি দেবেন। তারপরও আমি বলব পৃথিবীর সকলের পারমানেন্ট ঠিকানা যখন একটাই, কারণ যে যে ধর্মেরই হোক দেহাবশেষ এই মাটিতে স্থান করে নেয়, তাই মাটিই আমাদের ঠিকানা। সেখানে যাবার আগে যতদিন পৃথিবী নামক ট্রানজিট পয়েন্টে যতÿণ আমরা থাকব চলুন না একটু সুন্দর করেই সকল নেগেটিভের উপরে উঠে কাটাই। আর আমাদের পরবর্তী জেনারেশনকেও সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য উদ্বুদ্ধ করি, কারণ ট্রানজিট লাউঞ্জে বেশি সময় থাকা যায় না, চলে যেতে হবেই। পৃথিবী একটি ট্রানজিট স্টেশন

কোন মন্তব্য নেই: