নামাজের সাথে সময়ের সম্পর্ক
নামাজের সময় সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই প্রশ্ন আসে, নামাজের সাথে মানুষের সম্পর্ক কী? নামাজের সাথে সময়ের কী সম্পর্ক? এবং নামাজ আদায় করার ‹েত্রে সময়ানুবর্তিতা কতটুকুন জরম্নরি? এসব বিষয় সম্পর্কে শরিয়তের যেসব বিধিবিধান রয়েছে যদি সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হয়, তবে নামাজ আদায়ের জন্য সময়ের আবশ্যকতা ও গুরম্নত্ব সহজেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাই আমরা আমাদের আলোচনা এ বিষয় দিয়ে শুরম্ন করছি।নামাজ রূহের জীবনী শক্তি : এ বিষয়ে মাওলানা এয়াকুব ইসমাঈল কাসেমি তার বারতানিয়াহ মে ওয়াক্তে নামাজে এশাকে বারে মে তাহকিক, পৃষ্ঠা-৩-এ যথার্থই লিখেছেন, ‘আলস্নাহ জালস্না শানুহু তাঁর বান্দাদের ওপর ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাঁচটি বিভিন্ন সময়ে পাঁচটা নামাজ ফরজ করেছেন। (রূহের জন্য) নামাজের উদাহরণ বৃ‹ের (জন্য পানির) তুল্য, যার বৃদ্ধি ও উন্নতির স্বাভাবিক পদ্ধতি হলো, এর গোড়ায় কিছু‹ণ পরপর বারবার পানি দেয়া হয়। এর ফলে গাছ সতেজভাবে বাড়তে থাকে এবং পরিপূর্ণতা লাভ করে। তেমনি অবস্খা (রূহের জন্য) নামাজের। দিলের কালিমা দূর করতে, এর মধ্যে পরকালের প্রেম ও ব্যাগ্রতা সৃষ্টি করতে এবং দুনিয়ার মোহমুক্ত করতে রূহের ২৪ ঘন্টায় বারবার নামাজের মতো আত্মার খোরাক প্রয়োজন, যাতে আলস্নাহর সাথে রূহের সম্পর্ক ও বìধন গভীর হতে হতে পূর্ণতা লাভ করে।’ বিশিষ্ট ইসলামী চিìত্মাবিদ সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদবী তার আরকানে আরবায়াহ, পৃষ্ঠা ২৭-এ অত্যìত্ম হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিতে বিষয়টি এভাবে লিখেছেন, ‘এই পাঁচ বেলার নামাজ স্বীয় সময় ও রাকায়াতসমূহ নিয়ে মূলত আত্মার খোরাক এবং তার স্বাস্খ্যের ইনজেকশন বিশেষ। এসব নামাজ ঠিক ততটুকু সময় ও পরিমাণ দিয়ে আদায় করা উচিত যতটুকু আলস্নাহতায়ালার তরফ থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে, যিনি মানুষের স্রষ্টা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিকর্তা এবং সর্বজ্ঞ, যিনি আত্মার শুধু পরিশুদ্ধকারীই নন, তার স্রষ্টা এবং কৌশলীও বটে। এসব সময়ের অìত্মর্নিহিত ভেদ, এসব সময়ের মধ্যে আলস্নাহতায়ালার তাজালিস্নর ঝলক, এসব সময়ের মধ্যে রহমতের যে বর্ষণ এবং তাদের মধ্যে যে নূরের ঝলক ও রূহের উন্নতির যেসব উপাদান পাওয়া যায় তা একমাত্র আলস্নাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম ছাড়া আর কারো জানা নেই।’ সময়ের তাৎপর্য ও গুরম্নত্ব : মানুষের ওপর নামাজ কিভাবে ফরজ হলো, আবার নামাজ ফরজ হওয়ার জন্য যে তার সময় হতে হবে এর তাৎপর্য কী? এ রহস্য উদঘাটন করে তাহতাবি আলা মারাকিইল ফালাহ কিতাবের পৃষ্ঠা ১০০তে লিখা আছে, ‘নামাজ যে ফরজ হয়েছে, তার মূল কারণ হলো আজলে মোমেনদের ওপর আলস্নাহতায়ালার নামাজ ফরজ করা। কেননা, যেকোনো হুকুম ফরজ করার কর্তৃত্ব এককভাবে একমাত্র আলস্নাহই রাখেন। তবে যেহেতু তাঁর এ ফরজ করাটা আমাদের থেকে অদৃশ্য থাকা অবস্খাতেই সাধিত হয়, আমরা সেটা জানতে পারি না, এ জন্য তিনি একটা বাহ্যিক আপে‹িক কারণের ব্যবস্খা করেছেন, যেন তিনি যে আমাদের ওপর নামাজ ফরজ করেছেন সেটা আমরা সহজে বুঝতে পারি। আর সেই আপে‹িক কারণ হচ্ছে ‘সময়’।’নামাজের সময় নির্দিষ্ট : প্রত্যেক বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) মুসলমান নরনারীর ওপর নামাজ পড়া ফরজ। কিন্তু ওয়াক্ত হওয়ার আগে কোনো নামাজ আদায় করা ফরজ হয় না। যখন যে নামাজের ওয়াক্ত উপস্খিত হয় শুধু তখনই সে নামাজ আদায় করা ফরজ হয়। অর্থাৎ নামাজ আদায় করার জন্য ওয়াক্ত হওয়া শর্ত। মুমিনের ওপর নামাজ আদায় করা ফরজ হওয়ার জন্য আলস্নাহতায়ালা সময় হওয়াকে শর্ত করে বলেছেন : ‘নি:সন্দেহে নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।’ আলস্নামা আলুছি র: তার তাফসিরে রূহুল মা’আনিতে এ আয়াতের তাফসিরে লিখেছেন, ‘অর্থাৎ নামাজের সময় কখন শুরম্ন হবে এবং কখন শেষ হবে তা (সুনির্দিষ্টভাবে) সীমাবদ্ধ। স্বাভাবিকভাবে কোনো নামাজকে কোনো অবস্খাতেই এর নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে পড়া যাবে না।’ একই বিশেস্নষণ তাফসিরে খাজেন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০০-এ দিয়ে লিখা হয়েছে, ‘নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করা ফরজ। নামাজের সময়সমূহ কখন শুরম্ন ও শেষ হবে তা সুনির্দিষ্ট। কোনো নামাজ তার নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে পড়া কোনো অবস্খাতেই জায়েজ নেই।’ আলস্নামা আবদুর রহমান আল-জাজিরি আল-ফিকহ আলা আল-মাজাহিবিল আরবায়াহ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮০তে বলেন, হানাফি ফকিহদের অভিমত হলো, ‘নামাজের শর্তের মধ্যে একটা শর্ত হচ্ছে ‘সময় হওয়া’। এ জন্য সময় হওয়ার আগে নামাজ আদায় করা ফরজই হয় না।’ হেদায়াহ কিভাবে লিখা রয়েছে : ‘সময়ের প্রতি যত্নবান হওয়া ফরজ।’ মাওলানা এয়াকুব ইসমাইল কাসেমি তার বারতানিয়াহ মে ওয়াক্তে নামাজে এশা কে বারে মে তাহকিক, পৃষ্ঠা-৬২তে মুফতি ইসমাইল, মুফতি, দারম্নল উলুম, কান্থারিয়া, জিলা ভ্রম্নচ-এর যে ফতোওয়া উদ্ধৃত করেছেন, তাতে মুফতি লিখেছেন, ‘নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য নামাজের সময় নিশ্চিতভাবে শুরম্ন হওয়া শর্ত। শরিয়তে নির্ধারিত সময়ের পাবন্দি করা ফরজ। যদি সময় হওয়ার প্রশ্নে সন্দেহজনক অবস্খায় নামাজ পড়া হয় তবে সে নামাজ শুদ্ধ হবে না।’ অন্যান্য ইমাম বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামাজ আদায় করা ফরজ। ওলামায়ে কেরাম এসব ব্যাখ্যা-বিশেস্নষণের ভিত্তিতে বলেছেন, আলস্নাহতায়ালা তাঁর উলিস্নখিত ফরমান জারি করে নামাজের জন্য যে বিধান নির্ধারণ করেছেন তা হচ্ছে (১) নামাজ আদায় করা তার নির্ধারিত সময় হলে ফরজ হয় এবং (২) যথাসময়ে নামাজ আদায় করা ফরজ। তাই এটা পরিষ্কার যে, আলস্নাহতায়ালার এ নির্দেশের ভিত্তিতে নামাজ আদায় করা ফরজ হওয়ার জন্য সময়কে ‘কারণ’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই নামাজের সময় সঠিকভাবে অবগত হওয়া যেসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে সেসব বিষয় সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একটা মৌলিক প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আমাদের দু’টো বিষয় সঠিকভাবে জানতে হবে : (১) প্রত্যেক নামাজের সময় কখন শুরম্ন হয় এবং কখন শেষ হয় এবং (২) সময় কিভাবে জানা যায় এবং কী করে তা নির্ণয় করা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন