মহানবী সাঃ-এর চিকিৎসা বিধান
বিশ্বনবী মোস্তফা সাঃ কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। আর নবুওয়াতের পদ মর্যাদার জন্য এটা জরুরিও নয়। কিন্তু নবীজী ১৪০০ বছর আগে উম্মতের মানসিক ও দৈহিক রোগ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেসব মূল্যবান তথ্য প্রদান করে গেছেন, তা যুগে যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটা সুস্পষ্ট পথ পদর্শক। ‘তিব্বে নববী’ গ্রন্থটির আলোকে মহানবী সাঃ-এর চিকিৎসা বিধানের সামান্য কিছু তথ্য তুলে ধরা হলোঃ নবী করিম সাঃ নামাজকে আরোগ্যদানকারী হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার কথাটির বিশ্লেষণে যাওয়া যাক সুস্থ দেহ ও মনের জন্য একান্ত জরুরি বিষয় হচ্ছে ব্যায়াম। যা নামাজের মাধ্যমেই উত্তমভাবে পালন করা যায়। লক্ষ করুন, যদি আমরা শুদ্ধ নিয়মে নামাজ আদায় করি তাহলে আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গেরই মুভমেন্ট হয়। ফলে রক্তসঞ্চালনও সুন্দরভাবে চলতে থাকে। যেমন সেজদা অবস্থায় হাত, পা, পেট, পিঠ, কোমর, রান ও শরীরের সব অঙ্গের জোড়া টানটান অবস্থায় থাকে। এ সময় রক্ত মস্তিষ্ক পর্যন্ত সঞ্চালিত হয়। আর সেজদা অবস্থায় মহিলাদের বুক রানের সাথে মিশে থাকে। এতে তাদের অভ্যন্তরীণ রোগ ব্যাধির উপশম হয়। অর্থাৎ নামাজ আত্মিক উন্নতির পাশাপাশি দৈহিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাদিস শরিফে বিভিন্ন রোগ ও প্রতিষেধকেরও উল্লেখ আছে। যেমন নবীজী মেহেদিকে মাথাব্যথার প্রতিষেধক বলেছেন। তিনি এটাকে ফোঁড়া পাকায় এবং কাঁটা বিধলেও ব্যবহার করতেন। সূরা নাহলে মধুকে শেফাদানকারী ঘোষণা করা হয়েছে। আর নবীজীরও নির্দেশ, ‘যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন সকাল বেলায় মধু সেবন করবে তার কোনো কঠিন ব্যাধি হবে না।’ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ এটাই প্রমাণ করেছে, মধু অগণিত রোগের ওষুধ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন। তবে হ্যাঁ, মধু কোন রোগে কতটুকু ব্যবহার প্রয়োজন সে বিষয়ে গবেষণা করার দায়িত্ব চিকিৎসকদেরই। হাদিসে কালোজিরা ও সিনাকে সর্বরোগের ওষুধ বলা হয়েছে। সিনা মস্তিষ্ক পরিষ্কার, বেদনানাশক, কৃমিনাশক, মাথাব্যথানাশক, গিঁটবাত ও নিউমোনিয়া রোগে উপকারী। অপর দিকে কালোজিরা বিভিন্ন ঠাণ্ডাজাতীয় ব্যাধির ওষুধ ছাড়াও যকৃৎ, পাকস্থলী, মূত্রাশয়ের শক্তিবর্ধক। মহানবী সাঃ বলেছেন, ‘যখন রোগ যন্ত্রণা খুব কষ্টদায়ক হয় তখন এক চিমটি কালোজিরা, অতঃপর পানি ও মধু সেবন করবে।’ এ ছাড়াও ঘৃতকুমারী ত্বকের লাবণ্যতায়, যাইতুন নিউমোনিয়ায়, আগরকাঠ গলগণ্ডে, চিরতা ফোঁড়ার সমস্যায়, খেজুর ও বিহিদানা হৃদরোগে, যব পেট ব্যথায়, সুরমা দৃষ্টিশক্তিতে, বিলাতি ডুমুর অর্শ ও গেটে বাতে, ঠাণ্ডা পানি জ্বরে, লবণ হজম শক্তিতে ব্যবহারের নির্দেশ হাদিসে উল্লেখ আছে। হাদিস ও ইতিহাস বিশ্লেষকদের মতে নবীজীর প্রিয় খাবারের তালিকায় ছিল তরমুজ, মধু, লাউ, দুধ, যাইতুন, খেজুর, ভুনা গোশত, পাখির গোশত, মাছ আর তিনি অত্যধিক গরম ও বাসি খাবার এড়িয়ে চলতেন। তিন দুধ ও মাছ যেমন কখনো একসঙ্গে খেতেন না, তেমনি দু’টি গরম, দু’টি ঠাণ্ডা, নরম বা আঠালো জিনিসও একসাথে খেতেন না। নবীজী আমাদের ক্ষুধার সাথে সামঞ্জস্যশীল এবং পরিমিত আহারেরও পরামর্শ দিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন