সুন্দর ব্যবহার অমূল্য সম্পদ
সুন্দর ব্যবহার প্রকান্তরে ইহসান মানব চরিত্রের অমূল্য সম্পদ। কারণ এই ইহসান মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদা দান করে। কাজেই বলার অপেক্ষা রাখে না আমাদের ব্যক্তিগত সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে এর গুরুত্ব কত অপরিসীম। যে মানুষটি তার মিষ্টি ব্যবহার দ্বারা মানুষের মন জয় করে থাকেন আল্লাহতায়ালাও তার ওপর খুবই সন্তুষ্ট হন। কেননা মানবকে সেবা বা তুষ্ট করাই হচ্ছে আল্লাহর প্রিয় বান্দার কাতারে নিজেকে সামিল করা। কুরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ইহসান করো। কেননা আল্লাহতায়ালা ইহসানকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা বাকারাঃ ১৯৫)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা ইহসানকারীদের সাথে আছেন।’ (আনকাবুতঃ ৬৯)।
ইহসান মূলত আরবি শব্দ। ইসলামের পরিভাষায় ইহসান হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে উত্তমরূপে ইবাদত করা এবং তার সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা। ইহসান হচ্ছে যেকোনো কাজ ভালোভাবে সুচারুরূপে সম্পন্ন করা। যেকোনো কাজের বিভিন্ন পর্যায় বা ধরন থাকে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজটি সারাকে ওই কাজের প্রথম পর্যায় বলে। দ্বিতীয় ধরন বা পর্যায় হচ্ছে কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করা। অর্থাৎ ছুরিতে শান দিয়ে কাজটির নিখুঁত ফিনিশিং টানা।
প্রথম কাজটি করা হলো তাকওয়া বা খোদাভীতির কারণে। একে নেহায়েত আনুগত্যের পর্যায়ে ফেলা যেতে পারে। দ্বিতীয়টির ধরন হচ্ছে ইহসান। এর জন্য নিষ্ঠা, শ্রম ও গভীর ভালোবাসার প্রয়োজন হয়। এ ধরনের কাজ যারা করেন তারা কখনো আত্মপূজারী-স্বার্থবাদী, স্বার্থান্ধ ও পরশ্রীকাতরতার প্রশ্রয় দেন না।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পিতার মৃত্যুর পর সামাজিকভাবে দু’ভাই সমান অবস্থানে উঠল না। একজন লেখাপড়া শিখে বড় চাকরি ধরে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছেন। অন্যজন অশিক্ষিত হওয়ার কারণে অভাব-অনটনে কালাতিপাত করছেন। এমতাবস্থায় যদি বড় ভাই তার পৈত্রিক সম্পত্তি ছোট ভাইকে দিয়ে দেন এবং তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন, বড় ভাইয়ের এই মহতী উদ্যোগের কারণে তাকে ‘মুহসিন’ ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে।
প্রতিটি মুহসিন ব্যক্তি মুমিন কিন্তু প্রতিটি মুমিন ব্যক্তি মুহসিন নন। যেমনঃ একজন মুমিন মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহতায়ালার মর্জি মোতাবেক করেন। এর ভেতর কোনো দুর্বলতা বা আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু মুহসিন ব্যক্তির কাজ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার কাজে ও কথায় বিশেষ বিশেষত্ব পরিলক্ষিত হয়। মুহসিন ব্যক্তি মুমিন ও মুসলিমের ন্যায় জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহতায়ালার মর্জি মোতাবেক পালন তো করেনই। উপরন্তু তার প্রতিটি কাজের সৌন্দর্য ও সুচারুতা থাকবে। মুহসিন তিরস্কার, ব্যঙ্গোক্তি, অবজ্ঞা, দাম্ভিকতা, স্বার্থ, অহঙ্কার, কটূক্তি, কুৎসা রচনা করা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, তুচ্ছজ্ঞান করতে পারেন না।
তিনি কখনো দুরাচার-দুবৃêত্ত-পাপিষ্ট, কদাচার, দুর্বচন, দুর্বাক, দুরুক্তি, দুর্মুখ, দূরভিসন্ধি, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, দুর্বুদ্ধি, দুর্বøবহার, দুশ্চরিত্র ও দুষ্কর্ম ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন না।
এ ধরনের ব্যক্তিত্বের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো এরা শিরকমুক্ত জীবনযাপন করেন। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা আমলে সালেহ দ্বারা নিজেকে সুশোভিত করেন। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা আপসহীন ও সৎসাহসী ব্যক্তিত্বে পরিগণিত হবেন। আল্লাহর কাজে লজ্জা, ভয়, সঙ্কোচ কোনো কিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারে না। শত্রুর শকুনচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি অকুতোভয়ে বলবেন ‘আমি মুসলমান।’
রেহানা ফারুক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন