রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০০৮

আল-কুরআনের নেয়ামত লাভের উপায়

আল-কুরআনের নেয়ামত লাভের উপায়


মহান আল্লাহপাকের অগণিত সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমার ইবাদত করার জন্য’ (আল জারিয়াহ : ৫২)।মানুষকে ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হননি আল্লাহ। তাকে ইবাদতের ধরন-উপায় ইত্যাদি জানাতে গিয়ে আদেশ-নিষেধ, জীবন চলার পূর্ণাঙ্গ বিধান, শেষ বিচারের মাধ্যমে চিরস্খায়ী সুখ-দু:খের অবস্খান­ সব কিছুই জানিয়ে দিয়েছেন পবিত্র কালাম আল-কুরআনের মাধ্যমে। এই কুরআনেই রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য অফুরন্ত নেয়ামত আর রহমতের বিশাল ভাণ্ডার। আল-কুরআন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমরা এ কিতাব তোমার প্রতি নাজিল করেছি যেন তুমি মানবজাতির সামনে সে শিক্ষা ধারার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে থাকো যা তাদের (কল্যাণের) জন্য নাজিল করা হয়েছে। এবং লোকেরা যেন চিন্তা-গবেষণা করে’ (আন্ নাহল : ৪৪)।কিভাবে কুরআনের নেয়ামত লাভ করবে : মানবজাতির জন্য কুরআনে রয়েছে অফুরন্ত নেয়ামত, রহমত। মানুষ কুরআন থেকে এসব লাভ করতে পারবে। তবে মন চাইলেই তা হাসিল করা যাবে না। কুরআন থেকে কিছু হাসিল করতে হলে মানুষকে অর্থাৎ মুসলমানদের কুরআনের নির্দেশিত চরিত্রে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। কুরআনেই আছে সে কথা, ‘নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয় এবং পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অত:পর নামাজ আদায় করে’ (সূরা আল আ’লা : ১৪-১৫)।
কুরআনে আরো বলা হয়েছে, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিয়ো না এবং জানা সত্ত্বেও সত্যকে তোমরা গোপন কোরো না। আর নামাজ কায়েম করো জাকাত দান করো… (বাকারাহ : ৪২)।
এভাবে কুরআন তার থেকে নেয়ামত গ্রহণের জন্য মানুষের চরিত্রের ধারা বদলে দিয়েছে। সঠিক কুরআনিক চরিত্রের অন্যতম প্রধান কাজ হলো নামাজ আদায় করা। নামাজ আদায়ের ধরনও কুরআন বলে দিয়েছে, ‘নিশ্চয় কল্যাণ লাভ করেছে মুমিনরা, যারা নিজেদের নামাজে ভয়মিশ্রিত বিনয় অবলম্বন করে’ (সূরা আল মুমেনিন : ১-২)।
নামাজে এ বিনয়ের মূল শব্দ কুরআনে এসেছে ‘খুশু’। খুশু শব্দের আসল অর্থ কারো সামনে মনের সাথে শারীরিক এমন বিনয়, কাতরতা­ যা সেই ব্যক্তির দিক থেকে একাগ্রতা প্রকাশ করা। একাগ্রতায় সামন্যতমও বিচ্যুতি থাকবে না। এমন নামাজের বাস্তব উদাহরণ যুগে যুগে সাহাবায়ে কেরাম, বুজুুর্গানে দীন, আলেম-ওলামারা দেখিয়েছেন। তেমনি একটি উদাহরণ­ হজরত আলী রা:-এর পায়ে একবার শত্রুর তীর বিঁধে। সে তীরের প্রচণ্ড ব্যথায় তা কেউ খুলতে পারছিল না। এমন ব্যথা যে তীরটি খোলা দূরে থাক, ধরাই অসম্ভব। তখন রাসূল সা: সাহাবীদের বললেন, আলী নামাজে দাঁড়ালে তোমরা তা খুলো। একসময় আলী রা: নামাজে দাঁড়ালেন। সব সময়ের মতোই নামাজ পড়তে লাগলেন। নামাজ পড়া অবস্খায় লোকজন তীরটি টেনে খুলে ফেলল অথচ তিনি একটুও টের পাননি। শুধু নামাজই নয়, সব হুকুম-আহকাম মেনে চলা, কুরআনে বর্ণিত মুমিনের চরিত্র অর্জন করার মাধ্যমেই কুরআন থেকে ফল লাভ করার অন্যতম শর্ত।
আমরা যা করি না অর্থাৎ কুরআনের আলোকে চরিত্র গঠন করে মুমিন হই না অথচ সেই কুরআন থেকে ফল লাভ করতে চাই। আল্লাহর কাছে যা রাগের কাজ তা করলে কি আল্লাহ খুশি হবেন? শুধু নিজেদের স্বার্থের জন্য কুরআনের কিছু আমল করলেই কি আল্লাহ খুশি হবেন? এমন ধারণা করা মস্ত ভুল আর বিভ্রান্তিকর।
কুরআন থেকে নেয়ামতপ্রাপ্তি ও আমরা : আজকাল অনেকেই বলেন যে, কুরআন থেকে বিভিন্ন আমল করি, নফল ইবাদতে মশগুল থাকি, তার পরও কোনো ফল পাই না কেন? অতি সত্যি কথা। পবিত্র কুরআনে কুরআনীয় চরিত্র গঠন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের কথা বলা হয়েছে­ আমরা কেউ তার ধারেকাছে আছি কি না। আসলে অমন চরিত্র গঠনে আমরা ব্যর্থ বলেই আজ কুরআনের ফল হাসিল হচ্ছে না। আমরা নিজেরাই এ জন্য দায়ী।নবী করিম সা: এবং সাহাবায়ে কেরামরা তাঁদের জীবনকে কুরআনের নির্দেশিত পথে চালিত করেছিলেন। পরে অনেক ব্যক্তি তেমন কার্যক্রমে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন বলেই তারা কুরআন থেকে নেয়ামত লাভে সমর্থ হয়েছেন। আমরা যদি অমন চরিত্র অর্জন করতে না পারি তবে কি কুরআনচর্চা ছেড়ে দেবো? না, কথাটা মোটেই তা নয়। কুরআন সবার জন্য। সবাই এর থেকে নেয়ামত লাভের অধিকার রাখেন। এ জন্য প্রয়োজন শুধু আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন। কুরআনের দিকে ফিরে আসার মতো নিজেকে তৈরি করার ইচ্ছা আর উদ্যম। সবসময় মনের অবস্খা এমন রাখতে হবে যে, আমি কুরআনের মতো চলতে চাই। আর আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে হবে গুনাহ মাফের জন্য, কুরআনের পথে চলার মতো তৌফিক দানের জন্য, আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য। এ ছাড়া নিয়মিত একাগ্রচিত্তে নফল ইবাদত করা, সৎ পথে চলার মতো ইচ্ছা আর উদ্যম থাকতে হবে। কখনো কোনো মানুষের ক্ষতি হয় এমন কুচিন্তা, কূটকৌশল, কুমতলব মনের মধ্যে পোষণ করা যাবে না। কুরআনচর্চা, কুরআনের বিভিন্ন আমল নিয়মিত করে যেতে হবে, আল্লাহর স্মরণে দোয়া-দরুদ চর্চায় থাকতে হবে। তবেই হয়তো আল্লাহ আমাদের অক্ষমতাজনিত চারিত্রিক ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে তার রহমত- বরকত দান করতে পারেন। আর এভাবেই হয়তো কুরআনের নেয়ামতপ্রাপ্তির সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। আল্লাহও তাঁর অফুরন্ত ভাণ্ডার থেকে আমাদের দান করতে কার্পণ্য করবেন না নিশ্চয়।

কোন মন্তব্য নেই: