রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০০৮

ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব

ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব


পবিত্র ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব অনেক। হাদিস শরিফে রয়েছে- ‘হুব্বুল অতনে মিনাল ইমান’ অর্থাৎ মাতৃভূমিকে ভালোবাসা বা দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। ভাষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘আররাহমান আল্লামাল কোরআন, খালাকাল ইনছান, আল্লামাহুল বায়ান’ অর্থাৎ করুণাময় আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাকে শিখিয়েছেন ভাষা-বর্ণনা। পবিত্র কোরআনে মাতৃভাষার আরও গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে ইরশাদ হচ্ছে- ‘আমি সব পয়গাম্বরকে তাদের স্বজাতীয় ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি। যাতে তাদের পরিüকারভাবে বুঝতে পারে’। দেখা যায় আল্লাহতায়ালা মানুষের হেদায়েতের জন্য অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। যে গোত্রে যে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন ওই গোত্রের যে ভাষা প্রচলন ছিল ঠিক সেই ভাষাভাষী করেই নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। চারটি বড় আসমানি কিতাব- তাওরাত, যাবুর, ইনজিল, কোরআন। শুধু পবিত্র কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল হয়। সব নবী-রাসূলের ভাষা আরবি ছিল না। এর কারণ জানা যায়, যাতে দীনের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছানো সহজ হয় এবং উমôতদের জন্য বুঝতে কঠিন না হয়। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহামôদকে (সা·) জìô হওয়ার পর দুধ মা হালিমার কাছে দেয়া হল এ জন্য যে, যাতে করে ছোটবেলা থেকেই মূল ভাষা শিখতে সক্ষম হয়। আর হালিমার বাসস্খান ছিল গ্রামে। শহরে এ জন্য দেয়া হয়নি, শহরের মধ্যে বিভিন্ন ভাষার মানুষ বাস করে, প্রকৃত ভাষা শিখতে কঠিন হয়ে পড়ে।হুজুরকে (সা·) যখনই মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে হল, সেদিন তাঁর মন জìôভূমি ছেড়ে যেতে চাইছিল না। মাতৃভূমির মায়ায় বারবার ফিরে তাকান। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার শুধু জìôগত নয়, বরং মাতৃভাষা খোদার প্রদত্ত একটি বিশেষ নেয়ামত ও নিজস্ব মৌলিক অধিকার। এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আল্লাহ কাউকে দেননি। আমাদের বাংলা ভাষার রয়েছে একটি নিজস্ব ইতিহাস। এই বাংলা ভাষাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল অনেকে। কিন্তু পারেনি। বাংলা ভাষার জìô হয়েছে বহু আগে। ইতিহাসের পাতার দিকে একটু তাকাই। এক সময় বর্ণবাদী সেন বংশীয়রা বাংলাভাষী পাল বংশীয়দের কাছ থেকে এদেশ দখল করে নিয়ে আমাদের বাংলা ভাষাকে নির্মূল করে দিতে উদ্যত হয়ে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয় সংস্কৃত ভাষা। তারা বাংলা ভাষাকে কোন মর্যাদাই দেয়নি। এ ভাষাভাষী লোকদের কুৎসা, বিদন্সুপ ও গালাগাল করত। বন্সাহ্মণ্যবাদী বৈষম্য আর নির্যাতনে যখন নিüেপষিত হচ্ছিল বাঙালি জাতি, তখন গর্জে ওঠেন ইখতিয়ার উদ্দিন মোহামôদ বিন বখতিয়ার খিলজি। তিনি বাংলা জয় করে বাংলা ভাষাকে সবার ওপরে তুলে ধরেন। এরপর পলাশীতে নবাব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ইংরেজরা ভারত উপমহাদেশের রাজত্ব দখল করে নেয়। দীর্ঘ দুইশ’ বছর ইংরেজরা এদেশ শাসনের নামে শোষণ করেছিল। তাদের নির্যাতন ও অত্যাচারের যাঁতাকলে নিüেপষিত হচ্ছিল বাংলা ভাষার মানুষ। সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৪৭ সালে এদেশ থেকে ইংরেজরা যেতে বাধ্য হয়। এরপর ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারে অখণ্ড ভারত খণ্ডিত হয়ে পাকিস্তান অর্জিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যদিও ভৌগোলিক ও ভাষাগত দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক তফাৎ বিদ্যমান ছিল, এরপরও একটি রাষ্টেন্স রূপান্তরিত হল। পশ্চিমারাই দুটি প্রদেশের রাষ্টন্সক্ষমতায় ছিল। পশ্চিমারা পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন নিপীড়ন করতে শুরু করল। সরকারি বা ভালো পদ পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের দেয়া হতো না। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর চরিত্রের মধ্যে নানা রূপ দেখা গেল। তারা দিচ্ছিল না বাঁচার অধিকার, দিচ্ছিল না ভাষার অধিকার। ওরা আমাদের ভাষার ওপর আক্রমণ করে বসল। তারা ঘোষণা করল, পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অঞ্চলের রাষ্টন্সভাষা হবে একমাত্র উর্দু। তখন পূর্ব পাকিস্তানের লোকজনের রক্তের কণিকাগুলো জেগে উঠল। খোদা প্রদত্ত ভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্য সংগ্রামে নেমেছিল সেদিন বাংলার দামাল ছেলেরা। এতে শহীদ হয় সালাম, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকে। যাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে বলতে হয়, যে ভাষার রয়েছে এত সুন্দর ইতিহাস, অতীত ও ঐতিহ্য সেই ভাষায় কথা বলা হলে লোকেরা মনে করে বোকা। বিজাতীয় ভাষায় বললে মনে করা হয় সে শিক্ষিত। আমরাই আমাদের ভাষার কদর দিতে জানি না। কোর্ট-কাচারিতে প্রচলিত অনেক ভাষাই বিজাতীয় ভাষা। আমাদের দেশের নেতা-নেত্রীরা যখন মঞ্চে ওঠেন তখন দেশপ্রেমের কথা বলতে বলতে মুখ শুকিয়ে যায়। কিন্তু তাদের বাসায় বাংলাদেশের কোন জিনিসপত্র পাওয়া যাবে না। সম্পূর্ণ বিদেশী জিনিসপত্র। তাদের সন্তানদেরও তারা বাংলাদেশে পড়ান না। তারাই আবার ভাষার প্রতি এত দরদ দেখান। প্রবাদে আছে- মাছের মায়ের পুত্রশোক। তারাই আবার বলেন দেশী পণ্য, কিনে হও ধন্য। আসলে আমাদের মূলত দেশপ্রেম নেই। আছে শুধু প্রতিহিংসা আর গদির টেনশন। যারা এই দেশের জন্য জীবন দিয়েছে তাদের আত্মা কি বলে আমরা একটু কি চিন্তা করি? কেন তারা বাংলা ভাষার জন্য যুদ্ধ করল? এ নিয়ে আমাদের চিন্তা করা দরকার। আমার জানামতে বহু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা রিকশা চালাচ্ছে। বহু মুক্তিযোদ্ধা রোগযন্ত্রণায় ছটফট করছে। ওষুধ কেনার মতো পয়সা নেই। অর্থাভাবে তাদের মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছে না। অনেক মুক্তিযোদ্ধার কথা আমি পত্রিকায়ও লিখে প্রকাশ করেছি। পরিশেষে বলব- যাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা পেলাম, একটি স্বাধীন দেশ পেলাম, তাদের ভুলে গেলে চলবে না। যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের বেহেশত নসিব করেন

1 টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

it is good