শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০০৮

রাসূল সাঃ-এর পোশাক পরিচ্ছদ

রাসূল সাঃ-এর পোশাক পরিচ্ছদ


ইদ্রিস কান্দুলুভি রহঃ রাসূল সাঃ-এর পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল অত্যন্ত সাদাসিধে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাধারণ। পরহেজগার তথা খোদাভীতি আর দরিদ্রের মতোই ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবন। লুঙ্গি, জামা, চাদর, জুব্বা ও কম্বল ছিল হুজুর সাঃ-এর সাধারণ পোশাক। যার কোনটি ছিল আবার তালিযুক্ত। সাধারণত রাসূল সাঃ-এর পাশাক সাদা হলেও তিনি সবুজ রঙের পোশাক বেশি পছন্দ করতেন। রাসূল সাঃ-এর পোশাক কেমন ছিল। তিনি কোন ধরনের পোশাক দৈনন্দিন ব্যবহার করতেন এবং কী ধরনের পোশাক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ব্যবহার করেছেন তার বিবরণ সম্মানিত পাঠকবৃন্দের সামনে তুলে ধরা হলোঃ চাদরঃ রাসূল সাঃ-এর একটি ইয়ামানি চাদর ছিল, যাতে সবুজ ও লাল ধরনের রেখা ছিল। ইয়ামানি চাদর নামে এই প্রসিদ্ধ চাদরটি ছিল রাসূল সাঃ-এর কাছে অধিক পছন্দনীয়। তবে, রাসূল সাঃ প্রকৃত লাল রঙের জিনিস ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।

অর্থাৎ, শুধু লাল জাতীয় রঙের জিনিস ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। যদি লালের সাথ অন্য কোনো রঙের মিশ্রণ থাকে তাহলে তা ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা নেই। টুপিঃ রাসূল সাঃ এমন টুপি ব্যবহার করতেন যা মাথার সাথে আঁকড়ে লেগে থাকত। তিনি কখনো উঁচু ধরনের টুপি ব্যবহার করেননি। আবু আগারি রাঃ থেকে বর্ণিত, সাহাবায়ে কেরামের টুপিও মাথার সাথে আঁকড়ে লেগে থাকত। পাগড়িঃ রাসূল সাঃ পাগড়ির নিচে টুপিকে আবশ্যিকভাবে রাখতেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, ‘আমাদের মাঝে এবং মুশরিকদের মাঝে পার্থক্য হলো­ আমরা টুপির ওপর পাগড়ি বাঁধি।’ (আবু দাউদ) রাসূল সাঃ যখন পাগড়ি বাঁধতেন, তখন তাঁর প্রান্ত (পাগড়ির এক মাথা) দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে রেখে দিতেন। কখনো তা সুন্দরভাবে থুতনি বা জামির নিচে ভাঁজ করে রেখে দিতেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত, নবী করীম সাঃ বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বদর যুদ্ধে ও হুনাইন যুদ্ধে আমার সাহায্যার্থে এমন ফেরেশতাদের প্রেরণ করেছেন, যাদের সবাই ছিলেন পাগড়ি পরিহিত।’ যার ইঙ্গিত পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআনে এভাবে রয়েছে, ‘প্রভু চিহ্নিত ঘোড়ার ওপর ৫ হাজার ফেরেশতা তোমাদের সাহায্যে প্রেরণ করবেন।’ (সূরা আলে ইমরান, ১২৫)।

পায়জামাঃ হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসূল সাঃ দেখতে পেলেন মিনাবাজারে পায়জামা বিক্রি হচ্ছে। তা দেখে রাসূল সাঃ-এর কাছে পায়জামাটি খুবই পছন্দ হলো। অতঃপর, রাসূল সাঃ বললেন, লুঙ্গির চেয়ে এটা বেশি আবৃত করে। অবশেষে রাসূল সাঃ তা ক্রয় করলেন। তবে তিনি তা ব্যবহার করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। জামাঃ রাসূল সাঃ জামা খুব পছন্দ করতেন। তিনি যে জামা ব্যবহার করতেন তার ধরন ছিল এরূপ­ জামার বক্ষাংশ কলার ও প্লেট ছিল। কখনো কখনো তার বোতাম খোলা থাকত অর্থাৎ রাসূল সাঃ জামা পরাবস্থায় কখনো কখনো জামার বোতাম খোলা রাখতেন। আবার কখনো লাগিয়েও রাখতেন। তবে সর্বদা খোলা রাখতেন না। আবার সব জামাও এরূপ ছিল না। লুঙ্গিঃ রাসূল সাঃ সব কাপড়ই টাখনুর ওপরে পরতেন। চাই তা পায়জামা হোক কিংবা লুঙ্গি। সিলাইবিহীন কাপড়ও এভাবে পরতেন।

কখনো টাখনুর নিচে কাপড় পরতেন না। বিশেষত, রাসূল সাঃ লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় লুঙ্গি তাঁর পায়ের গোছার অর্ধেক পর্যন্ত থাকত। মোজাঃ রাসূল সাঃ মোজাও ব্যবহার করতেন। এমনকি তিনি তার ওপর মাসাহও করতেন। তোশকঃ রাসূল সাঃ-এর একটি চামড়ার তোশক ছিল। যার মাঝে খেজুর গাছের ছাল ভর্তি ছিল। অনেক সময় তিনি চটের ছোট বস্তায় শয়ন করতেন। চাটাই অর্থাৎ খেজুর পাতায় তৈরি মাদুর ছিল তাঁর সাধারণ বিছানা। আংটিঃ রাসূল সাঃ হস্ত মোবারকে রুপার তৈরি একটি আংটি ব্যবহার করতেন। যেহেতু রাজন্যবর্গ সিলমোহর ব্যতীত কোনো পত্র গ্রহণ করতেন না তাই রাসূল সাঃ একটি রুপার আংটি ব্যবহার করতেন। যার তিন লাইনে যথাক্রমে ওপরে নিচে লিখা ছিল­ ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। আর তিনি এই আংটি শুধু সিলমোহর হিসেবে ব্যবহার করতেন। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। জুতাঃ রাসূল সাঃ-এর জুতা মোবারক ছিল চটি জাতীয়, যার নিুাংশ শুধু একটি তলাবিশিষ্ট ছিল। ওপরে দু’টি ফিতা লাগানো ছিল, যার মধ্যে তিনি তার আঙুলগুলো ঢুকাতেন।


অনুবাদঃ ফিহির হুসাইন

কোন মন্তব্য নেই: