সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০০৮

ইসলাম সম্পর্কে কিছু বুদ্ধিজীবীর

ইসলাম সম্পর্কে কিছু বুদ্ধিজীবীর অসত্য উচ্চারণ



সম্প্রতি ঢাকার কিছু সংবাদপত্র খবরে বলেছে, দেশের কিছু বিশিষ্ট নাগরিক বলেছেন, ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো নারী নীতির ওপর যেভাবে চাপ প্রয়োগ করেছে তাতে করে এরা বাংলাদেশকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তারা অভিযোগ করেছেন, বিক্ষুব্ধ এসব গোষ্ঠী ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন। অথচ বিশ্বব্যাপী মুসলিম দেশগুলো প্রচলিত বিধিবিধান থেকে সরে এসেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য। এই বিশিষ্ট নাগরিকরা সরকারের কাছে আহµান জানিয়েছেন, যদি তারা দেশকে অìধকার যুগে ফিরিয়ে নিতে না চান তবে নারী নীতিমালার বিরোধিতাকারীদের কঠোর হস্তে দমন করার জন্য। এরা ‘নারীর সাংবিধানিক অধিকার : প্রেক্ষাপট নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও সাম্প্রতিক বিতর্ক’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এই মন্তব্য প্রকাশ করেন। ‘নাগরিক উদ্যোগ’ নামের একটি সংগঠন এই সভা ঢাকার বিয়াম মিলনায়তনে আয়োজন করেছিল।খবরে বলা হয়েছে, সভায় বেশ ক’জন নাগরিক প্রতিনিধি গত ৮ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা যে নারী নীতিমালা ঘোষণা করেছেন, তা ঠেকাতে পরিচালিত বিক্ষোভ ও উলামা পর্যালোচনা কমিটির দেয়া সুপারিশের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অধ্যাপক খান সরওয়ার মুর্শিদ এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেছেন, ‘যদি মোল্লাতন্ত্র সফল হয়, তবে দেশ অìধকারে ডুবে যাবে! মোল্লারা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই নারী নীতিমালার প্রতি ভেটো দিয়েছে।’ হিংসাত্মক বিক্ষোভের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এই নীতিমালায় তেমন কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন নেই।’ তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারের সবাই এ নীতিমালা প্রশ্নে একমত। তবে সরকার কেন তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে?’ তিনি আরো বলেন, ‘রিভিউ কমিটি বর্বরতার প্রতিনিধিত্ব করে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। কোনো সরকারি কর্মকর্তা কিংবা মাদ্রাসা ছাত্রের কথা শেষ কথা হতে পারে না।’ তিনি আরো প্রশ্ন তোলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা নারী নীতিমালা ঘোষণা করার পর কী করে কতিপয় উপদেষ্টা উলামাদের কাছে ছুটে গিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে পারেন? আর কেনই বা বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীদের উপেক্ষা করে ধর্মীয় গোষ্ঠীকে এ পর্যালোচনার কাজটি দেয়া হলো?’ মানবাধিকার নেত্রী খুশি কবীর বলেন, নারী নীতিমালা শুধু ইসলামকে ভিত্তি করেই প্রণীত হয়নি, এর লক্ষ্য ধর্ম-নির্বিশেষে নারীর উন্নয়ন। আর এসব গোষ্ঠীর চাপ দেয়ার অর্থ, দেশকে একটি ফ্যাসিস্ট ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত করার পথকে মসৃণ করে তোলা।সরকারের প্রতি নারী নীতিমালা প্রশ্নে সরকারের অবস্খান স্পষ্ট করার আহµান জানিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়েশা খানম উল্লেখ করেন, ‘নীতিমালাটি শুধু মুসলমান নারীদের জন্য নয়। যুগে যুগে বিভিন্ন মুসলিম দেশ প্রচলিত বিধিবিধান থেকে সরে এসেছে। বাংলাদেশও তা-ই করেছে। শুধু ‘উত্তরাধিকারের মতো কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা তা বজায় রেখেছি’­ ‘রিজলিউশন অব মুসলিম ম্যারেজ অ্যাক্ট-১৯২৯’ এবং শিশুর নিরাপত্তামূলক আটকের বিষয়ের উল্লেখ করে এ কথা বলেন শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, ‘নারীর উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে আমরা তা করতে পারব না। কারণ, এখানে খোলা মন নিয়ে সততার সাথে কথা বলার মতো লোকের অভাব আছে।’ বায়তুল মোকাররমের খতিবের সমালোচনা করে সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত বলেছেন, ইসলামে পৌরোহিত্য নেই।সভায় যোগদানকারীরা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মসজিদকে ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। এ বি এম মুসা, সৈয়দ আবুল কসুদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বদিউল আলম মজুমদার, ফারজানা ইসলাম ও রুহিন হোসেন প্রিন্স মতবিনিময় সভায় উপস্খিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে আমার বেশ কিছু মন্তব্য আছে। সরকার জাতীয় সংসদে বিষয়টি আলোচনা না করে তাড়াহুড়ো করে নারী নীতিমালা প্রণয়ন করে এই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এমনটি প্রত্যাশিত ছিল না। আমি এসব বুদ্ধিজীবীর মন্তব্যে গভীর দু:খবোধ করছি। তাদের বক্তব্য যেন এমন যে, এই নারী নীতিমালায় ইসলামি ধর্ম বিশ্বাসের বিরোধী কিছু নেই। আমরা দেখেছি, তাদের কিছু শব্দ ও বাক্য ইসলামের মৌল শিক্ষার বিরুদ্ধে যায়। এসব বুদ্ধিজীবী বলেছেন, ইসলামি রাষ্ট্র হবে একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র। এটি শুধু একটি অপপ্রচার বই কিছু নয়। এরা বলেছেন, ইসলামপন্থীরা অথবা ইসলাম বাংলাদেশকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। এটিও অর্থহীন প্রতারণামূলক অপপ্রচার। প্রকৃতপক্ষে আধুনিক বস্তুবাদী, আনন্দবাদী, অনৈতিক ও অমার্জিত চর্চা ও সংস্কৃতির এরা অত্যুৎসাহী প্রেমিক। এরা মানবতাকে আইয়ামে জাহিলিয়াতের চেয়েও নিুস্তরে নিয়ে গেছে। শুধু নৈতিক ও মানবিক বিবেচনায়ই নয়, যান্ত্রিকভাবেও। এটি সত্য নয় যে, বেশিরভাগ মুসলমান দেশ মুসলিম উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন করে ফেলেছে। হতে পারে, দু’য়েকটি দেশে উত্তরাধিকার আইনের বিরোধী উপাদানগুলো অপসারণ করা হয়েছে।উলামারা কোনো চাঁদ হাতে পেতে চাননি। তারা দশটি অনুচ্ছেদের পরিবর্তন-পরিমার্জন চেয়েছেন; যেখানে রয়েছে এই নীতিমালায় দেড় শ’টি অনুচ্ছেদ বা ধারা। প্রকৃতপক্ষে এরা নারীর প্রায় সব অধিকারের প্রশ্নে সম্মতি প্রকাশ করেছেন কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে। আমি অন্যত্র উল্লেখ করেছি, চাকরি ও পার্লামেন্টে নারী কোটা বাতিলের দাবি আমি সমর্থন করি না। অন্যদের সাথে সাধারণ তালিকায় নারীদের আসা উচিত। এটা এমন অপরিহার্য নয় যে, তাদের প্রতিটা দাবি মেনে নিতে হবে। আমি বিস্মিত যে, উল্লিখিত বুদ্ধিজীবীরা উলামাদের পুরো প্রতিবেদনটিই বাতিলের দাবি করেছেন। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, কী করে সুশীল সমাজের এসব সদস্য সব ব্যাপারে সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন। উলামা এমনটি করেন কদাচ। আমরা কখনোই মনে করি না, উলামাদের কথা না শোনার ব্যাপারে এসব বুদ্ধিজীবীর দাবির কোনো নৈতিক ভিত্তি আছে।

কোন মন্তব্য নেই: