লজ্জাবোধ ইসলামী প্রেরণার অংশ
লজ্জা মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ অলংকার। আল্লাহ প্রদত্ত এক অনন্য গুণ। এর উৎপত্তি ঈমান থেকে। এটি এমন গুণ যা মানুষকে সব ধরনের কদর্মতা, মলিনতা ও কলুষতা থেকে মুক্ত রাখে এবং ব্যক্তিকে পবিত্রতা, স্বচ্ছতা ও নির্মলতার চরিত্র বিকাশে বিকশিত করে তোলে।লজ্জার অর্থঃ মানসিক সংকোচন, নমনীয়তা, চারিত্রিক ভদ্রতা ও লাজুকতা। আল্লামা কিরমানী (র.) বলেছেন, ‘লজ্জা এমন একটি মানসিক শক্তি, যা ব্যক্তিকে আল্লাহর নিকট ও মানুষের নিকট ঘৃণিত কাজগুলো থেকে দুরে রাখে।’ আল্ল ঝড়েবক বিজ্ঞাপন আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রা.) বলেছেন, ‘মন্দ কাজে লিপ্ত হওয়ার আশংকায় আত্মা প্রদমিত থাকাকে লজ্জা বলে। নিন্দা ও সমালোচনার ভয়ে কোন দুষণীয় কাজ করতে মানুষের মধ্যে যে জড়ত্ববোধ তৈরি হয়, সেটাই হলো লজ্জা। যদি কেউ দৈহিক ও আত্মিক শক্তিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও যথাযথ স্হানে প্রয়োগ করে এবং পানাহারের চাহিদা ও আত্মিক কামনাসমুহ নিয়ন্ত্রণ এবং যথাস্হানে ব্যবহার করে, তবে তার মধ্যে লজ্জার বিকাশ ঘটতে পারে। লজ্জার উপকারিতা সুদুরপ্রসারী।
১. ঈমানের পুর্ণতার জন্য লজ্জার প্রয়োজনঃ কারণ ঈমান যেসব নেক কাজের দাবি করে, লজ্জা ওইগুলোর সহায়ক। রাসুল (সা.) বলেছেন, লজ্জা ঈমানের একটি শাখা। সুতরাং ঈমান থাকা না থাকার বিষয়টি লজ্জার ওপর নির্ভরশীল। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার লজ্জা নেই, তার ঈমান নেই।’
২. লজ্জা ও ঈমান একে অপরের পরিপুরকঃ রাসুল (সা.) বলেছেন, লজ্জা ও ঈমান পরস্পর অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যখন দুটির একটি চলে যায়, তখন অপরটিও চলে যায়। একদা রাসুল (সা.) এক আনসারী সাহাবীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পান, সে তার ভাইকে বেশি লজ্জাশীল না হওয়ার উপদেশ দিচ্ছিলেন, তখন রাসুল (সা.) বলেন, তাকে ছেড়ে দাও; কেননা লজ্জা হলো ঈমানের অংশ’ (আবু দাউদ)। সুতরাং দেখা যায়, লজ্জা ও ঈমানের সম্পর্ক গভীরভাবে বিদ্যমান।
৩. লজ্জা চরিত্রের ভুষণঃ লজ্জা মানুষকে যাবতীয় অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও নোংরামি থেকে বিরত রাখে। এ গুণ যার ভেতর আছে, সে কখনো অন্যায় ও অপমানসুচক কাজ এবং আল্লাহ ও তার রাসুলের নাফরমানি করতে পারে না। উম্মাহাতুল মুমেনীন হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন হে আয়েশা! লজ্জা যদি কারো ভুষণ হয়, তবে সে একজন সৎ লোক এবং অশ্লীলতা যদি কারো ভুষণ হয়, তবে সে একজন অসৎ লোক। রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, কোনো ব্যক্তির কোনো বিষয়ে যদি অশ্লীলতা থাকে, তবে তা তার সম্মান হানি করে, আর কারো কোনো বিষয়ে যদি লজ্জাশীলতা থাকে, তবে তা তাকে সুশোভিত করে।
৪. লজ্জা শুধু মানবীয় গুণই নয়; আল্লাহপাকও এ গুণে গুণান্বিতঃ রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রতিপালক লজ্জাশীল, পরম দয়ালু। বান্দা যখন তার দরবারে মোনাজাতে হাত উত্তোলন করে, তখন তিনি তা ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।
৫. লজ্জা জান্নাত-জাহান্নামের প্রবেশদ্বারঃ রাসুল (সা.) বলেছেন, লজ্জা ঈমানের একটি শাখা। ঈমান মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করায়। আর অশ্লীল কথাবার্তা দুশ্চরিত্রের একটি শাখা। আর দুশ্চরিত্র মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করায়। হাদিসে কুদসীতে আল্লাহপাক বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তিনটি বস্তু ব্যতীত অন্যসব কিছু সরাসরি স্বীয় হস্তে সৃষ্টি করেননি। তিনি যাবতীয় বস্তুকে বলেছেন-হও, তখন তা হয়ে গেছে। আল্লাহপাক আদম ও ফেরদাউসকে স্বহস্তে সৃষ্টি করলেন এবং তাকে (ফেরদাউসকে) বললেন, আমার ইজ্জত ও মর্যাদার কসম! তোমার মধ্যে কোনো কৃপণ আমার সান্নিধ্যে বাস করতে পারবে না। আর কোনো নির্লজ্জ ব্যক্তি তোমার সুগন্ধ পাবে না (দায়লামী)।
৬. লজ্জাহীন ব্যক্তির কাজের কোনো বিচার বিশ্লেষণ নেইঃ নির্লজ্জ ব্যক্তি মান-ইজ্জত, হালাল-হারাম, ভালো-মন্দ, উৎকৃষ্ট-নিকৃষ্ট, অনাচার-দুরাচার ও চক্ষুলজ্জা বলতে কোনো বাছবিচার নেই। লজ্জাহীন ব্যক্তি গর্বের ন্যায় নিকৃষ্ট কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। নির্লজ্জ ব্যক্তি উলঙ্গপনা, অশ্লীলতা, বেপর্দা, বেহায়াপনা, বেআদবী ও মানব চরিত্রের যত নিকৃষ্ট ও নোংরামি কাজ আছে সবই করতে পারে। হাদিসে এসেছে হজরত আবু মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেনঃ পুর্ববর্তী যখন তোমার লজ্জা না থাকে, তখন তুমি যা ইচ্ছে তা করতে পার (আবু দাউদ)। তাই লজ্জাহীনতা ও অশ্লীলতা বর্জনের উদ্দেশ্যে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ (সুরা নাহল-৯০)।
সুতরাং লজ্জার মতো শ্রেষ্ঠগুণের সমাহারে মানব চরিত্রকে বিকল্পিত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ঈমানকে পরিপুর্ণভাবে সজীব করে তোলা। ঈমানের পুর্ণ সজীবতা এলে লজ্জাহীনতা আস্তে আস্তে দুর হতে থাকবে এবং লজ্জানামীয় শ্রেষ্ঠ গুণটি অন্তরে স্হান পাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন