শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০০৮

রাসূল (সা·)কে অনুসরণের সু-সংবাদ


রাসূল (সা·)কে অনুসরণের সু-সংবাদ



পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,“ আলস্নাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তির প্রত্যাশীদের জন্য রাসূলুলস্নাহর মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ” (সূরা আহযাব-২১আয়াত)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, “ যদি তোমরা রাসুলকে অনুসরণ কর তবেই তোমরা সত্যপথের সন্ধান পাবে” (সূরা নূর-৫৪ আয়াত)। আলস্নাহ বলেন, “আর তিনি (রাসূল সা·) নিজের থেকে মনগড়া-খেয়াল খুশিমত কোন কথা বলেন না। তাঁর কথা নিরেট ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রেরিত হয়” (সূরা আন নজম ৩ ও৪ আয়াত)। রাসূল (সা·) কে অনুসরণের ব্যাপারে কোরআনে নির্দেশের বর্ণনাঃ (১)“তোমরা আনুগত্য কর আলস্নাহর এবং অনুগত হও রাসূলের” (সূরা আল ইমরান ৩২ আয়াত)। (২) “ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আনুগত্য কর আলস্নাহ এবং আনুগত্য কর রাসূলের”(সূরা আননিসা-৫৯ আয়াত)। (৩)“আর তোমরা আলস্নাহর আনুগত্য কর আর রাসূলের আনুগত্য কর এবং সতর্ক হও” (সূরা আল মায়েদা-৯২ আয়াত)। সুসংবাদের ঘোষণাঃ(১)“ আর যে কেউ আলস্নাহর আনুগত্য করে এবং রাসূলের অনুসরণ করে, সে তো অবশ্যই মহাসাফল্য লাভ করবে” (সূরা আহযাব ৭১ আয়াত)। (২) “আর যে কেউ আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত্য করবে, তিনি তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হয়, তাঁর সেখানে চিরকাল থাকবে, এ হল মহাসাফল্য” (সূরা নিসা ১৩ আয়াত)। (৩) “আপনি বলে দিন, যদি তোমরা প্রকৃতই আলস্নার প্রতি ভালবাসা পোষণ কর, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আলস্নাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনা মাফ করে দেবেন” (সূরা আল ইমরান ৩১ আয়াত)। হুঁশিয়ারীমূলক আয়াতঃ (১) “আর যে কেউ আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হবে এবং নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে, তিনি তাকে দোজখে দাখিল করবেন, সেখানে সে চিরকাল থাকবে” (সূরা নিসা ১৪ আয়াত)। (২) “কোন মু’মিন পুরম্নষ কিংবা মু’মিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, আলস্নাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোন কাজের নির্দেশ দেন, তখন সে কাজে তাদের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্তেôর অধিকার থাকবে। কেউ আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সেতো প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়” (সূরা আহযাব ৩৬ আয়াত)। (৩) “অতএব যারা তাঁর (রাসূলের ) আদেশের বিরোধিতা করছে, তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের ওপর বিপর্যয় আপতিত হবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক আজাব তাদেরকে গ্রাস করবে” (সুরা নূর ৬৩ আয়াত)। কোরআনের উক্ত বর্ণনাগুলোর প্রতি মুসলিম সমাজের নতুন করে নজর দেয়া প্রয়োজন, প্রয়োজন এ বিষয়ের উপলব্ধিকে শানিত করা, রাসূল (সা·) কে পুরোপুরি অনুসরণ করা।
আলস্নাহর হুকুমের পাশাপাশি রাসূলের (সা·) তরীকার অনুসরণ না করলে যে প্রকারান্তôরে রাসূল (সা·)কে অস্বীকার করা হয়, করা হয় অমান্য, করা হয় রাসূল (সা·) এর বিরোধিতা এই বিষয়টি উম্মত-দরদী রাসূল (সা·) উম্মতদের বুঝার, জানার আর উপলব্ধির জন্য আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁর মুখ নিঃসৃত বাণীতে। বুখারী শরীফে বর্ণিত হাদীস হচ্ছে, “আমার উম্মতের সকল লেকই জান্নাতী হবে, অস্বীকারকারী ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হল, হে রাসূল (সা·)! কে অস্বীকাকারী? উত্তরে তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করল, সে-ই বেহেশতে প্রবেশ করবে আর যে ব্যক্তি অনুসরণ করলনা, সে-ই অস্বীকারকারী।” বলার অপেড়্গা রাখে না যে, রাসূলের (সা·) বাধ্যতা স্বীকার করার অর্থ তাঁর আদর্শ গ্রহণ, পালন ও রাড়্গা করা, বিলয় হতে না দেয়া আর এজন্য প্রয়োজনে অর্থ সম্পদ ব্যয়সহ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা, ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকা। বিশ্বমানবতার জন্য বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য রাসূল (সা·) এক সর্বোত্তম আদর্শ ও রহমত স্বরূপ। তাঁর ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় জীবন যেমন আমাদের জন্য আদর্শ, তেমনি তাঁর পারিবারিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক, সৈনিক তথা সংগ্রামী জীবনও আমাদের জন্য আদর্শ।
বর্তমান আমরা তাঁর সমগ্র আদর্শকে গ্রহণ না করে নিজেদের সুযোগ-সুবিধে, প্রয়োজন আর মর্জি মাফিক তাঁর আংশিক আদর্শকে মেনে চলছি। সহজ-সরল সুন্নাতের আংশিক অনুসরণ করে, কঠিন সুন্নগুলো বাদ দিয়ে রাসূলের (সা·) খাঁটি উম্মতের দাবিদার সেজে তাঁর শাফায়াতের আশায় বসে আছি আর কল্পনার রথে জান্নএত পাড়ি জমাচ্ছি। অথচ আলস্নাহর ঘোষণা হচ্ছে, “তাদের মধ্যে এমন অনেক আছে যারা মূর্খ ও নিরড়্গর। তারা মিথ্যা আকাঙড়্গা ছাড়া আলস্নাহর কিতাবের (কোরআন ও হাদীসের) কিছুই জানে না, তারা বাজে কল্পনার মধ্যে ডুবে আছে” (সূরা বাকারা ৭৮ আয়াত)। ধর্মের কিছু আদেশ-নিষেধ মেনে ও কিছু বর্জন-অমান্য করে আর রাসূল (সা·) কে কিছিু অনুুসরণ করে এবং রাসূল (সা·)-এর কিছু সুন্নাতকে অমান্য করে অথবা কিছু সুন্নাতের ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করে কি আলস্নাহর সন্তুষ্টি, দুনিয়ার শান্তিô ও আখিরাতের মুক্তি পাওয়া যাবে? না, কখনো না। কারণ আলস্নাহর ঘোষণা হচ্ছে, “তবে কি তোমরা কিতাবের (রাসূল সা· এর হাদিসের/সুন্নাতেরও) কিয়দংশ বিশ্বাস কর-মান্য কর আর কিছু অংশ অবিশ্বাস-অমান্য কর? যারা এরূপ করবে পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোন পথ নেই আর কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠোরতম শাস্তিôর দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আলস্নাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্ক বেখবর নন” (সূরা বাকারা ৮৫ আয়াত)।
কাজেই আসুন, বক্তৃতা, বিবৃতি আর কথাবার্তায় রাসূল (সা·) প্রেমিক না সেজে আলস্নাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে দুনিয়ার সুখশান্তিô ও সমৃদ্ধির আর পরকালীন মুক্তির লড়্গ্যে কোরআনে বর্ণিত বিধি বিধানের পাশাপাশি রাসূলের (সা·) ওসওয়াতুন হাসানার-সর্বোত্তম আদর্শের তথা সমগ্র সুন্নাতের অনুসরণ-অনুকরণে সচেষ্ট হই। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও অধীনস্থদেরকেও এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করি।

কোন মন্তব্য নেই: