বিজ্ঞানময় কুরআন
আমরা কুরআনকে ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই জানি। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে কুরআন কি শুধুই ধর্মগ্রন্থ? না, এই পবিত্র গ্রন্থের মধ্যে লুকায়িত আছে বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন মানুষের কল্যাণে। ফুল-ফলের ভেতর মধু থাকে যা কেউ দেখে না, কিন্তু মধুমক্ষিকা তা আহরণ করে উপহার দেয় মানুষকে মধুরূপে, যেটা হয়ে যায় ওষুধ। রোগের প্রতিকারক। পবিত্র কুরআনের ১৬ নম্বর সূরাটি হলো নাহল বা ÷ঞভপ দপপ’ এই সূরাটির ৬৮-৬৯ আয়াতে বর্ণিত ঘটনার ইঙ্গিত বহন করে। এখানে বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ মধুমক্ষিকাকে আদেশ দিলেন, পর্বতগাত্রে বৃক্ষে এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরি করতে, ফল ভক্ষণ করতে, উন্মুক্ত পথে চলমান হতে, পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানি (মধু) বের করতে যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার। এই আয়াতে আরো বলা হয়েছে, এটা চিন্তশীলদের জন্য নিদর্শন। কুরআনই বিজ্ঞান বিষয়টি চিন্তার ও গবেষণার। কুরআন এসেছে ১ হাজার ৪২৮ বছর আগে আর বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার বিমান সৃষ্টি মাত্র ১৭ ডিসেম্বর ১৯০৩। কুরআন বলে, ‘তারা কি সেই পাখাগুলি দেখে নাই? যাহারা শূন্যমার্গে বশীভূত থাকে আল্লাহ ছাড়া কেহই তাহাদিগকে থামাইতে পারে না। নিশ্চয় এতে বিশ্ববাসীর জন্য নির্দেশাবলি রয়েছে।’ (১৬ঃ ৭৯)। কুরআন আরো বলে, ‘আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যত প্রকার পাখি দু’ডানাযোগে উড়ে বেড়ায় তারা সবাই তোমাদের মতোই একেকটি শ্রেণী, আমি কোনো কিছু লিখতে ছাড়িনি, অতঃপর সবই স্বীয় প্রতিপালকের কাছে সমবেত হবে।’ (৬ঃ৩৮)। ‘তারা কি লক্ষ করে না তাদের মাথার ওপর উড়ন্ত পক্ষীকুলের প্রতি পাখা বিস্তারকারী ও সঙ্কোচনকারী? রহমান আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন, তিনি সর্ব বিষয় দেখেন।’ (৬৭ঃ১৯)। এটাই ছিল সূত্র। জার্মান ইঞ্জিনিয়ার অটো লিলিয়েন থাল চিন্তা ও গবেষণা করলেন ব্যাপারটি নিয়ে। কিভাবে আকাশে ওড়া যায় উড়ন্ত যান নিয়ে, তার প্রচেষ্টায় যান আকাশে উড়লেও নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হতো। একই সূত্র ধরে প্রচেষ্টা চালালেন দুই ভাই অরভিল রাইট ও উইলবার রাইট। আমেরিকার ইন্ডিয়ানা প্রদেশের অধিবাসী ছিলেন তারা। তারা সফল হলেন বিমান আবিষ্কার করতে ১৯০৩ এর ১৭ ডিসেম্বর। বিজ্ঞান কী? মানুষ কি কিছু সৃষ্টি করতে পারে? মানুষ পারে শুধু সৃষ্টি কর্তার প্রদত্ত উপকরণগুলো কাজে লাগিয়ে নতুন একটা কিছু আবিষ্কার করতে। আজকের আবিষ্কার রেডিও, টেলিভিশন বা মোবাইল ফোন। এগুলো হলো লোহা, তামা, দস্তা, সিসা বা র্যাং ইত্যাদির সংমিশ্রণে তৈরি একটা যন্ত্র, যার উপাদানগুলো সৃষ্টিকর্তার দেয়া। আর তাঁরই দেয়া বায়ু যার ইঙ্গিত হয়েছে কুরআনেই। তাঁর নির্দেশাবলির মধ্যে একটা এই যে, তিনি সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন। যাতে তিনি তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের আস্বাদন করান এবং যাতে তার নির্দেশে জাহাজগুলো বিচরণ করে এবং যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ তালাশ করো এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (৩০ঃ৪৬)। মধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব বিজ্ঞানের বিশেষ অবদান হিসেবে অভিহিত। এই তত্ত্বের উৎঘাটনকারী স্যার আইজ্যাক নিউটন। কলেজের ছুটির অবকাশে মায়ের কাছে গিয়েছেন। নিউটন দিনের বেশির ভাগ সময়ই বাগানের মধ্যে বসে থাকেন। প্রাণভরে উপভোগ করেন প্রকৃতর রূপ-রস-গন্ধ। এক দিন হঠাৎ সামনে খসে পড়ল একটি আপেল। মুহূর্তে তার মনের কোণে উঁকি মারে এক জিজ্ঞাসা কেন আপেলটা আকাশে না উঠে মাটিতে এস পড়ল? এই জিজ্ঞাসাটাই মানুষের চিন্তার জগতে এক যুগান্তর নিয়ে এলো। জন্ম নিলো মধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের ১৬৮৭ সালে। এ বিষয়ে স্যার আইজ্যাক নিউটনকে অনেক প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি জবাবে বলেছিলেন, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বপ্রকৃতি এমন সুশৃঙ্খল সু-সামঞ্জস্যভাবে সৃষ্টি হয়েছে। তাতে মনে হয় এর পশ্চাতে কোনো ঐশ্বরিক স্রষ্টা রয়েছেন। (বিশ্বের ১০০ মনীষীর জীবনী মাইকেল এইচ, হাট, সম্পাদনায় এস এম শুভ্রত পৃঃ ৯৪)। ধন্যবাদ জানাই স্যার আইজ্যাক নিউটনকে। তিনি স্রষ্টার সৃষ্টির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। স্রষ্টা এ ব্যাপারে কী বলে দেখা যাক। সূরা মুরসালাত, আয়াত ২৫ ‘আমি কি পৃথিবীকে সৃষ্টি করিনি ধারণকারিণীরূপে? পৃথিবী সব কিছুই তার কেন্দ্রের দিকে টানে Draw together or Receptacle। এটাই হলো মাধ্যকর্ষণ তত্ত্ব, যার ইঙ্গিত রয়েছে কুরআনে।
পৃথিবীর আজকের বিস্ময় ক্লোন। মানুষ থেকে মানুষের সৃষ্টি। তাহলে কি কুরআনের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলল। (নাউজুুবিল্লাহি মিন জালিক)। না তা হতে পারে না। মানুষ থেকে মানুষের সৃষ্টি এটা অসম্ভব নয়। পৃথিবীর দ্বিতীয় মানুষটি (আদমের স্ত্রী হাওয়া) আদম (আঃ) থেকে সৃষ্ট হয়েছিল। এটা তো কুরআনই সাক্ষ্য দেয়। কাজেই এই হেন সৃষ্টি কুরআনের ওপর বিশ্বাস আরো সুদৃঢ় করে। এর ওপর কয়েকটি আয়াত আছে। “আল্লাহই তোমাদিগকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন আর উহা হতেই তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন যেন তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে। স্ত্রীর সাথে অবস্থান করল, স্ত্রী হালকা গর্ভধারণ করল এবং চলাফেরা করল। যখন গর্ভ ভারী হয় তখন উভয়েই প্রভুকে ডেকে বলল যে, ‘প্রভু আমাদিগকে সুসন্তান দিলে আমরা শোকর আদায় করিব।’ (৭ঃ১৮৯)।” কুরআনকে যদি শুধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবে দেখা হয় তবে এই পবিত্র গ্রন্থের সব দিক হদয়ঙ্গম করা হবে না বরং সেগুলো অদৃষ্টে থেকে যাবে। কুরআন খুবই ব্যাপক। কুরআন বলে, ‘আল্লাহ কুরআনে মানুষকে বিভিন্ন উপকার দ্বারা সব রকম বিষয়বস্তু বুঝিয়েছেন (১৭ঃ৮৯)। বিজ্ঞানের উৎস বুঝিয়েছে কুরআন, বিজ্ঞান বলতে পারে আজ ২০০৮ পর্যন্ত অত্র তত্ত্বটি ঠিক। আগামীকাল এটা সঠিক থাকবে তা বলা যায় না। বিজ্ঞান চির সত্য হতে পারে না, কুরআন চির সত্য। এর সত্যতা শেষ দিন পর্যন্ত টিকে থাকবে। যা কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে তা হলো কুরআন গবেষণার ফল। কিন্তু এই গবেষণা আমরা করলাম না, যারা করেছে তারা সফল হয়েছে। যে যে দৃষ্টি নিয়ে তাকাবে সে কুরআনে সেটাই পাবে।
মোঃ আব্দুল জব্বার
November 07, 2008
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন