শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০০৮

লাব্বায়েকা আলস্নাহুম্মা লাব্বায়েকা


লাব্বায়েকা আলস্নাহুম্মা লাব্বায়েকা



হজ্বের আভিধানিক অর্থ কোন স্থান দর্শনের সংকল্প করা। ইসলামের পরিভাষায় নির্দিষ্ট দিনসমূহে পবিত্র কাবাগৃহ ও নির্দিষ্ট কয়েকটি সম্মানীত স্থানে আলস্নাহ ও আলস্নাহর রাসূলের নির্দেশ অনুসারে অবস্থান করা, জিয়ারত করা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করার নামই হজ্ব্‌। হজ্ব একটি গুরম্নত্বপূর্ণ ইবাদত। হজ্ব ইসলামের পঞ্চ রম্নকনের একটি অন্যতম রম্নকন। হজ্বের ফরজ তিনটি। যথা (১) ইহ্‌রাম বাঁধা অর্থাৎ হজ্বের নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করা (২) আরাফার ময়দানে উকুফ (অবস্থান করা) (৩) তাওয়াফে জিয়ারত করা। হজ্বের ওয়াজিব পাঁচটি । যথা (১) মুজদালিফায় অবস্থান করা(২) সাফা-মারওয়ায় সাঈ করা (৩) রমী করা (কংকর মারা) (৪) মাথার চুল মুন্ডানো অথবা ছোট করা (৫) বিদায়ী তাওয়াফ করা। এছাড়াও হজ্বে অনেকগুলো সুন্নত কাজ রয়েছে। ইসলামে হজ্বের তাৎপর্য ও গুরম্নত্ব অপরিসীম। হজ্ব সম্পর্কে আলস্নাহ-তায়ালা বলেন, “মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থø আছে আলস্নাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহে হজ্ব করা তার অবশ্য কর্তব্য”।
মহান আলস্নাহ তায়ালা হাকিম ও প্রজ্ঞাময়। ভূমণ্ডল এবং নভোমণ্ডলের কোন কিছুই তাঁর হেকমত এবং রহস্য থেকে বঞ্চিত নয়। আলস্নাহ তায়ালার লড়্গ লড়্গ হেকমতের মধ্যে কল্যাণ ও রহস্য লুকায়িত রয়েছে, যা মানুষের ধ্যান-ধারণার বাইরে। পবিত্র হজ্বের হুকুম প্রবর্তনের মধ্যে দু’টি বিষয় সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণঃ (১) হজ্ব পরকালের সফরের এক বিশেষ নিদর্শন (২) আলস্নাহর ইশ্‌ক ও মহব্বত প্রকাশ করা এবং রম্নহকে প্রেম ও ভালবাসার রঞ্জিত করার এক অপূর্ব দৃশ্য।
হজ্ব পরকালের সফরের এক বিশেষ নিদর্শনঃ আলেমগণ হজ্বের সফরকে পরকালের সফরের সাথে তুলনা করেছেন। কালের যাত্রীকে আত্মীয়-স্বজন, ঘর-বাড়ী, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-সন্তôান সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হয়। হজ্ব পালনকারী যখন হজ্বের সংকল্প করে বের হয় অনুরূপ পরকালের যাত্রীর ন্যায় এসব কিছু ত্যাগ করে যেতে হয়। পরকালের যাত্রীকে যেমন সাদা কাফনের কাপড় পরিয়ে খাটিয়ায় সাওয়ার করানো হয়, তেমনি হজ্ব যাত্রী মৃত ব্যক্তির কাফনের ন্যায় ইহ্‌রামের দু’টুকরা শ্বেত শুভ্র সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করে যানবাহনে আরোহণ করে। কিয়ামত দিবসে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেয়ার মত হজ্ব পালনকারীর কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকে “লাব্বায়কা আলস্নাহুম্মা লাব্বায়ক লা শারীকা লাকা লাব্বায়ক; ইন্নাল হামদা ওয়ান্‌নিয়ামাতা লাকা ওয়াল মূল্‌ক। লা শারীকা লাক্‌। মৃত্যুর পর যেমন ছোয়াল জওয়াবের সম্মুখীন হতে হবে তেমনি হজ্বের সফরে হাজীদেরকে বিমান বন্দরসহ সংশিস্নষ্ট স্থানে সরকারি-বেসরকারি লোকদের নিকট বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারণাসহ পরীড়্গা-নিরীড়্গার সম্মুখীন হতে হয়। মক্কা শরীফে প্রবেশ করা যেন ঐ জাহানে প্রবেশ করা যেখানে শুধুই আলস্নাহর রহমত। বায়তুলাহ শরীফের চতুরদিকে প্রদড়্গিণ করা আরশে আজিমের চুতুরদিক প্রদড়্গিণ করার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সাফা ও মারওয়া সাঈ করা হাশরের ময়দানে দিশেহারা হয়ে এদিক-ওদিক ছুটা-ছুটি করার ন্যায়। সূর্যের প্রচণ্ড খরতাপে আরাফার ময়দানে লাখ লাখ মানুষের অবস্থান যেন হাশরের মাঠের সাদৃশ্য। হজ্বের প্রতিটি আমলেই হাজীগণের সামনে কিয়ামতের চিত্র ভেসে উঠে।
আলস্নাহর ইশ্‌ক ও মহব্বত প্রকাশ করা এবং রম্নহকে প্রকৃত প্রেম ও ভালবাসায় রঞ্জিত করার এক অপূর্ব দৃশ্যঃ হজ্ব আলস্নাহ্‌ পাকের ইশ্‌ক ও মহব্বত প্রকাশ করার এক অপূর্ব দৃশ্য। প্রেম আকর্ষণে মাতোয়ারা প্রেমিকের ন্যায় হাজীর অন্তর্ôআত্মায় আলস্নাহ রাব্বুল আলামীনের ইশ্‌কের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে। দারম্নণ আগ্রহ-উদ্দীপনায় হাজী সাহেবগণ তাঁর মহান দরবারে ভিড় জমায়। আলস্নাহ্‌ পাকও চান তাঁর ইশকে প্রেমিকগণ পাগল বেশে এভাবে তাঁর নিকট ছুটে আসুক।

হাজীগণ আলস্নাহর সান্নিধ্য পেতে তাঁর ইশকে মাতোয়ারা হয়ে সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরিধান করে পাগল ও ফকিরের বেশে এলোমেলো চুল-দাড়ি নিয়ে মাঠ-ঘাট, পাহাড়-পর্বত, নদী, সাগর-মহাসাগর, বন-জঙ্গল, মরম্ন প্রান্তôর অতিক্রম করে চিৎকার দিয়ে “লাব্বায়কা আলস্নাহুম্মা লাব্বায়ক ------- উচ্চারিত করে ছুটে চলে বায়তুলার উদ্দেশ্যে। পবিত্র মক্কা এবং মদিনায় পৌঁছে একজন হাজী মনে করে জান্নাতে পৌঁছে গেছিআর আবেগ সমুদ্র এতটাই ত্বরঙ্গায়িত হয় যা বর্ণনা করা এবং অনুধাবন করা কঠিন। ইহ্‌রাম বাঁধা প্রকৃত প্রেমিক হওয়ার এক জ্বলন্তô নিদর্শন। হাজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়া, মুল্‌তাজামে জড়িয়ে ধরা, কা’বার চৌকাঠে মাথা ঠুকে কান্না-কাটি করা, বায়তুলার চতুর্দিকে প্রদড়্গিণ করা ইশ্‌কে ইলাহীর অনুপম দুশ্য। তারপর সাফা-মারওয়া দৌড়া-দৌড়ি, মিনায় গমন, আরাফায় অবস্থান, খোলা আকাশের নিচে ধূলি-ধূসরিত কঙ্করময় মুযদালিফায় রাত্রি যাপন প্রতিটি আমলেই আলস্নাহর প্রেমের প্রতিফলন। জামরাতে শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিড়্গেপ, পশু কোরবানী ও মাথা মোন্ডানোর মাধ্যমে অনুরাগের শেষ মঞ্জিল অতিক্রম করে নিষ্পাপ শিশুর মত হাজী সাহেবগণ নিজ মোকামে ফিরে আসলেও তাঁদের অন্তôরে জ্বলতে থাকে পুনঃমিলনের অর্নিবাণ শিখা।
হজ্বের সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তôর্জাতিক গুরম্নত্বঃ রাজনৈতিক, আন্তôর্জাতিক ও সামাজিক প্রেড়্গাপটে হজ্বের গুরম্নত্ব অপরিসীম। বর্তমান সমস্যা সংকুল বিশ্বে ইসলামের উন্নয়নের ড়্গেত্রে ইসলামী চিন্তôাবিদগণ হজ্ব মৌসুমে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। হজ্ব মুসলিম উম্মার ধর্মীয় চেতনায় উদীপ্ত হওয়ার এবং আপোষ একতা ও সম্পর্ক স্থাপনের সিঁড়ি।

হজ্বের সমাবেশে ইসলামী জনতা, দেশ, জাতি, ভাষা, বর্ণ, গোত্র ইত্যাদি বৈষম্য অবসান ঘটিয়ে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের মহান সুযোগ পায়। হজ্বের বিশ্ব মুসলিম সম্মেলন “মুুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই” এর বাস্তôব দৃশ্য। হজ্বের পোশাক চাল-চলন সুশৃংখল জীবন ব্যবস্থার নিদর্শন। বিশ্ব রাজনীতিতে মানব গোষ্ঠীর মধ্যে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে হজ্ব একটি সার্থক এবং সফল আমল। এখানে ধনী-গরীব, বাদশা-ফকির, সাদা-কালো, ভিন্ন শারীরিক কাঠামো, ভিন্ন ভাষার মানব জাতির একই বেশ ভূষা, একই আমল এবং একই স্থানে একত্রে জীবন যাপন। সারা বিশ্বের মানুষের সামাজিক জীবন ব্যবস্থার খোঁজ-খবর নেয়ার, বিভিন্ন দেশের আলেম, জ্ঞানী-গুণীদের সান্নিধ্য পাওয়ার বিশেষ সুযোগ এনে দেয় হজ্ব। ইসলামের পবিত্র স্থান মক্কা মদিনায় ঐতিহাসিক বহু ইসলামিক নিদর্শন দর্শনসহ রসুল পাক (সাঃ), তাঁর আওলাদ ও তাঁর সাহাবা একরামদের (রাঃ) স্মৃতিসমূহ স্ব-চড়্গে দর্শনের অপূর্ব ব্যবস্থা হজ্ব। বিশ্ব মানবতার ঐক্য সংহতি চেতনা জাগ্রতসহ পরকালের মুক্তির মহান ব্যবস্থা হজ্ব।
মহান আলস্নাহপাক যেন আমাদের সকলকে হজ্বের তাৎপর্য ও গুরম্নত্ব অনুধাবন করে সঠিক ভাবে হজ্ব পালন করার তওফিক দান করেন।

আলহাজ্ব মোঃ ইমান আলী

রাসূল (সা·)কে অনুসরণের সু-সংবাদ


রাসূল (সা·)কে অনুসরণের সু-সংবাদ



পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,“ আলস্নাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তির প্রত্যাশীদের জন্য রাসূলুলস্নাহর মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ” (সূরা আহযাব-২১আয়াত)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, “ যদি তোমরা রাসুলকে অনুসরণ কর তবেই তোমরা সত্যপথের সন্ধান পাবে” (সূরা নূর-৫৪ আয়াত)। আলস্নাহ বলেন, “আর তিনি (রাসূল সা·) নিজের থেকে মনগড়া-খেয়াল খুশিমত কোন কথা বলেন না। তাঁর কথা নিরেট ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রেরিত হয়” (সূরা আন নজম ৩ ও৪ আয়াত)। রাসূল (সা·) কে অনুসরণের ব্যাপারে কোরআনে নির্দেশের বর্ণনাঃ (১)“তোমরা আনুগত্য কর আলস্নাহর এবং অনুগত হও রাসূলের” (সূরা আল ইমরান ৩২ আয়াত)। (২) “ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আনুগত্য কর আলস্নাহ এবং আনুগত্য কর রাসূলের”(সূরা আননিসা-৫৯ আয়াত)। (৩)“আর তোমরা আলস্নাহর আনুগত্য কর আর রাসূলের আনুগত্য কর এবং সতর্ক হও” (সূরা আল মায়েদা-৯২ আয়াত)। সুসংবাদের ঘোষণাঃ(১)“ আর যে কেউ আলস্নাহর আনুগত্য করে এবং রাসূলের অনুসরণ করে, সে তো অবশ্যই মহাসাফল্য লাভ করবে” (সূরা আহযাব ৭১ আয়াত)। (২) “আর যে কেউ আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত্য করবে, তিনি তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হয়, তাঁর সেখানে চিরকাল থাকবে, এ হল মহাসাফল্য” (সূরা নিসা ১৩ আয়াত)। (৩) “আপনি বলে দিন, যদি তোমরা প্রকৃতই আলস্নার প্রতি ভালবাসা পোষণ কর, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আলস্নাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনা মাফ করে দেবেন” (সূরা আল ইমরান ৩১ আয়াত)। হুঁশিয়ারীমূলক আয়াতঃ (১) “আর যে কেউ আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হবে এবং নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে, তিনি তাকে দোজখে দাখিল করবেন, সেখানে সে চিরকাল থাকবে” (সূরা নিসা ১৪ আয়াত)। (২) “কোন মু’মিন পুরম্নষ কিংবা মু’মিন নারীর জন্য এ অবকাশ নেই যে, আলস্নাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোন কাজের নির্দেশ দেন, তখন সে কাজে তাদের কোন নিজস্ব সিদ্ধান্তেôর অধিকার থাকবে। কেউ আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সেতো প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়” (সূরা আহযাব ৩৬ আয়াত)। (৩) “অতএব যারা তাঁর (রাসূলের ) আদেশের বিরোধিতা করছে, তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের ওপর বিপর্যয় আপতিত হবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক আজাব তাদেরকে গ্রাস করবে” (সুরা নূর ৬৩ আয়াত)। কোরআনের উক্ত বর্ণনাগুলোর প্রতি মুসলিম সমাজের নতুন করে নজর দেয়া প্রয়োজন, প্রয়োজন এ বিষয়ের উপলব্ধিকে শানিত করা, রাসূল (সা·) কে পুরোপুরি অনুসরণ করা।
আলস্নাহর হুকুমের পাশাপাশি রাসূলের (সা·) তরীকার অনুসরণ না করলে যে প্রকারান্তôরে রাসূল (সা·)কে অস্বীকার করা হয়, করা হয় অমান্য, করা হয় রাসূল (সা·) এর বিরোধিতা এই বিষয়টি উম্মত-দরদী রাসূল (সা·) উম্মতদের বুঝার, জানার আর উপলব্ধির জন্য আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁর মুখ নিঃসৃত বাণীতে। বুখারী শরীফে বর্ণিত হাদীস হচ্ছে, “আমার উম্মতের সকল লেকই জান্নাতী হবে, অস্বীকারকারী ব্যতীত। জিজ্ঞেস করা হল, হে রাসূল (সা·)! কে অস্বীকাকারী? উত্তরে তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করল, সে-ই বেহেশতে প্রবেশ করবে আর যে ব্যক্তি অনুসরণ করলনা, সে-ই অস্বীকারকারী।” বলার অপেড়্গা রাখে না যে, রাসূলের (সা·) বাধ্যতা স্বীকার করার অর্থ তাঁর আদর্শ গ্রহণ, পালন ও রাড়্গা করা, বিলয় হতে না দেয়া আর এজন্য প্রয়োজনে অর্থ সম্পদ ব্যয়সহ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা, ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকা। বিশ্বমানবতার জন্য বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য রাসূল (সা·) এক সর্বোত্তম আদর্শ ও রহমত স্বরূপ। তাঁর ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় জীবন যেমন আমাদের জন্য আদর্শ, তেমনি তাঁর পারিবারিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক, সৈনিক তথা সংগ্রামী জীবনও আমাদের জন্য আদর্শ।
বর্তমান আমরা তাঁর সমগ্র আদর্শকে গ্রহণ না করে নিজেদের সুযোগ-সুবিধে, প্রয়োজন আর মর্জি মাফিক তাঁর আংশিক আদর্শকে মেনে চলছি। সহজ-সরল সুন্নাতের আংশিক অনুসরণ করে, কঠিন সুন্নগুলো বাদ দিয়ে রাসূলের (সা·) খাঁটি উম্মতের দাবিদার সেজে তাঁর শাফায়াতের আশায় বসে আছি আর কল্পনার রথে জান্নএত পাড়ি জমাচ্ছি। অথচ আলস্নাহর ঘোষণা হচ্ছে, “তাদের মধ্যে এমন অনেক আছে যারা মূর্খ ও নিরড়্গর। তারা মিথ্যা আকাঙড়্গা ছাড়া আলস্নাহর কিতাবের (কোরআন ও হাদীসের) কিছুই জানে না, তারা বাজে কল্পনার মধ্যে ডুবে আছে” (সূরা বাকারা ৭৮ আয়াত)। ধর্মের কিছু আদেশ-নিষেধ মেনে ও কিছু বর্জন-অমান্য করে আর রাসূল (সা·) কে কিছিু অনুুসরণ করে এবং রাসূল (সা·)-এর কিছু সুন্নাতকে অমান্য করে অথবা কিছু সুন্নাতের ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করে কি আলস্নাহর সন্তুষ্টি, দুনিয়ার শান্তিô ও আখিরাতের মুক্তি পাওয়া যাবে? না, কখনো না। কারণ আলস্নাহর ঘোষণা হচ্ছে, “তবে কি তোমরা কিতাবের (রাসূল সা· এর হাদিসের/সুন্নাতেরও) কিয়দংশ বিশ্বাস কর-মান্য কর আর কিছু অংশ অবিশ্বাস-অমান্য কর? যারা এরূপ করবে পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোন পথ নেই আর কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠোরতম শাস্তিôর দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আলস্নাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্ক বেখবর নন” (সূরা বাকারা ৮৫ আয়াত)।
কাজেই আসুন, বক্তৃতা, বিবৃতি আর কথাবার্তায় রাসূল (সা·) প্রেমিক না সেজে আলস্নাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে দুনিয়ার সুখশান্তিô ও সমৃদ্ধির আর পরকালীন মুক্তির লড়্গ্যে কোরআনে বর্ণিত বিধি বিধানের পাশাপাশি রাসূলের (সা·) ওসওয়াতুন হাসানার-সর্বোত্তম আদর্শের তথা সমগ্র সুন্নাতের অনুসরণ-অনুকরণে সচেষ্ট হই। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও অধীনস্থদেরকেও এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করি।

শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০০৮

পবিত্র কাবা শরীফের ইতিহাস



পবিত্র কাবা শরীফের ইতিহাস



মুসলমানদের কেবলা কাবা শরীফ। এ কাবা শরীফ মহান আলস্নাহতা’আলার এক অপূর্ব সৃষ্টি। প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তওফ করতে মক্কা গমন করেন। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আলস্নাহর নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরকে লড়্গ্য করে মহান আলস্নাহ পবিত্র কোরআনের সুরা আল-ইমরানের ৯৬ আয়াতে বলেন, “নিশ্চই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদত রূপে নিরূপিত হয়েছে, তা ঐ ঘর যা মক্কাতে অবস্থিত”। কাবাঘরটি আলস্নাহর আরশে মুয়ালস্নাহর ছায়াতলে সোজাসুজি বাইতুল মামুরের আকৃতি অনুসারে স্থাপন করেন। হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) -এর পৃথিবীতে মিলন হলে তারা উভয় আলস্নাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ হযরত আদম (আঃ) আলস্নাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আলস্নাহ তাদের দোয়া কবুল করেন এবং বাইতুল মামুরের আকৃতিতে পবিত্র কাবাঘর স্থাপন করেন। এখানে হযরত আদম (আঃ) সন্তুষ্টচিত্তে আলস্নাহর ইবাদত করতে থাকেন (শোয়াব-উল-ঈমান, হাদিসগ্রন্থ) এর অনেক তফসিরবিদের মতে, মানব সৃষ্টির বহু আগে মহান আলস্নাহ তায়ালা কাবাঘর সৃষ্টি করেন”। হফসিরবিদ মজাহিদ কলেন, “আলস্নাহ রাব্বুল আলামিন বাইতুলস্নাহর স্থানকে সমগ্র ভুপৃষ্ঠ তেকে দু’হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন” মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে হযরত আবুযর গিফারী হতে বর্ণনা হয়েছে, রাসূল (সঃ) তার একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, “বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম। এরপরের মসজিদ হলো মসজিদে আকসা। মসজিদে হারাম নির্মাণে ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়”।
হযরত আদম (আঃ) কাবাঘর আলস্নাহর আদেশে পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হলো। শত শত বছর অতিবাহিত হলো। আলস্নাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করতো, আলস্নাহর কাছে হাজিরা দিতো এ কাবাঘরে সমবেত হয়ে। কাবাঘরে এসে মহান আলস্নাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা দিত। “লাব্বাইক আলস্নাহুম্মা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা, লাকাওয়ালা মুলক, লাশারিকা, লাকা লাব্বাইক”। এভাবে চলতে চলতে দিন গত হতে থাকলো। এরপর হযরত শীস (আঃ) কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করলেন। দিন দিন একাতুবাদের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। এরপর কাবা শরীফ নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেন হযরত ইব্রাহীম (আ;)। হযরত ইব্রাহীম (আ·) হযরত ইসমাইল (আ·) কে সাথে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ বা পুননির্মাণ করেন। হযরত ইস্রাহীম (আ·) কাবাঘর সংস্কার করে আলস্নাহর দরবারে দোয়া করলেন। ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ কর,। আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর, আমাদের হজ্বের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ড়্গমা কর। নিশ্চই তুমি দয়ালু। হে প্রতিপালক! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করম্নন।
যিনি তাদের কাছে তোমাদের আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিড়্গা দিবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চই তুমি মহাপরাক্রমশালী”। আলস্নাহ রাব্বুল ইজ্জত হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর বংশ হতে হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-কে শেষ নবী ও রাসূল হিসাবে আলস্নাহ পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। এরপর কয়েকশ’ বছর গত হলো। পবিত্র কাবাঘর সংস্কার করলো আমালিকা সম্প্রদায়। তারপর আরো শ’ শ’ বছর কিংবা হাজার হাজার বছর পরে কাবাঘর সংস্কার করলো মক্কার জুরহাস সম্প্রদায়। আরবের অর্থাৎ মক্কায় যে সকল গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিপত্তি ছিল, তাদের দায়িত্ব থাকতো কাবা শরীফ রড়্গণাবেড়্গণের। এ দায়িত্ব পালনকে তারা সম্মানিত ও গর্বের মনে করতো। শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হলো। কাবা শরীফ ও কাবাঘরকে সংস্কার করলেন মোযার সম্প্রদায়। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নবুয়্যত প্রাপ্তির ৫ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ। এ কোরাইশ বংশেই মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ৫৭০ খ্রীঃ · জন্মগ্রহণ করেন। কোরাইশরা কাবা শরীফ সংস্কারের পর হাযরে আসওয়াত স্থাপন নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়।
সকলের সম্মতিক্রমে আলস্নাহর রাসূল কাবাগৃহে হাযরে আসওয়াদ কাবা শরীফে স্থাপন করেন। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জীবিত অবস্থায় ৬৪ হিজরীতে আব্দুলস্নাহ ইবনে জোবায়ের (রাঃ) কাবা শরীফ সংস্কার করেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭৪ হিজরীতে কাবা শরীফ সংস্কার করেন।
সুদীর্ঘ ১৪শ’ বছরে কাবাগৃহে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়নি। শুধুমাত্র কাবাঘরের চারপাশে অবস্থিত মসজিদে হারামের পরিবর্ধন, সংস্কার বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। কাবাঘরের রড়্গণাবেড়্গণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদি সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরীফের মোতোয়ালিস্নর দায়িত্বে থাকেন। ভৌগলিক দিক দিয়ে মক্কা ও আরব উপদ্বীপ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। মক্কানগরী পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় মহান আলস্নাহ কাবাঘর মক্কাতেই স্থাপন করেন। পবিত্র হজ্ব পালন করতে লাখ লাখ মুসলমান মক্কা শরীফে গমন করেন। জিলহজ্ব মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে মূল হজ্ব অনুষ্ঠিত হয়। জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আযহার দিন। এ দিন কোরবানী দিতে হয়। যা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর স্মৃতি বহন করে চলছে হাজার হাজার বছর ধরে। যমযম কূপ ও ঠিক তেমনি হযরত ইসমাইল (আঃ) ও তার মা বিবি হাজেরা (আঃ)-এর স্মৃতি বহন করে চলছে। এ যমযম কূপ মহান আলস্নাহর কুদরতের অপরূপ ড়্গমতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। হজ্ব মুসলমানদের ঈমানের অন্যতম স্তôম্ভ। আরবের মক্কা নগরীর পবিত্র কাবাঘর হেফাজতের মালিক মহান আলস্নাহ নিজে। বিশ্ব মুসলমানদের মিলনমেলা ঘটে হজ্বের মাধ্যমে পবিত্র কাবা শরীফে।

গোলাম আশরাফ খান উজ্জ্বল

পবিত্র বাণী

পবিত্র বাণী


১। মানুষের ওপর মহান আলস্নাহর এ অধিকার যে, বায়তুলস্নাহ পর্যন্তô পৌঁছবার শক্তি-সামর্থø যে রাখে সে যেন হজ্ব করে এবং যে এ নির্দেশ অমান্য করে কুফরী আচরণ করবে তার জেনে রাখা উচিত যে, আলস্নাহ বিশ্ব প্রকৃতির ওপর অবস্থানকারীদের মুখাপেড়্গী নন। (আলে ইমরান-৯৭)

২। আলস্নাহর সন্তেôাষ বিধানের জন্য যখন হজ্ব ও উমরার নিয়ত করবে, তখন তা পূর্ণ করবে। (সূরা বাকারা-১৯৫) তবে তোমাদের যে ব্যক্তি হজ্বের সময় আসা পর্যন্তô উমরার ফায়দা গ্রহণ করবে। সে যেন সামর্থø অনুযায়ী কোরবাণী দেয়, আর কোরবাণী দেয়া সম্ভব না হলে সে তিনটি রোজা হজ্বের সময়ে আর সাতটি ঘরে ফিরে মোট দশটি রোজা রাখবে। (সূরা বাকারা-১৯৬)

৩) হযরত আবুহুরায়রা (রাঃ) রাসূর (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। যে ব্যক্তি এ ঘরে এলো; স্ত্রী ইন্দ্রিয়মিলন এবং কোন প্রকার অশস্নীলতা ও ফসেকী কাজে নিমজ্জিত হয়নি, তবে সে যেন সেখান থেকে এমন পবিত্র হয়ে ফিরে আসে, যেমন নিষ্পাপ অবস্থায় তার জননী তাকে প্রসব করেছিল। (সহীহ মুসলিম)

৪) হযরত আবুহুরায়রা (রাঃ) রাসূল (সাঃ) হতে আরো বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সাঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, হে লোকেরা, আলস্নাহ তোমাদের জন্য হজ্ব ফরজ করেছেন। অতএব হজ্ব কর। (মুনতাকী)

৫। আর জমিনের ওপর গর্বভরে চলো না, আলস্নাহ কোন আত্ম-অহংকারী দাম্ভিক মানুষকে ভালোবাসে না। সূরা লোকমান-১৮

৬। নিশ্চয় আলস্নাহ দাম্ভিক আত্ম-গর্বিত ব্যক্তিকে কখনো পছন্দ করেননি। (সূরা আননিসা-৩৬)

৭। আমি কত গ্রাম-গঞ্জ ও বস্তিôই না ধ্বংস করে দিয়েছি যার অধিবাসীরা স্বীয় জীবিকা ও সহায় নিয়ে গর্ব অহংকার করত। এগুলোই তাদের ঘর-বাড়ী, তাদের পরে সেখানে কমসংখ্যক লোক বসবাস করেছে। অবশেষে আমিই চূড়ান্তô মালিক রয়েছি। (সূরা কাসাস-৫৮)


হজের সফরঃ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি


হজের সফরঃ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি



হজ হচ্ছে ‘ইউহিব্বুহুম ওয়া ইউহিব্বুনাহ’ (আল্লাহ তাদের মহব্বত করেন এবং তারা আল্লাহকে মহব্বত করে)­ পবিত্র কুরআনের এ কথার বাস্তব ও জীবন্ত নমুনা। অর্থাৎ আল্লাহর মহব্বতে তার আনুগত্যের কাছে নিজেকে বিলীন করে দেয়া। হজের সফর মহব্বতের দাবি পুরা করার সফর। আপনি আল্লাহকে কতটা ভালোবাসেন আর তার বিনিময়ে আল্লাহর ভালোবাসা ও মহব্বত আপনি কতটা অর্জন করতে পেরেছেন তা প্রতিবিম্বিত হবে এই সফরে। হজের প্রত্যেকটি আমল মহব্বতের আমল, এর প্রত্যেকটি মনজিল মহব্বতের মনজিল। সফরের শুরুতেই যদি আল্লাহর মহব্বতে আপনার হৃদয় ও মন ভরপুর করে নিতে পারেন তবে হজের সফরের মজা সফর শুরুর আগেই পেতে শুরু করবেন এবং সে মজা কখনোই শেষ হবে না। আল্লাহ বলেন, পথ দেখানো আমার দায়িত্ব।

তিনি আরো বলেন, ‘যারা আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করে তাদের সরল পথে পরিচালনা করা হয়। ইসলাম হচ্ছে সেই পথ যে পথে আল্লাহর মহব্বত লাভ করা যায় আর আল্লাহর মহব্বত লাভ করাই বান্দার চূড়ান্ত লক্ষ্য। চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে হজের সফরে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণঃ ১. সহিত নিয়ত ‘আলা হুব্বিহি/আলা হুব্বালিল্লাহ’ঃ হজের সফরে আপনার নিয়ত যেন হয় শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।

প্রদর্শনেচ্ছা নয়, অর্থ-সম্পদের তাকাব্বুরি নয়, সামাজিক লোকাচার বা দায়বদ্ধতা থেকেও নয়, শুধু আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মহব্বতের দাবি পুরা করার উদ্দেশ্যে যেন হজের নিয়ত করা হয়। ২. সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণঃ আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের ওপর আল্লাহর এ অধিকার যে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছানোর শক্তি ও সামর্থø যে রাখে সে যেন হজ পালন করে। অর্থাৎ হজ হচ্ছে শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত। শারীরিক সুস্থতা ও প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান যার আছে সে হজ করবে। আপনার হজ এজেন্সি কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে যখন যে পরিমাণ টাকা-পয়সা প্রদান করছেন বা করবেন তা অবশ্যই পাকা রসিদের মাধ্যমে করবেন এবং ওই রসিদ সংরক্ষণ করবেন। হজের সফরে সেগুলো সাথে রাখলে ভালো হয়। আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণ করবেন। সম্ভব হলে এগুলোর ফটোকপি করিয়ে নেবেন। প্রয়োজনে একটি নোটবই বা ডায়েরি সাথে রাখবেন, যাতে আপনার পাসপোর্ট নম্বর, ভিসা নম্বর, টিকিট নম্বর, বিমানের নম্বর ও ফিরতি ফ্লাইটের তারিখ ও সময়সহ মক্কা-মদিনার সম্ভাব্য অবস্থানের ঠিকানা লিখে রাখতে পারেন। প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন নম্বর বিশেষ করে মোয়াল্লেম অফিসের ঠিকানাসহ ফোন নম্বর লিখে হাতের কাছে রাখবেন। শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

হজের সফরে প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হলো কুরআন শিক্ষা তথা কুরআন-হাদিসের জ্ঞান অর্জন করা। যারা কুরআন পড়তে পারে তারা আল্লাহর শুকরিয়া আদায়সহ আরো সহিহ করে কুরআন পড়া ও অধ্যয়ন করার প্রতি গুরুত্ব দেব। যারা কুরআন পড়তে বা তেলাওয়াত করতে জানেন না তারা অবশ্যই কুরআন তেলাওয়াত শিখে নেবেন। আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন, সব আলেমে দীন এ বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত যে, সূরা ফাতেহা হতে সূরা নাছ পর্যন্ত (সম্পূর্ণ কুরআন) জীবনে অন্তত একবার সহিহ করে পড়া ফরজে আইন। প্রস্তুতি গ্রহণের দ্বিতীয় পর্যায়ে আপনাকে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার পরিচয় জানতে হবে। তার সম্পর্কে কুরআন-হাদিসের আলোকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আল্লাহর রববিয়াত, উলুহিয়াত তথা আল্লাহর জাত-ছিফাত সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা দরকার। হজের সফরের শুরুতেই হজের প্রাণকেন্দ্র বায়তুল্লাহ শরিফ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা ভালো। তা ছাড়া এখানে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো, যেমন মাকামে ইবরাহিম; এখানে যেই প্রবেশ করল সেই নিরাপদ হলো (আল ইমরান-৯৭)। শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে নিরাপদ, জালিমের জুলুস থেকে নিরাপদ, দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে নিরাপদ। সম্মানিত হাজী সাহেবান, আল্লাহর প্রিয় নবী আঃ-দের পদচিহ্নিত ও স্মৃতি বিজড়িত মাতাফ, সাফা-মারওয়া, মাশয়ারুল হারাম, মসিজেদ খায়িফ, মসজিদে নামিরা, জাবালে রহমত, মিনা ও আরাফাহ ময়দান হজের অনুষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো। আপনি শূন্য ঝোলা কাঁধে নিয়ে এসব বরকতময় নিদর্শনগুলোর পাশ দিয়ে দৌড়াদৌড়ি করবেন অথচ যথার্থভাবে চিনে নিয়ে এসব থেকে কাঙ্ক্ষিত ফায়দা হাসিল করতে পারবেন না এমন যেন না হয়। পবিত্র কুরআনে হজের আহ্বান থেকে শুরু করে হজ বিষয়ে বেশ প্রণিধানযোগ্য কিছু আয়াত রয়েছে। এসব আয়াত অর্থসহ মুখস্থ থাকলে তেলাওয়াত করে মজা পাবেন। নবী আঃ-দের মাধ্যমেই ইসলামের নিয়ামত মানুষের কাছে পৌঁছেছে। অতএব নবী সাঃ-এর সিরাত আপনাকে অধ্যয়ন করতে হবে।

ইবরাহিম আঃ-এর সিরাত অধ্যয়নঃ কাবাকেন্দ্রিক বিশ্বসভ্যতা গড়ার উদগাতা হচ্ছেন ‘মিল্লাতা আবিকুম ইবরাহিম আঃ। নূহ আঃ-এর প্লাবনের পর মক্কা আল মোকাররামাহ শহরের প্রতিষ্ঠা ও বায়তুল্লাহ শরিফের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জমজম কূপের উৎপত্তি, সাফা-মারওয়ায় সায়ি, মিনায় কুরবানি, তাকবিরে তাশরিক আর রামিউল জুমরাহের স্মৃতি একান্তভাবেই ইবরাহিম আঃ ও তাঁর পরিবারের সাথে জড়িত। প্রকৃত অর্থে হজ হচ্ছে ইবরাহিম আঃ-এর সুন্নত। অতএব মুসলিম মিল্লাতের পিতা তথা বনু ঈসরায়েল (ইয়াকুব আঃ-এর বংশধর) ও ঈসা আঃ-এর অনুসারীসহ আখেরি নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর উম্মতদের কাছে সমভাবে সম্মানিত ও মর্যাদাবান নবী হজরত ইবরাহিম আঃ-এর সিরাত জেনে নিতে পারলে অবশ্যই কল্যাণ রয়েছে। হজ থেকে ফেরার পরঃ হজ কাবাকেন্দ্রিক তথা কুরআনভিত্তিক বিশ্বসভ্যতা গড়ার শিক্ষা দেয়। সে শিক্ষার উৎস হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাতু রাসূলিল্লাহ সাঃ। হজের সে শিক্ষায় কূপমণ্ডুকতা ও সঙ্কীর্ণতার স্থান নেই; আছে উদারতা, আছে মহানুভবতা। কুরআন থেকে শিক্ষা অর্জন করতে হবে, অর্জিত জ্ঞান ও শিক্ষার আলোকে আমলিয়াত জিন্দেগি যাপন করতে হবে।

সর্বোপরি ওই শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করতে হবে। সদা মনে রাখতে হবে, আল্লাহর মেহমান হিসেবে আপনি যে সম্মান ও মর্যাদার আসনে সমাসীন হয়েছেন, তা যেন ভূলুণ্ঠিত না হয়। হজের সফরে যে আলো আপনার হৃদয়ে জ্বলছে তা যেন নিভে না যায়, বরং সে আলো যেন আপনার পরিবার ও সমাজকে আলোকিত করে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যে পেরেশানি নিয়ে আপনি তাওয়াফ করেছেন, সায়ি করেছেন মসজিদুল হারামাইনের জামায়াতে শরিক হওয়ার জন্য সদা সতর্ক থেকেছেন, তাহাজ্জুতগুজারে ব্রতী হয়েছেন, হজ থেকে ফেরার পরও আপনার মধ্যে তা যেন জাগরূক থাকে। তবেই আপনি আলোকিত মানুষ। আর সুন্দর সমাজ ও সভ্যতা গড়ার জন্য আলোকিত মানুষের বড় প্রয়োজন।


নাদির আহাম্মদ

রাসূল সাঃ-এর পোশাক পরিচ্ছদ

রাসূল সাঃ-এর পোশাক পরিচ্ছদ


ইদ্রিস কান্দুলুভি রহঃ রাসূল সাঃ-এর পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল অত্যন্ত সাদাসিধে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সাধারণ। পরহেজগার তথা খোদাভীতি আর দরিদ্রের মতোই ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবন। লুঙ্গি, জামা, চাদর, জুব্বা ও কম্বল ছিল হুজুর সাঃ-এর সাধারণ পোশাক। যার কোনটি ছিল আবার তালিযুক্ত। সাধারণত রাসূল সাঃ-এর পাশাক সাদা হলেও তিনি সবুজ রঙের পোশাক বেশি পছন্দ করতেন। রাসূল সাঃ-এর পোশাক কেমন ছিল। তিনি কোন ধরনের পোশাক দৈনন্দিন ব্যবহার করতেন এবং কী ধরনের পোশাক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ব্যবহার করেছেন তার বিবরণ সম্মানিত পাঠকবৃন্দের সামনে তুলে ধরা হলোঃ চাদরঃ রাসূল সাঃ-এর একটি ইয়ামানি চাদর ছিল, যাতে সবুজ ও লাল ধরনের রেখা ছিল। ইয়ামানি চাদর নামে এই প্রসিদ্ধ চাদরটি ছিল রাসূল সাঃ-এর কাছে অধিক পছন্দনীয়। তবে, রাসূল সাঃ প্রকৃত লাল রঙের জিনিস ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।

অর্থাৎ, শুধু লাল জাতীয় রঙের জিনিস ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। যদি লালের সাথ অন্য কোনো রঙের মিশ্রণ থাকে তাহলে তা ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা নেই। টুপিঃ রাসূল সাঃ এমন টুপি ব্যবহার করতেন যা মাথার সাথে আঁকড়ে লেগে থাকত। তিনি কখনো উঁচু ধরনের টুপি ব্যবহার করেননি। আবু আগারি রাঃ থেকে বর্ণিত, সাহাবায়ে কেরামের টুপিও মাথার সাথে আঁকড়ে লেগে থাকত। পাগড়িঃ রাসূল সাঃ পাগড়ির নিচে টুপিকে আবশ্যিকভাবে রাখতেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, ‘আমাদের মাঝে এবং মুশরিকদের মাঝে পার্থক্য হলো­ আমরা টুপির ওপর পাগড়ি বাঁধি।’ (আবু দাউদ) রাসূল সাঃ যখন পাগড়ি বাঁধতেন, তখন তাঁর প্রান্ত (পাগড়ির এক মাথা) দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে রেখে দিতেন। কখনো তা সুন্দরভাবে থুতনি বা জামির নিচে ভাঁজ করে রেখে দিতেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত, নবী করীম সাঃ বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বদর যুদ্ধে ও হুনাইন যুদ্ধে আমার সাহায্যার্থে এমন ফেরেশতাদের প্রেরণ করেছেন, যাদের সবাই ছিলেন পাগড়ি পরিহিত।’ যার ইঙ্গিত পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআনে এভাবে রয়েছে, ‘প্রভু চিহ্নিত ঘোড়ার ওপর ৫ হাজার ফেরেশতা তোমাদের সাহায্যে প্রেরণ করবেন।’ (সূরা আলে ইমরান, ১২৫)।

পায়জামাঃ হাদিস শরিফে বর্ণিত, রাসূল সাঃ দেখতে পেলেন মিনাবাজারে পায়জামা বিক্রি হচ্ছে। তা দেখে রাসূল সাঃ-এর কাছে পায়জামাটি খুবই পছন্দ হলো। অতঃপর, রাসূল সাঃ বললেন, লুঙ্গির চেয়ে এটা বেশি আবৃত করে। অবশেষে রাসূল সাঃ তা ক্রয় করলেন। তবে তিনি তা ব্যবহার করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। জামাঃ রাসূল সাঃ জামা খুব পছন্দ করতেন। তিনি যে জামা ব্যবহার করতেন তার ধরন ছিল এরূপ­ জামার বক্ষাংশ কলার ও প্লেট ছিল। কখনো কখনো তার বোতাম খোলা থাকত অর্থাৎ রাসূল সাঃ জামা পরাবস্থায় কখনো কখনো জামার বোতাম খোলা রাখতেন। আবার কখনো লাগিয়েও রাখতেন। তবে সর্বদা খোলা রাখতেন না। আবার সব জামাও এরূপ ছিল না। লুঙ্গিঃ রাসূল সাঃ সব কাপড়ই টাখনুর ওপরে পরতেন। চাই তা পায়জামা হোক কিংবা লুঙ্গি। সিলাইবিহীন কাপড়ও এভাবে পরতেন।

কখনো টাখনুর নিচে কাপড় পরতেন না। বিশেষত, রাসূল সাঃ লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় লুঙ্গি তাঁর পায়ের গোছার অর্ধেক পর্যন্ত থাকত। মোজাঃ রাসূল সাঃ মোজাও ব্যবহার করতেন। এমনকি তিনি তার ওপর মাসাহও করতেন। তোশকঃ রাসূল সাঃ-এর একটি চামড়ার তোশক ছিল। যার মাঝে খেজুর গাছের ছাল ভর্তি ছিল। অনেক সময় তিনি চটের ছোট বস্তায় শয়ন করতেন। চাটাই অর্থাৎ খেজুর পাতায় তৈরি মাদুর ছিল তাঁর সাধারণ বিছানা। আংটিঃ রাসূল সাঃ হস্ত মোবারকে রুপার তৈরি একটি আংটি ব্যবহার করতেন। যেহেতু রাজন্যবর্গ সিলমোহর ব্যতীত কোনো পত্র গ্রহণ করতেন না তাই রাসূল সাঃ একটি রুপার আংটি ব্যবহার করতেন। যার তিন লাইনে যথাক্রমে ওপরে নিচে লিখা ছিল­ ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’। আর তিনি এই আংটি শুধু সিলমোহর হিসেবে ব্যবহার করতেন। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। জুতাঃ রাসূল সাঃ-এর জুতা মোবারক ছিল চটি জাতীয়, যার নিুাংশ শুধু একটি তলাবিশিষ্ট ছিল। ওপরে দু’টি ফিতা লাগানো ছিল, যার মধ্যে তিনি তার আঙুলগুলো ঢুকাতেন।


অনুবাদঃ ফিহির হুসাইন

শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০০৮

সুদের ব্যবসা মু’মিনের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়


সুদের ব্যবসা মু’মিনের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়



আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের রব। তিনি আমাদেরকে সকল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। অন্য সকল সৃষ্টির মধ্যে মানব জাতিকে বেশি ভালবাসেন। আলস্নাহতায়ালা কখনোই চান না যে, তার কোন বান্দা জাহান্নামের আগুনে ভস্মিভূত হোক। সে জন্য তিনি এই পৃথিবীতে আমাদের চলার পথের গাইড বুক দান করেছেন। যার নাম কুরআনুল কারীম। এই কুরআনুল কারীমে ৬৬৬৬টি আয়াত রয়েছে। যার প্রতিটি আয়াত মেনে চলা মুমিন মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। অথচ মনের অজান্তেô অসতর্ক মুহূর্তে প্রতিদিন অসংখ্য আয়াত আমরা লঙ্ঘন করে চলেছি। যেমন সুদের বিষয়টিই ধরম্নন। কুরআনে কিন্তু সুদকে হারাম করা হয়েছে তার পরেও মানুষ তা অনায়াসে গ্রহণ করে চলেছেন।

এর মাধ্যমে যে, তার সকল ইবাদত বন্দেগী, দান সাদকা বা আমলসমূহ ধ্বংস হচ্ছে সে ব্যাপারে যেন তার কোন মাথা ব্যথা নেই। এ কারণেই সতর্কতার জন্য এই আলোচনা । মহান আলস্নাহতায়ালা কুরআনে ঘোষণা করেছেন। আহালস্নালস্নাহুল বাইয়া অ হাররামার রিবা অর্থাৎ ব্যবসাকে হালাল করা হলো আর সুদকে হারাম করা হলো। (সুরা বাকারা-২৭৬ আয়াত)। কুরআনে এভাবে সাত এর অধিক আয়াত ও চলিস্নশটির বেশি সহীহ হাদীসে সুদকে স্পষ্ট হারাম হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখন কুরআনে একটি আয়াতের দিকে লড়্গ্য করম্নন যেখানে বলা হচ্ছে মানলাম ইয়াহকুম বিমা আনযালালস্নাহু ফাউলাইকা হুমুল কাফেরম্নন। অর্থাৎ যারা আলস্নাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করে না তারা কাফের হিসাবে বিবেচিত হয়। যদি কুরআনের একটি আয়াত অমান্য করলে কেউ কাফেরে পরিগণিত হয়।

তাহলে যারা সুদ খাওয়া বন্ধ না করে আলস্নাহর কুরআনের ঐ সমস্তô আয়াতগুলো অস্বীকার করে চলেছেন। তারা কিভাবে মুসলমান থাকেন? পরিপূর্ণ মুসলমান হওয়ার পূর্বশর্ত হলো তিনি ইসলামে পূর্ণাঙ্গভাবে প্রবেশ করবেন। যদি কেউ ইসলামের সুবিধামূলক বিষয়গুলো গ্রহণ করেন। আর কঠিন ও কষ্টকর বিষয়গুলো অবজ্ঞা ও অমান্য করেন। তাহলে তার পরিণিতি সম্পর্কে আলস্নাহতায়ালা সুরা বাকারায় বলেন, যদি তোমাদের কেউ কুরআনের এক অংশ মান্য করে ও অন্য অংশ ভুলে যায় বা অমান্য করে তাহলে তাকে দুনিয়ায় লাঞ্ছনাগঞ্জনা অপমানের জীবন দেয়া হবে আর পরকালে তাকে কঠিন আজাবে পাকড়াও করা হবে। সুতরাং প্রতীয়মান হয় যে, মুসলমান হতে হলে অবশ্যই তাকে কুরআনের প্রতিটি আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হবে। সুদ তেমনি নিষিদ্ধ বিষয়ের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য একটি। সুদ কেবল ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ তাই নয়। অন্যান্য ধর্মেও সুদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন খৃষ্টধর্মে সুদ সম্পর্কে বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি সুদ ও সুদের বৃদ্ধি নিয়ে ধন বাড়ায় তার সকল প্রার্থনা ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যাত ।

অন্য জায়গায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি ধার্মিক হয়, সুদের লোভে ঋণ না দেয়, তবে সে ব্যক্তি ধার্মিক, সে অবশ্যই বাঁচবে। আরো বলা হয়েছে, ঋণ দাও, বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা করো না। দার্শনিক এ্যারিস্টোটল তার পলিটিক্স গ্রন্থের মধ্যে উলেস্নখ করেছেন, সুদ হলো মানুষের সাথে এক ধরনের জালিয়াতি করা, অন্য আর একজন দার্শনিক পেস্নটো তার ল’স নামক গ্রন্থের মধ্যে উলেস্নখ করেছেন, সুদ হলো সমাজের সবচেয়ে নিন্দনীয় কাজ। থমাস বলেন, সুদ হলো এক প্রকার অবিচার। হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রাণ পুরম্নষ মনু বলেন, কোন উচ্চ বর্ণের ব্রাহ্মণও যদি সুদ খায় তাহলে তার সাথে নিম্নবর্ণের শুদ্রের মত আচরণ করবে। হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ পুরাণে বলা হয়েছে চিকিৎষস্য ভিড়্গোশ্চ তথা বার্ধুষিকস্য চ, পাষন্ডস্য নৈবান্নং ভুঞ্জিত নাস্তিôকস্য চ’ অর্থাৎ চিকিৎসক, ভিড়্গুক, সুদখোর, পাষন্ড ও নাস্তিôকের অন্ন ভড়্গণ করবে না। এখানে উলেস্নখ্য যে, সুদকে হিন্দু শাস্ত্রে এতটাই ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে যে, তার বাড়িতে ভড়্গণ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা কার্লমার্কসও সুদ ও সুদখোরদের তীব্র সমালোচনা ও ঘৃণার চোখে দেখেছেন এবং বলেছেন, সুদখোরদের শাস্তিô প্রদান ও তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার। এমনিভাবে বৌদ্ধ ধর্মে ও ইহুদী ধর্মসহ সকল ধর্ম এবং ধর্ম বিশেষজ্ঞদের অভিব্যক্তির মাধ্যমে সুদ নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উচ্চারিত হয়েছে।
আমাদের প্রিয় নবীজী (সঃ) যিনি আমাদের আদর্শ। তিনি আমাদের জন্য এ বিষয়ে কি বাস্তôব নিদর্শন রেখে গিয়েছেন। একদিন মহানবী (সঃ)-এর সমীপে হযরত বেলাল (রাঃ) কিছু উন্নতমানের খেজুর নিয়ে হাজির হলেন, রাসুল (সঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথা হতে এ খেজুর আনলে? বেলাল উত্তর দিলেন, আমাদের খেজুর নিকৃষ্টমানের ছিল। তাই আমি দ্বিগুণ পরিমাণ খারাপ খেজুরের পরিবর্তে একগুণ ভাল খেজুর বদলিয়ে নিয়েছি। রাসুল (সঃ) বললেন, এতো নির্ভেজাল সুদ (সহীহ বুখারী)। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আলস্নাহর নবী (সঃ) বলেছেন মিরাজের যে রাত্রে আমাকে যখন জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন আমি কিছু লোককে দেখলাম, যাদের পেট ঘটের মত এবং বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল তাদের পেটগুলো সাপে পরিপূর্ণ। আমি জিব্রাইল (সঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? জিব্রাইল (আঃ) আমাকে বললেন, এরা ঐ সকল লোক, যারা দুনিয়ায় সুদ খেত (ইবনে মাজাহ)।

অপর হাদীসে বলা হয়েছে সুদের সত্তর প্রকার গোনাহ আছে তার মধ্যে ছোট গোনাহ হলো নিজের আপন মায়ের সাথে ব্যভিচার করা (ইবনে মাজাহ, বায়হাকী)। হযরত আবদুলস্না ইবনে হানজালা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুলস্নাহ (সঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি এক দিরহাম সুদ জ্ঞাতসারে গ্রহণ করে তাহলে তা ছত্রিশবার ব্যভিচার করার চেয়েও কঠিন গোনাহ তার নামে লেখা হবে। (মুসনাদে আহমাদ, মেশকাত)। রাসুল (সঃ) বলেছেন, চার প্রকার লোককে আলস্নাহর জান্নাতে যাওয়ার জন্য কোন প্রকার অনুমতি নেই।

১। যারা অতিরিক্ত মদ পান করে

২। যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতিমের মাল গ্রহণ করে।

৩। যারা মাতা-পিতার অবাধ্য।

৪। যারা সুদখোর বা সুদী কারবারে জড়িত।

হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, যদি তুমি কোন লোককে ঋণ দাও এবং সে তোমাকে একবেলা খাওয়ার জন্য অনুরোধ করে, তবে তার বাড়ীতে খাবে না, কারণ এটি সুদ। কিন্তু যদি সে তোমাকে ঋণ নেওয়ার আগে খাওয়ার আমন্ত্রণ জানায় তাহলে খেতে পার (বায়হাকী)। রাসুলুলস্নাহ (সঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি কারো ধার বা কর্য প্রদান করে সেই ধার গ্রহণকারীর নিকট হতে কোন প্রকার উপহার সামগ্রী গ্রহণ করা যাবে না। (সহীহ বুখারী)। হযরত আবু উমামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত মহানবী (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আপন ভাইয়ের জন্য সুপারিশ করে এবং তার বিনিময়ে কোন উপহার গ্রহণ করে, সে যেন কোন এক বড় দরজা দিয়ে সুদের মধ্যে প্রবেশ করল (আবু দাউদ, মেশকাত)। রাসুলুলস্নাহ (সঃ) বলেছেন, যদি কেহ বেশি বেশি সুদে লেনদেন করে তবে তার পরিণতি লাঞ্ছনা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। তাছাড়া বিদায় হজ্বের ভাষণের সময় মহানবী (সঃ) বলেছিলেন।
আজকের দিবসে সকল প্রকার সুদ রহিত করা হলো। সর্বপ্রথম আমার চাচা আব্দুলস্নাহ ইবনে আব্বাস এর সুদ রহিত করা হলো। রাসুলুলস্নাহর (সঃ) এই ঘোষণার পর উমাইয়া ও আব্বাসীয় খেলাফতের পরও প্রায় নয়শত বছর পর্যন্তô অর্ধ পৃথিবীতে সুদের কোন অস্তিôত্ব ছিল না। তারপর ধীরে ধীরে এই সুদের বিষবাষ্প দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। সুদখোরদের বোঝা উচিত যেহেতু সুদ হারাম। এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থও হারাম। আর তা খেয়ে যতই তারা ইবাদত বন্দেগী করম্নক না কেন।

কোন ইবাদত তাদের কবুল হবে না। তাছাড়া পরকালে আলস্নাহর সামনে জবাবদিহিতার মন-মানসিকতা নিয়ে সবাই যদি আমরা চলতে পারি তাহলে অবশ্যই সুদের অভিশাপ হতে মুক্ত হয়ে আমরা আলস্নাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারবো।


হোসাইন আল -খলদুন

হজ পাপমুক্ত হওয়ার অন্যতম উপায়



হজ পাপমুক্ত হওয়ার অন্যতম উপায়


হজ একটি অন্যতম মৌলিক ইবাদত। মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহর ইবাদত করা। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আমরা মানুষকে অন্য কোনো কাজের জন্য নয়, বরং ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি। (আল জারিয়াত, ৫১ঃ৫৬)। ইবাদতের অন্যতম অর্থ হলো যাবতীয় কাজে আল্লাহর আনুগত্য করে জীবন পরিচালনা করা। প্রতিটি কাজ ইবাদত হলেও কয়েকটি মৌলিক ইবাদত হলো নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজ পালন করা।


প্রতিটি ইবাদতের নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য রয়েছে। যেমন নামাজ হলো অন্যায়, অশ্লীল ও বেহায়াপনা কাজ থেকে বিরত থাকার লক্ষ্যে, রোজা হলো আল্লাহভীতি অর্জন করা, জাকাত হলো মাল ও আত্মার পবিত্রতা সাধন করা, অনুরূপভাবে হজ হলো পবিত্র কাবায় উপস্থিত হয়ে আল্লাহর নিদর্শন দর্শনের মাধ্যমে ঈমানের নবায়ন করা এবং সপ্তাহকালব্যাপী নির্দিষ্ট ছকের কিছু ইবাদত পালনের মধ্য দিয়ে সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে বিরত থাকার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে পাপমুক্ত হওয়া। এ পাপ মুক্তি সম্পর্কে রাসূল সাঃ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ পালন করল এবং সর্বপ্রকার পাপকর্ম, যৌন লালসা ও ফাসেকি কর্ম থেকে ফিরে থাকল সে সদ্যজাত শিশুর মতোই নিষ্পাপ হয়ে ফিরে এলো।’ রাসূল সাঃ-এর এ বাণী অতীব তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ। একজন পাপী আল্লাহর ঘরে হাজিরা দিলেন আর এর বিনিময়ে পাপমুক্ত হয়ে গেলেন­ এমন পাপমুক্ত যেমনটি এই মাত্র ভূমিষ্ঠ হওয়া একটি নবজাতকের মতো­ যার কোনো গুনাহই নেই। ইবাদত হয় শরীর দ্বারা এবং অর্থ দ্বারা। হজের ক্ষেত্রে দু’টোই কার্যকর। হজ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল তা মক্কার ঘর তাতে সন্দেহ নেই। এটা অত্যন্ত পবিত্র, বরকতময় এবং সারাদুনিয়ার জন্য হেদায়েতের কেন্দ্রস্থল। এতে আল্লাহর প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বর্তমান রয়েছে, রয়েছে মাকামে ইবরাহীম এবং যে এখানে প্রবেশ করবে সে-ই নিরাপদে থাকবে।’ (আল ইমরান, ৩ঃ৯৬-৯৭)।


হজ পালনসংক্রান্ত নির্দেশ এসেছে সূরা আল বাকাবার ১৯৬ নম্বর আয়াতে, যাতে বলা হয়েছে, আল্লাহর জন্য হজ ও ওমরা পালন করো... আর এ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস, ঝগড়া-ফাসাদ এবং অপরাপর যেকোনো পাপ কাজ থেকে বিরত থাকো। সূরা আল ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার যার সামর্থø আছে আল্লাহর জন্য হজ করা তার জন্য একটি অনিবার্য দায়িত্ব। মহানবী সাঃ- এ হজের গুরুত্ব ও সুদূরপ্রসারী ফলাফলের বিষয়ে বলেন, যে ব্যক্তি নিছক আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ পালন করল এবং এ ব্যাপারে সব প্রকার লালসা ও ফাসেকি থেকে দূরে থাকল সে সদ্যজাত (নিষ্পাপ) শিশুর মতোই ফিরে এলো। উপরোক্ত বিধানের মূল কথা হলো হজের আইনগত ভিত্তি এবং এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। এর অর্থ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে হজ পালন করা-এর বিনিময়ে পাপমুক্ত হয়ে সুস্থ জিন্দেগি যাপন করা। দু’টো উদ্দেশ্যই অর্জিত না হলে হজের যাবতীয় কার্যক্রমই ব্যর্থ হয়ে যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে (১) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজন নিয়তের পরিশুদ্ধতা­ যার অর্থ হলো জান্নাতপ্রাপ্তি। আর মানুষের দেখানোর জন্য হলে তা হবে নির্ঘাৎ জাহান্নাম। এ ছাড়া হজ কবুলের জন্য আর যা যা প্রয়োজন তা হলো (২) শরীর পাক, (৩) খাদ্য পাক, (৪) পোশাক পাক, (৫) অন্তরাত্মা পাক ও (৬) অর্থ পাক। নিØের হাদিসটি এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল আল্লাহ সাঃ বলেন, আল্লাহতায়ালা হচ্ছেন পবিত্র­ পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু তিনি গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের জন্য তাই নির্দেশ করেন যা তিনি নবীদের জন্য করে থাকেন। তিনি (আল্লাহ) বলেন, হে নবী সাঃ যা কিছু পবিত্র তাই ভক্ষণ করুন এবং সৎ কাজ করুন এবং আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ঈমানদাররা, আল্লাহ, দেয়া রিজিক থেকে হালাল জিনিস ভক্ষণ করো। তারপর তিনি একটি লোকের কথা উল্লেখ করেন যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করেছে যার নজির তার মলিন বদন এবং আলু থালু চুল দেখলেই বোঝা যায়। সে আকাশের দিকে দু’হাত তুলে বলছে (দোয়া করছে) হে আমার প্রভু... অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম। পোশাক পরিচ্ছদ হারাম দ্বারা তৈরি। তার দোয়া কি গ্রহণযোগ্য? (আবু দাউদ) হাদিসটি সুস্পষ্ট। এতে বোঝা যাচ্ছে প্রার্থনাকারী একজন আমলদারি মুসলিম কারণ সফরের ক্লান্তি অবস্থায় সে আল্লাহর আরাধনায় রত। তবে আরাধনা কবুলের জন্য খাদ্য, পানীয়, পোশাক, দেহ যা পবিত্র হওয়া শর্ত তা সে পূরণ করেনি। অতএব, তার দোয়া গ্রহণযোগ্য নয়।


তেমনিভাবে মক্কা-মদিনা জিয়ারতকারী একজন নারী বা পুরুষের জন্যও তা পাক বা হালাল হওয়া পবিত্র। বাঁচার নতুন কোনো উপায় নেই। যে উপায় আল্লাহ ও তার রাসূল সাঃ বলে দিয়েছেন। আর তা হলো রুজি-রোজগার পবিত্র হওয়ার পাশাপাশি একজন ব্যক্তিকে খাঁটি ঈমানদার ও খাঁটি জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করতে হবে। এর সংক্ষিপ্ত অর্থ হলো­ নামাজ-রোজার ক্ষেত্রে শুধু ইসলাম স্বীকার করলে চলবে না, বরং জীবনের সব ক্ষেত্রেই ইসলামকে জানতে হবে ও মানতে হবে এবং তা প্রতিষ্ঠিত না থাকলে তার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিতে হবে। যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রে ইসলাম মানতে হবে। অতীতে তা মানা না হয়ে থাকলে হজের সময়ে অতীতের অপরাধ স্বীকার করতে হবে-এর জন্য অনুশোচনা করতে হবে। অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করে থাকলে, ঋণখেলাপি হয়ে থাকলে তা ফেরত দেয়ার নিয়ত করতে হবে এবং দেশে ফিরে তা দিয়ে দিতে হবে। যার যার মনে কষ্ট দেয়া হয়েছে, কাউকে আহত-নিহত করা হয়েছে। কারো প্রতি বলাৎকার করা হয়েছে­ সবার কাছ থেকে ক্ষমা নিয়ে নিতে হবে। তা করতে পারলে আশা করা যায় হজের প্রকৃত কল্যাণ পাওয়া যেতে পারে। আর তা করতে না পারলে হজের অনুষ্ঠানে যোগদান আর কোনো ইসলামি সমাবেশে যোগদানের মতোই একটা কিছু হতে পারে, এর বেশি নয়। এ ব্যাপারে বারবার যারা হজ করতে যান বারবারই তা ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে আসবে। তা প্রদর্শন ইচ্ছারও শামিল হতে পারে। সবাইকে ধোঁকা দেয়া বা বোকা বানানো সহজ শুধু আল্লাহকে ছাড়া। সব মুসলিম নর-নারীর হজ মহান আল্লাহ কবুল করেন এ প্রত্যাশা কামনা করছি। কেননা একজন হাজী বেগুনাগার মানুষ কোনো জনপদে থাকাটা ওই জনপদের জন্য রহমতস্বরূপ। এ ক্ষেত্রে এজাতীয় হাজী যত বেশি ততই কল্যাণ, ততই মঙ্গল। এমন হাজীর জন্যই রাখা হয়েছে মূলত হজের বিধান।


প্রফেসর ড. এ বি এম মাহবুবুল ইসলাম

ইসলামে পিতার মর্যাদা



ইসলামে পিতার মর্যাদা


সৃষ্টিজগতে মানুষের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রহ প্রদর্শনকারী ব্যক্তি হচ্ছেন পিতামাতা। পিতামাতাই মানুষের সর্বাধিক আপনজন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেন­ “আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণ করার আদেশ দান করেছি, তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছেন এবং অতিকষ্টে তাকে প্রসব করেছেন।” (সূরা আহকাফ, ১৪)


উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ্‌তালা বিশেষভাবে মায়ের গর্ভধারণ কষ্ট প্রসবকালীন কষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন। আর সন্তানদের জন্য পিতামাতার কষ্ট স্বীকার করাকে তারা তার কাছ থেকে সদাচরণ পাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পিতামাতার আনন্দ ও আনুগত্যের ওপরই সন্তানের পার্থিব-অপার্থিব শান্তি, সুখ ও মুক্তি নিহিত। পিতামাতার অবাধ্যতা ক্ষমার অযোগ্য কবিরা গুনাহ। আর এটা সন্তানের পরকালীন দুর্দশার প্রধান কারণ। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাঃ এরশাদ করেন, ‘করুণাময় আল্লাহতায়ালা বান্দার সব গুনাহই ক্ষমা করেন কিন্তু পিতামাতার অবাধ্যতার গুনাহ ক্ষমা করেন না।’ অপর হাদিসে রাসূল সাঃ পিতামাতার অধিকার সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে এরশাদ করেন, ‘তারা উভয়েই তোমার জন্য বেহেশত ও দোজখ।’ ইসলামের দৃষ্টিতে তথা কুরআন-হাদিসের বিধান মতে সন্তানের কাছে মাতাপিতা উভয়ই সমান মর্যাদাবান। কোনো প্রকার পার্থক্য করা যাবে না। তবে অধিকারের ক্ষেত্রে পিতার চেয়ে মাতার অধিকার তিন গুণ বেশি, কিন্তু পরিবারের সবার কর্তা হিসেবে পিতার মর্যাদা ও সম্মান সবার ওপর। সে হিসেবে মাতাকে বাদ দিয়ে পিতার মর্যাদা ভাবার অবকাশ নেই। কুরআন ও হাদিসের যেখানেই মাতাপিতার কথা এসেছে, সেখানেই পিতামাতার কথা একসাথেই আলোচনা করা হয়েছে। এটি সুস্পষ্ট যে রাসূল সাঃ-এর অনেক হাদিসেই মাতাকে পিতার চেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন বলে উল্লেখ করেছেন। কাজেই পিতার আদেশ যদি পালনীয় হয় তবে মাতার আদেশ আরো বেশি গুরুত্বের সাথে পালনীয় হবে। সন্তানের জন্ম থেকে লালন-পালনের ক্ষেত্রে পিতার চেয়ে মাতার কষ্ট সবচেয়ে বেশি।


হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেছেন, মানুষের সর্বোত্তম অনুগ্রহের কাজ হলো, পিতার মৃত্যুর পর তার পিতার বন্ধুদের সাথে সদাচরণ করা। (মুসলিম শরিফ) এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, পিতা যাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছেন তারাও পিতার সমতুল্য সদাচরণের মর্যাদা লাভের অধিকারী। অপর হাদিসে রাসূল সাঃ বলেছেন, প্রতিপালক আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে। (তিরমিজি শরিফ)। তিরমিজির এক হাদিসে পিতাকে বেহেশতের মধ্যবর্তী দরজা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বেহেশতে প্রবেশের উত্তম উপলক্ষ হলো পিতার হক আদায় করা। হাদিসের ইঙ্গিত হলো, পিতামাতার অবাধ্য ব্যক্তির নেক আমল কোনো কাজে আসবে না।

পিতার নির্দেশে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের বিধানঃ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বলেন, ‘আমার বিবাহবন্ধনে এক মহিলা ছিল, আমি তাকে ভালোবাসতাম। অথচ আমার পিতা হজরত ওমর রাঃ তাকে ঘৃণা করতেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি এ মহিলাকে তালাক দিয়ে দাও। আমি অস্বীকার করলাম। তখন আমার পিতা হজরত ওমর রাঃ রাসূল সাঃ-এর কাছে এলেন এবং তাকে ঘটনাটি বললেন। তখন রাসূল সাঃ আমাকে বললেন, তুমি তাকে তালাক দিয়ে দাও। (তিরমিজি, আবু দাউদ) এ ব্যাপারে শরিয়তের বিধান হলো­ পিতামাতা যদি পুত্রবধূর মধ্যে ধর্মীয় কোনো বিধান যেমন ফরজ, ওয়াজিব লঙ্ঘন বা অস্বীকার করতে দেখেন, তাহলে মুত্তাকি পিতামাতার নির্দেশে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করা জায়েজ। কেউ কেউ বলেছেন ওয়াজিব। কিন্তু পিতামাতা যদি ব্যক্তিগত কোনো কারণে বা আক্রোশে তালাক দিতে বলেন, তাহলে পুত্রের জন্য তা পালন করা অপরিহার্য নয়। পিতার প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টিতে তাকানো সওয়াবের কাজঃ রাসূল সাঃ বলেছেন, যখন কোনো সন্তান নিজের পিতামাতার প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখেন, আল্লাহ্‌তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি মকবুল হজের সওয়াব লিপিবদ্ধ করেন। সাহাবায়ে কেরাম রাঃ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি সে দৈনিক একশতবার দৃষ্টিপাত করে? উত্তরে বললেন, হ্যাঁ তারও বিনিময়ে এক শ’ হজের সওয়াব দেয়া হবে। আল্লাহ অতি মহান ও পবিত্র। পিতা সন্তানের জন্য বেহেশত ও দোজখঃ এক ব্যক্তি পিতামাতার হক সম্পর্কে রাসূল সাঃ-এর কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘পিতামাতা হচ্ছে তোমার জান্নাত আর তোমার জাহান্নাম।’ যে সন্তান পিতামাতর হক আদায় করবে, তাদের সেবাযত্ন করবে, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে­ সে সন্তানের জন্য বেহেশত অপরিহার্য। যে সন্তান এর বিপরীত করবে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত।


ডা. শেখ জামিল মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন

সুন্দর ব্যবহার অমূল্য সম্পদ



সুন্দর ব্যবহার অমূল্য সম্পদ

সুন্দর ব্যবহার প্রকান্তরে ইহসান মানব চরিত্রের অমূল্য সম্পদ। কারণ এই ইহসান মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদা দান করে। কাজেই বলার অপেক্ষা রাখে না আমাদের ব্যক্তিগত সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে এর গুরুত্ব কত অপরিসীম। যে মানুষটি তার মিষ্টি ব্যবহার দ্বারা মানুষের মন জয় করে থাকেন আল্লাহতায়ালাও তার ওপর খুবই সন্তুষ্ট হন। কেননা মানবকে সেবা বা তুষ্ট করাই হচ্ছে আল্লাহর প্রিয় বান্দার কাতারে নিজেকে সামিল করা। কুরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ইহসান করো। কেননা আল্লাহতায়ালা ইহসানকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা বাকারাঃ ১৯৫)। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা ইহসানকারীদের সাথে আছেন।’ (আনকাবুতঃ ৬৯)।


ইহসান মূলত আরবি শব্দ। ইসলামের পরিভাষায় ইহসান হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে উত্তমরূপে ইবাদত করা এবং তার সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা। ইহসান হচ্ছে যেকোনো কাজ ভালোভাবে সুচারুরূপে সম্পন্ন করা। যেকোনো কাজের বিভিন্ন পর্যায় বা ধরন থাকে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজটি সারাকে ওই কাজের প্রথম পর্যায় বলে। দ্বিতীয় ধরন বা পর্যায় হচ্ছে কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করা। অর্থাৎ ছুরিতে শান দিয়ে কাজটির নিখুঁত ফিনিশিং টানা।


প্রথম কাজটি করা হলো তাকওয়া বা খোদাভীতির কারণে। একে নেহায়েত আনুগত্যের পর্যায়ে ফেলা যেতে পারে। দ্বিতীয়টির ধরন হচ্ছে ইহসান। এর জন্য নিষ্ঠা, শ্রম ও গভীর ভালোবাসার প্রয়োজন হয়। এ ধরনের কাজ যারা করেন তারা কখনো আত্মপূজারী-স্বার্থবাদী, স্বার্থান্ধ ও পরশ্রীকাতরতার প্রশ্রয় দেন না।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পিতার মৃত্যুর পর সামাজিকভাবে দু’ভাই সমান অবস্থানে উঠল না। একজন লেখাপড়া শিখে বড় চাকরি ধরে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছেন। অন্যজন অশিক্ষিত হওয়ার কারণে অভাব-অনটনে কালাতিপাত করছেন। এমতাবস্থায় যদি বড় ভাই তার পৈত্রিক সম্পত্তি ছোট ভাইকে দিয়ে দেন এবং তাকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন, বড় ভাইয়ের এই মহতী উদ্যোগের কারণে তাকে ‘মুহসিন’ ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে।


প্রতিটি মুহসিন ব্যক্তি মুমিন কিন্তু প্রতিটি মুমিন ব্যক্তি মুহসিন নন। যেমনঃ একজন মুমিন মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহতায়ালার মর্জি মোতাবেক করেন। এর ভেতর কোনো দুর্বলতা বা আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু মুহসিন ব্যক্তির কাজ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার কাজে ও কথায় বিশেষ বিশেষত্ব পরিলক্ষিত হয়। মুহসিন ব্যক্তি মুমিন ও মুসলিমের ন্যায় জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহতায়ালার মর্জি মোতাবেক পালন তো করেনই। উপরন্তু তার প্রতিটি কাজের সৌন্দর্য ও সুচারুতা থাকবে। মুহসিন তিরস্কার, ব্যঙ্গোক্তি, অবজ্ঞা, দাম্ভিকতা, স্বার্থ, অহঙ্কার, কটূক্তি, কুৎসা রচনা করা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা, তুচ্ছজ্ঞান করতে পারেন না।


তিনি কখনো দুরাচার-দুবৃêত্ত-পাপিষ্ট, কদাচার, দুর্বচন, দুর্বাক, দুরুক্তি, দুর্মুখ, দূরভিসন্ধি, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, দুর্বুদ্ধি, দুর্বøবহার, দুশ্চরিত্র ও দুষ্কর্ম ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন না।
এ ধরনের ব্যক্তিত্বের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো­ এরা শিরকমুক্ত জীবনযাপন করেন। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে­ এরা আমলে সালেহ দ্বারা নিজেকে সুশোভিত করেন। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে­ এরা আপসহীন ও সৎসাহসী ব্যক্তিত্বে পরিগণিত হবেন। আল্লাহর কাজে লজ্জা, ভয়, সঙ্কোচ কোনো কিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারে না। শত্রুর শকুনচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি অকুতোভয়ে বলবেন ‘আমি মুসলমান।’

রেহানা ফারুক

সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০০৮

মাতা - পিতার প্রতি কর্তব্য


মাতা - পিতার প্রতি কর্তব্য


শিশু কিশোর বন্ধুরা, তোমরা কি জানো- আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পর এ পৃথিবীতে আমাদেরকে কারা সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন ? তোমরা হয়তো দু'চোখ বন্ধ করে এক মুহূর্তেই বলে দিচ্ছো- কারা আবার! বাবা-মাই তো আমাদেরকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন। হ্যাঁ বন্ধুরা, তোমরা ঠিকই বলেছো। কারণ জন্মের পর থেকেই প্রতিটি বাবা-মা নিজেদের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে সন্তানের সুখ ও নিরাপত্তার জন্য যতটা পেরেশান হয়ে পড়েন অন্য কেউই এমনটি করেন না। সন্তান যেন আদর্শ মানুষ হয় এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয় সেজন্য বাবা-মা শৈশব থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করেন। আর এজন্যই পৃথিবীর সব ধর্মই বাবা-মাকে বিশেষ সম্মান দিয়েছে।
পবিত্র কোরআনের অন্ততঃ পনের জায়গায় পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে। সুরা লোকমানের ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি কেননা তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। আমি আরো নির্দেশ দিয়েছি আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। অন্যদিকে সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ ও ২৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিওনা। তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণভাবে কথা বলো।'
অন্যদিকে রাসূলে খোদা মায়ের মর্যাদা দিতে গিয়ে বলেছেন, জান্নাত মায়ের পদতলে। পিতার মর্যাদা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, পিতার সন্তুষ্টির ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টির ওপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি নির্ভর করে। পিতামাতার সাথে অসৎ আচরণের পরিণাম সম্পর্কে তিনি বলেছেন, সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ কী তা কি আমি তোমাদের জানাব ? তা হচ্ছে- আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা ও পিতা-মাতার সঙ্গে অসদাচরণ। এ প্রসঙ্গে আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, পিতামাতাকে অসম্মান করা বড় ধরণের পাপ।
বন্ধুরা, পিতামাতা দুজনই সন্তানের কাছে মর্যাদাবান হলেও ইসলামে মায়ের মর্যাদা পিতার চেয়েও বেশী দেওয়া হয়েছে। কারণ সন্তানকে লালনপালন করার ক্ষেত্রে মা-ই বেশী ভূমিকা পালন করে থাকেন।
বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো, আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর জন্মের আগেই বাবা এবং মাত্র ছয় বছর বয়সেই মাকে হারান। বাবার স্নেহ ও মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হলেও নবীজি তাঁর দুধমা হালিমাকে মায়ের মতোই ভালোবাসতেন। এ সম্পর্কে এখন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলছি ।
‘রাসূল (সাঃ) একদিন তাঁর সাহাবীদের সাথে আলাপ করছিলেন। এমন সময় এক বৃদ্ধা সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। নবীজি বৃদ্ধাকে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং তাঁর গায়ের চাদরটি মাটিয়ে বিছিয়ে তাকে বসতে দিলেন। তারপর অত্যন্ত দরদ দিয়ে বৃদ্ধার সাথে কথাবার্তা বললেন। বৃদ্ধা চলে গেলে সাহাবীরা বিষ্মিত হয়ে নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন,‘ কে এই মহিলা যার জন্য আপনার এতো দরদ, এতো আন্তরিকতা?' নবীজি উত্তরে বললেন, তিনি আমার দুধমাতা হালিমা। তিনি আরো জানালেন যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পরেই মায়ের স্থান এবং মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের বেহেশত। '
কেবল রাসূল (সাঃ)-ই নন, যুগে যুগে অসংখ্য মানুষ মাতৃভক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তোমরা নিশ্চয়ই ইরানের বিখ্যাত সাধক হযরত বায়েজীদ বোস্তামীর নাম শুনেছো। ইরানের মাজানদারান প্রদেশের বোস্তাম নগরে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। কবি কালিদাস রায় তার ‘মাতৃভক্তি' কবিতায় বায়েজিদ বোস্তামীর মাতৃভক্তির এক বিষ্ময়কর কাহিনী তুলে ধরেছেন। এই কবিতায় আমরা দেখতে পাই- একদিন হযরত বায়েজিদ বোস্তামীর মা হঠাৎ করে রাতে ঘুম থেকে জেগে পানি খেতে চাইলেন। বালক বায়েজিদ দেখলেন, ঘরের কলসিতে পানি নেই। তখনি তিনি ছুটলেন বহু দুরের ঝর্ণা হতে পানি আনতে। পানি নিয়ে এসে দেখলেন, মা এরই মধ্যে ঘুমিয়ে গেছেন। মায়ের ঘুম ভাঙানো অপরাধ হবে ভেবে তিনি সারারাত পানির গ্লাস হাতে মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়ে রইলেন। আর প্রতিক্ষা করতে লাগলেন- কখন মায়ের ঘুম ভাঙবে? এক সময় রাত কেটে গেল। ফজরের আযান হলো। মা জেগে দেখলেন, বায়েজিদ দাঁড়িয়ে আছেন। মায়ের প্রতি ভক্তি দেখে আনন্দে মা কেঁদে ফেললেন। কবি কালিদাসের ভাষায়-কহিল মা, মরি মরি!বাছারে আমার পানি হাতে করে সারা রাত্রটি ধরিদাঁড়াইয়া আছো? ঘুমাওনি আজ? চোখে এলো জল ভরি।
এ ঘটনার পর কান্না ভেজা চোখে মা সেদিন বায়েজিদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আর মায়ের দোয়ার বরকতে হযরত বায়েজিদ বড় হয়ে বিশ্ব বিখ্যাত আউলিয়াদের একজন হয়ে গেলেন।
এতো গেল মানুষের কথা। তোমরা কি জানো-সন্তানের প্রতি মা মাকড়সার আত্মত্যাগের কাহিনী ? মা মাকড়সার ডিম ফুটে যখন বাচ্চা বের হয় তখন তারা ক্ষুধার জ্বালায় মা-মাকড়সার শরীর ঠুকরে ঠুকরে খেতে থাকে। এভাবে খেতে খেতে এক সময় মায়ের পুরো শরীরটাই তারা খেয়ে ফেলে। সকল যন্ত্রণা মা নীরবে সহ্য করে। এভাবে নিজের জীবন দিয়ে তারা সন্তানের জীবন বাঁচায়।বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছে, বাংলা সাহিত্যের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে মায়ের উপস্থিতি। এমন কোন কবি হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি মাকে নিয়ে কবিতা লিখেন নি। বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম লিখেছেন-যেখানেতে দেখি যাহামায়ের মতন আহাএকটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,মায়ের যতন এতআদর সোহাগ সে তোআর কোনখানে কেহ পাইবে না ভাই।
অন্যদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-


মা বুঝি গান গাইতো আমারদোলনা ঠেলে ঠেলেমা গিয়েছে, যেতে যেতেগানটি গেছে ফেলে।
আমাদের সবার উচিত মা-বাবাকে সম্মান করা এবং যাদের মা নেই তাদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। পরিশেষে কবির ভাষায় বলতে চাই-
মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাইইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভূবনে নাই।

মানবাধিকারঃ ইসলাম পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র


মানবাধিকারঃ ইসলাম পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র


মানবাধিকার এর সবিচ্ছেদ হলো মানব+অধিকার বা মানুষের অধিকার। মানুষের সামগ্রিক জীবন পরিচালনার জন্য যে সব মৌলিক অধিকারের উপর একান্ত নির্ভরশীল হতে হয়, যেগুলো ছাড়া মানুষ পৃথিবীতে চলতে বা বাঁচতে পারে না এবং নিজের প্রতিভা, গুণাবলী ও বৃত্তি প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভোগ করতে পারে না সে সবই মানবাধিকার। তা অর্থনৈতিক, সামাজিক অথবা যে কোন বিবেচনায় হোক না কেন। সংক্ষেপে মানুষের চাওয়া পাওয়া এবং পারস্পরিক দায়িত্ব-কর্তব্য ও দেয়া নেয়ার জরমযঃ কে মানবাধিকার বলে। বর্তমানে এটি বহুল আলোচিত বিষয়।পৃথিবী ইসলামী সমাজ ব্যবস্থাকে যতদিন বুকে ধারণ করেছিল, মানবাধিকার বিষয়টির সৎ ব্যবহার পৃথিবী ততদিনই উপভোগ করেছে। এ ছাড়া বিষয়টির অপব্যবহারও কম হয়নি। পৃথিবীর সুবিধাবাদী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী যারা গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা, মানবাধিকারের জিকির করে ফিরে এবং বিশ্বের দেশে দেশে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের ভিন্ন ভিন্ন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার আড়ালে মুলতঃ তারাই সন্ত্রাস করে যাচ্ছে। এবং জোরপূর্বক নিজেদের স্বৈরাতান্ত্রিক ও জুলুমতান্ত্রিক চিন্তাধারা অন্যদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। অপরদিকে মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে গায়ের জোরে পৃথিবীর মানবতার সাথে পাশবিক আচরণ করছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জিকির লোক দেখানো একটা ভাওতাবাজী ছাড়া আর কিছু নয়। মানবাধিকার রক্ষার নামে এ ভাঁওতাবাজী পৃথিবীবাসীর কাছে এখন আর গোপন নেই। ইরাক, আফগানিস্তান এক ধরনের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ভোগ করছে অপরদিকে ফিলিস্তিন কি ধরনের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ভোগ করছে তা বুঝতে কঠিন হওয়ার কথা নয়। ইসলামই মানবতার ধর্ম, হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানবতার প্রকৃত বু, আল কুরআনই মানবতার একমাত্র মুক্তির সনদ। ইসলাম ও সন্ত্রাস শব্দ দু’টি ভাবার্থের দিক থেকে পারস্পরিক সাংঘর্ষিক। ইসলামে সন্ত্রাসের কোন স্থান তো নেই বরং ইসলামের আবির্ভাবই ঘটেছে সকল প্রকার সন্ত্রাস, রাহাজানি, মারামারি, কাটাকাটি, জুলুম-নির্যাতন এক কথায় যাকে আরবিতে ফিতনা বলা হয় তা সমাজ থেকে সমূলে উচ্ছেদ করার জন্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “আর তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাও যতক্ষণ পর্যন্ত না ফিৎনা সম্পূর্ণভাবে মিটে যায় এবং একমাত্র আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা অবশিষ্ট থাকে।” (সূরা বাকারাহঃ ১৯৩)

ইসলামে মানবাধিকারঃ পৃথিবীর সমুদয় সম্পদের একচ্ছত্র মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। মানুষ এর ট্রাস্টি মাত্র। তাই এ সম্পদে সকলের অধিকার সমভাবে স্বীকৃত। আল্লাহ তায়ালা বিশেষ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে এটির ঝড়ষব অমবহঃ হিসাবে নিযুক্তি দেননি। এমনকি যারা মহান প্রভুকে বিশ্বাস করে ও মানে তাদেরকেও না। বরং যারা তাঁকে বিশ্বাস করেনা ও স্বীকৃতি দেয়না তাদেরও সমধিকার রয়েছে। হযরত ইবরাহিম (আ.) যখন মানব জাতির নেতৃত্ব সম্পর্কে আল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন জবাবে বলা হয়েছিল তোমার সন্তানদের মধ্য থেকে একমাত্র মুমিন ও সত্যনিষ্ঠরাই এ পদের অধিকারী হবে। জালেমদেরকে এ অধিকারী করা হবে না। এ ফরমানটি সামনে রেখে তিনি আবার যখন রিযিকের জন্য কেবলমাত্র নিজের মুমিন সন্তান ও বংশধরদের জন্য দোয়া করলেন তখন আল্লাহ জবাবে সঙ্গে সঙ্গে বলে দিলেন যে, সত্যনিষ্ঠ নেতৃত্ব আর রিযিক ও আহার্য এক কথা নয়। দুনিয়ার রিযিক ও আহার্য মুমিন ও কাফের নির্বিশেষে সবাইকে দেয়া হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর স্মরণ কর যখন ইবরাহীম (আ.) দোয়া করলেন- হে আমার রব! এই শহরকে শান্তি ও নিরাপত্তার শহর বানিয়ে দাও। আর এ অধিবাসীদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ ও আখিরাতকে মানবে তাদেরকে সব রকমের ফলের আহার্য দান কর। জবাবে তার রব বললেন, আর যে মানবে না, দুনিয়ার গুটিকয় দিনের জীবনের সামগ্রী আমি তাকেও দিব। কিন্তু সব শেষে তাকে জাহান্নামের আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করবো এবং সেটি নিকৃষ্টতম আবাস।” (সূরা বাকারাঃ ১২৬)
ইসলামের জন্ম পুঁজিবাদ বা সমাজতন্ত্র এর প্রতিক্রিয়ায় হয়নি। বরং ইসলাম ব্যক্তি ও সমাজের স্বার্থকে এক সাথে দেখে। এক দিকে ব্যক্তিকে তার সমৃদ্ধির উৎসাহ দেয়, অন্যদিকে ব্যক্তি সমাজের অংশ হিসাবে সমাজের অন্যদের সুখ ও সমৃদ্ধি সাধনের দায়িত্ব তার উপর অর্পণ করেছে। আর এটিই ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিটি মানুষের মধ্যে দায়িত্ব-কর্তব্যকে জাগিয়ে তোলে।
রাসূল (সা.) বহুবার প্রতিবেশীদের সাথে সৌজন্য প্রদর্শনের উপর গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, “আল্লাহ তায়ালা প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে এত বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন যে, মাঝে মধ্যে আমার মনে হয়েছে প্রতিবেশীদের হয়ত উত্তরাধিকারীর মর্যাদা দেয়া হতে পারে।” একটি সুস্থ সমাজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো ভ্রাতৃত্ববোধ। এটি ছাড়া কখনো একটি সুস্থ-সুশীল সমাজ গঠিত হবে পারে না। আর ইসলামই একমাত্র এ ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে যথোপযুক্ত কর্মসূচি দিয়েছে। মুসলমানদের আল্লাহর পথে দান করার সাধারণ নির্দেশ দিয়ে তাদের অর্থসম্পদে সমগ্র সমাজ ও রাষ্ট্রের অধিকার কায়েম করেছে। এর অর্থ হচ্ছে মুসলমানকে দানশীল, উদার হৃদয়, সহানুভূতিশীল ও মানবদরদী হতে হবে। স্বার্থসিদ্ধির প্রবণতা পরিহার করে নিছক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে প্রতিটি সৎকাজে এবং ইসলাম ও সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ব্যয় করতে হবে। ইসলামী শিক্ষা ও অনুশীলন এবং ইসলামী সমাজব্যবস্থার সামষ্টিক পরিবেশ কায়েমের মাধ্যমে প্রতিটি মুসলমানের মধ্যে এ নৈতিক বল সৃষ্টি করতে চায়। এ ভাবে কোন প্রকার বল প্রয়োগ ছাড়াই হৃদয়ের ঐকান্তিক ইচ্ছায় মানুষ সমাজ কল্যাণে সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করবে। ইসলামী সমাজে মানবাধিকার সুসংহত রাখা প্রত্যেকের অপরিহার্য কর্তব্যরূপে চিহ্নিত হবে। এ ধরনের কর্তব্যবোধ একটি সমাজের সুস্থতার পরিচায়ক। যদি কোন সমাজে এর অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় তবে বুঝতে হবে সেখানকার পরিবেশ বিকৃত হয়ে গেছে। এবং সেখানকার অধিবাসীদের বিশ্বাস ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিক ইবাদাতগুলোর মধ্যে শিথিলতা দেখা দিয়েছে। মুসলমানকে দানশীল, উদার হৃদয়, সহানুভূতিশীল, মানব-দরদী ও পারস্পরিক কল্যাণকামী হিসাবে গড়ে তোলার জন্য তাওহীদসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিক ইবাদতগুলো সামষ্টিকভাবে কাজ করে থাকে।তাওহীদ তথা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস থেকে ভ্রাতৃত্বের মূল্যবোধ উদ্ভূত। প্রত্যেকেই এক আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এ বিশ্বাসী এবং প্রত্যেকেই এক আদাম (আ.) এর বংশদ্ভূত। কাজেই ভ্রাতৃত্ব, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সৌহার্দ ঈমানেরই অঙ্গ। ঈমানের এই ঐক্য মানুষের পার্থিব সকল কার্যকলাপকে সুসংহত এবং মানবাধিকারকে সুনিশ্চিত করে।
নামাযঃ প্রতিদিন নামায ধনী-দরিদ্র, রাজা-ফকির সকলকে একই কাতারে একাকার করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদকে নিশ্চিন্ন করে দিচ্ছে। সকলেই এখানে একই রাজাধিরাজের কাছে ভিক্ষার হাতকে প্রসারিত করে থাকে। যে রাজাধিরাজ কোন ব্যক্তির প্রভাব প্রতিপত্তি, বিশেষ মর্যাদা ও উঁচু নিচুর শ্রেণীবিন্যাস করে না। এবং তাকেও কোনো ব্যক্তি কখনো তার বিশেষ মর্যাদার প্রভাবে প্রভাবিত করতে পারেন না। এভাবে ভ্রাতৃত্বের বন সৃষ্টির জন্য নামাযই এক উপযুক্ত হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে। ভ্রাতৃত্বের এ প্রবল টানে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় সম্পদ বণ্টন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।যাকাতঃ যাকাত সমাজে বিরাজমান ব্যাপক পার্থক্য হ্রাসের একটি কার্যকরী ব্যবস্থা। সমাজের অধিবাসীরা একধারে নৈতিক, কল্যাণকামী এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন পরস্পরের বু। যেমন আল কুরআনের ঘোষণা “ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার স্ত্রীলোকেরাই প্রকৃতপক্ষে পরস্পর পরস্পরের দায়িত্বশীল বা সাহায্যকারী বু। এদের পরিচয় এবং বৈশিষ্ট্য এই যে, এরা নেক কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে, আল্লাহ ও রাসূলের বিধান মেনে চলে। প্রকৃতপক্ষে এদের প্রতিই আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন।” (সূরা তাওবাঃ ৭১) যাকাত মানুষকে দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণের মত অতুলনীয় চরিত্রের অধিকারী হিসাবে গড়ে তুলে।

রোযাঃ রোযাদার নিজে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত হওয়ার দরুন খুব ভাল করেই অনুভব করতে পারেন যে, আল্লাহর গরীব বান্দাহগণ দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্যে কিভাবে দিনাতিপাত করে। তাছাড়া রোযা তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ গঠন করে সামাজিক বনকে সুদৃঢ় করে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) রমযানে অন্যান্য সময় অপেক্ষা অধিক দয়ালু ও সহানুভূতিশীল হতেন। এ সময় কোন প্রার্থী তার দুয়ার হতে বঞ্চিত হতে পারত না।

হজ্বঃ বিশ্বজনিন ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টির এক বিশেষ ট্রেনিং এ হজ্ব। কালো-ধলা, বর্ণ-বৈষম্যহীন এক বিশ্ব গঠনের লক্ষ্যে সকলেই একই পোশাকে মাত্র দু’টুকরো কাপড় পরিধান করে দীন-ভিক্ষুকের ন্যায় আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হয়। এখানেও কোন ব্যক্তি বা দেশের বিশেষ মর্যাদা ও উঁচু নিচুর শ্রেণীবিন্যাস করা হয় না এবং তাঁকেও কোন পরাশক্তি প্রতিপত্তির প্রভাবে প্রভাবিত করতে পারে না। মানবতার বু রাসূল (সাঃ) জীবনের শেষ হজ্ব অনুষ্ঠানে সোনার বাণী শুনিয়েছিলেন যে, “তোমরা সবাই ভাই এবং প্রত্যেকে সমান। তোমাদের কেউ অন্যের উপর বেশি সুবিধা বা মর্যাদা দাবি করতে পারবে না। একজন আরব অনারব থেকে বেশি মর্যাদাশীল নয় এবং একজন অনারবও আরববাসী থেকে অধিক মর্যাদাশীল নয়।” এভাবে হজ্ব ভ্রাত্বত্বের বন সৃষ্টি করে থাকে। হজ্ব মানুষের অধিকারকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশের নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে আন্তর্জাতিক রূপদান করে থাকে।

তাছাড়া আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো। তোমরা ছিলে পরস্পরে শত্রু। তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন। ফলে তার অনুগ্রহ ও মেহেরবাণীতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো। (তোমাদের অবস্থা এমনটি হয়েছিল যে) তোমরা একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলে। আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়েছেন। এভাবে আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তোলেন। হয়ত এ নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের সোজা পথ দেখতে পাবে।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১০৩)ইসলামের আগমনের পূর্বে আরব অধিবাসীরা যে সব ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল, সে দিকে দৃষ্টিপাত করলে একটি বিশৃংখল পরিবেশের চিত্র আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। মানবতা ও মানবাধিকার সেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সামাজিক বন বলতে যা তার কিছুই সেখানে ছিল না। পারস্পরিক শত্রুতা, কথায় কথায় ঝগড়া বিবাদ এবং রাতদিন মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি ও যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে সমগ্র জাতি ধ্বংসের কবলে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। এই আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হওয়া থেকে ইসলামই রক্ষা করেছিল। ইসলামের এ জীবন্ত অবদান তারা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করছিল। তারা ছিল পরস্পরে রক্তপিপাসু। ইসলামের বদৌলতে তারা পরস্পর মিলে একাকার হয়ে গিয়েছিল। এঁদের সম্পর্কে আল্লাহ স্বয়ং বলেছেন, “মোহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। আর যারা তার সাথে আছে তারা কাফেরদের ব্যাপারে বজ্র কঠোর, নিজেরা পরস্পর দয়াপরাবশ।” (সূরা আল ফাতাহঃ ১৯)। হিজরত পরবর্তী আনসার মোহাজিরদের পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতা ও সহমর্মিতা পৃথিবীর ইতিহাসে উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে আছে। সে সমাজের অধিবাসীরা অন্যের অধিকার পালন করে পরম তৃপ্তি লাভ করত। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মদীনা নামক ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান হয়ে ঘোষণা করলেন আজ থেকে অমুসলিমদের জান-মাল আমাদের পবিত্র আমানত। মানবাধিকার বলতে যা বুঝায় এবং এটিকে যে ভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হোক না কেন। ইসলাম ও মানবাধিকার শব্দ দুটি পরস্পরের সহোদরা বলতে পারি। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন মত বা পথে এর নিশ্চিত ব্যবহার হতে পারে না।

পুঁজিবাদে মানবাধিকারঃ ব্যক্তি তার সম্পদের নিরঙ্কুশ মালিক। সে তার সকল উপায়-উপাদান স্বাধীনভাবে ব্যবহার করার সীমাহীন অধিকার ভোগ করে। বৈধ অথবা অবৈধ পথে আয় এবং ব্যয় করার অধিকার তার রয়েছে।তার সম্পদে অন্যের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। অথচ আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে ঘোষণা করেছেন, “তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।” (সূরা আল জারিয়াহ্‌­ ১৯) পুঁজিবাদের সংজ্ঞাতেই মানবাধিকারকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাই আলোচনা এখানেই ইতি টানা যেত। কিন্তু সামনে বাড়তে হচ্ছে এ জন্য যে, পুঁজিবাদ মানুষের অধিকারকে বঞ্চিত করেও তো ক্ষান্ত হয়নি বরং পুঁজিবাদীরা সমাজের নিম্ন আয়ের লোকদের অবশিষ্ট সামান্য সম্পদটুকুও সুদের মাধ্যমে চুম্বকের ন্যায় চুষে নেয়। পুঁজিবাদীদের শোষণের প্রধান হাতিয়ার হলো সুদ। যে সমাজে এ মরণ ব্যাধি সুদ প্রচলিত, সে সমাজের বাহ্যিক রূপ দেখে যতই সুস্থ ও সুন্দর মনে হক না কেন, ভেতরে ভেতরে কাঠ কীট কুরে কুরে সে সমাজটিকে তুষ করে দিচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের আধুনিক রাষ্ট্রগুলো তার সাক্ষী। সে সব সমাজের মানুষগুলোর সামাজিক বন খুব নড়বড়ে। এর প্রধান কারণ হলো সুদ। সুদখোর ব্যক্তি টাকার পিছনে পাগলের মতো ছুটে ভারসাম্যহীন ব্যক্তিতে পরিণত হয়। নিজের স্বার্থপরতার মাত্রা এতটুকু বৃদ্ধি পায় যে, সে তখন পৃথিবীর কোন কিছুই পরোয়া করে না। তার সুদখোরীর কারণে এক পর্যায়ে মানবিক প্রেম-প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতির মাত্রা শূন্যের কোটায় নেমে আসে। তখন সে তার নিজের লোককেও চরম বিপদের সামনে বিনা সুদে ধার দিতে কুণ্ঠাবোধ করে। সুদ তাকে এতটুকু অ করে তুলে যে, জাতীয় সামষ্টিক কল্যাণের উপর কোন ধ্বংসকর প্রভাব পড়লো এবং কত লোক দুরবস্থার স্বীকার হলো এসব বিষয়ে তার কোন মাথাব্যথাই থাকে না। এ ব্যক্তি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মত যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। তাদের এ অবস্থায় উপনীত হওয়ার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলে, ব্যবসা তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।” (সূরা বাকারাঃ ২৭৫)

এ সমাজে ধনী ও গরীবের মধ্যে পাহাড়সম বৈষম্য সৃষ্টি হয় এবং সম্পদ গুটিকয়েক ব্যক্তি বা পরিবারের হাতে কুক্ষিগত হয়। সুদ একটি নিষ্ঠুর জুলুম ছাড়া আর কিছু নয়। ঋণ গ্রহীতা তার শ্রম, মেধা, সময় ব্যয় করে লোকসান করলেও তাতে ঋণদাতার কিছুই যায় আসে না, পূর্বনির্ধারিত হারে সুদ ও আসল তাকে পরিশোধ করতেই হবে। এটি একটি নিদারুণ জুলুম।সমাজতন্ত্রে মানবাধিকারঃ পুঁজিবাদের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট আর এক জুলুমতন্ত্রের নাম সমাজতন্ত্র। যেখানে মানুষের ব্যক্তি মালিকানা খর্ব করে তার সকল উপায়-উপাদান ও যোগ্যতার উপর সামাজিক বা রাষ্ট্রের নিরংকুশ মালিকানা স্থাপন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সমাজতন্ত্র একটা পশুর খোয়াড়ের ন্যয়। পশুর যেমন কোন সহায় সম্পদ থাকে না, থাকে না কোন ব্যাংক ব্যালেন্স, সারাদিন মাঠে ময়দানে শুধুমাত্র পেটের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ভক্ষণ করে আবার খোয়াড়ে ফিরে আসে। এ ধরনের দেশের লোকগুলো তেমনি একটি বড় সাইজের মেশিনের বিভিন্ন কলকব্জার ন্যায় বাকহীন জড় পদার্থ অংশমাত্র। ব্যক্তি নিজের প্রতিভা, গুণাবলী ও বৃত্তি প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভোগ করতে পারে না। স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের কোন ধারণা সমাজতন্ত্রে আছে বলে মনে হয় না।
সুতরাং মানবতার কল্যাণ বা মানুষের অধিকারকে সুসংহত ও সুনিশ্চিত করার জন্য ইসলাম ও কুরআনের সুমহান ছায়াতলে বিশ্ববাসীকে ফিরে আসতে হবে।

লেখকঃ সিনিয়র অফিসার, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি.

শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০০৮

কয়েকটি ইসলামীক ওয়েবসাইট

Quran, Islamic Books & Software
Website Link


Bangla
http://www.banglaquran.com/
http://www.qurantoday.com/
http://listen.to/banglaquran
http://www.banglakitab.com/

Pastu
www.interlog.com/~islam/quran.htm

Albanian
www.iiu.edu.my/deed/quran/albanian/index.html

Indonesian
http://alquran.itb.ac.id/
www.al-islam.com/quran2/Qdefault.asp?l=ind
http://quran.al-islam.com/QdefaultI.htm
www.isnet.org/www_quran/index_quran.html

French
www.orst.edu/groups/msa/quran/index_f.html
http://quran.al-islam.com/Qdefaultf.htm
www.edu.gel.usherb.ca/elmm01/amus/coran.html

Garman
www.orst.edu/groups/msa/quran/index_g.html


Turki
www.geocities.com/SoHo/Cafe/1404
http://amina.com/msa/quran/tr/kuran.html
http://www.bilginet.com/
www.bilginet.com/kuran/1kuran.html
http://quran.al-islam.com/Qdefaultt.htm

Arabic
www.arabia.com/quran
http://quran.al-islam.com/Qdefaulta.htm
http://www.alazhr.org/quran.htm
www.unn.ac.uk/societies/islamic/quran/aeindex.htm

Bosnian
http://bih.org/kuran/index.html
http://web.access.net.au/traveller/sure/sadrzaj.htm

Duch
www.orst.edu/groups/msa/quran/index_d.html
http://quran.al-islam.com/Qdefaultg.htm

English
www.islam.tc/quran
http://oneummah.net/
www.orst.edu/groups/msa/quran/index.html

Italian
www.geocities.com/Athens/Forum/8919/framec.htm
http://www.iper.net/sufism/framec.htm

Sauhili
www.geocities.com/Athens/Parthenon/2355

China
www.glink.net.hk/~hkiya/c_quran.html

Afghani
http://afghanistan.org/quran/index.html

Japans
www.isuramu.net/kuruan/index.html

Malau
www.al-islam.com/quran2/Qdefault.asp?l=mal

Spanish
www.orst.edu/groups/msa/quran/index_s.html

Urdu
http://www.quranweb.com/
http://members.xoom.com/nauman/quran

Mali
http://quran.al-islam.com/Qdefaultm.htm

Thai
http://mis.mua.go.th/~krisna/frame.htm

Russian
www.chat.ru/~leonidv/


Islamic Books & Software
http://www.islaam.com/
http://www.divineislam.co.uk/
http://www.iberr.org/
http://www.islamicfinder.org/
http://www.hudainfo.com/
http://www.jannah.org/
http://www.islamic-knowledge.com/
http://www.muhaddith.org/
http://www.banglakitab.com/
http://www.islamworld.net/
http://www.talkislam.com/
http://www.iad.org/
http://www.islamweb.net/
http://www.islam.com/
http://www.understanding-islam.com/
http://www.islam-guide.com/
http://www.ummah.org.uk/
http://usinfo.state.gov/usa/islamic
http://www.al-islam.org/
http://www.islamfortoday.com/
http://www.islam101.com/
http://www.ummah.com/
http://www.islamicity.com/
http://www.banglakitab.com/
http://www.islamsoft.com/
http://www.al-islam.org/
http://www.al-sunnah.com/
http://www.ummah.net/
http://www.darulnuman.com/
http://www.jannah.org/
http://www.jannah.com/
http://www.muslimsonline.com/
http://www.madressa.net/
http://salam.muslimsonline.com/
www.shaplus.com/free-quran-software
http://www.mughamrat.com/
http://www.timepalette.com/
www.lingoware.com/english
http://www.angelfire.com/
http://www.astrolabepictures.com/
http://www.islamsoft.com/
http://www.baradasoft.com/
http://talkislam.com/
http://www.muhaddith.com/
http://www.aramedia.com/
http://www.cs.bu.edu/
http://www.hf-fak.uib.no/
http://www.hamoislam.com/
http://www.gy.com/
http://www.delta-sw.com/
www2.semo.edu
http://www.internetmuslim.com/
http://www.inminds.com/
http://www.iad.org/
http://www.saudia-online.com/
http://www.beconvinced.com/
http://www.islam.com/
http://www.youngmuslim.com/
http://www.jamals.com/
http://www.arabic2000.com/
http://www.islamasoft.co.uk/
http://www.parexcellence.co.za/
http://www.qurantoday.com/
www.simplyislam.com/sw.asp
http://www.inminds.com/
www.gtitec.com.my/softrade.htm
http://www.harf.com/
http://www.islamicedfoundation.com/
http://www.yildun.com/
http://aramedia.com/
http://admin.muslimsonline.com/
www.mircscripts.com/scripts/6.0/

সিরাতুল মুস্তাকিম


সিরাতুল মুস্তাকিম



কোনো বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে সে বিষয়ে মতামত প্রকাশ করা সমীচীন নয়। তাই যুক্তিবাদীরা মনে করেন অজ্ঞাত ও অস্পষ্ট বিষয়ে মত প্রকাশ করা উচিত নয়।

সুতরাং ধর্মীয় গোঁড়ামি ও চরমপন্থাকে আমাদের ওই পরিপ্রেক্ষিতেই বিচার করতে হবে। এর ভালো বা মন্দ বিচারের আগে এর প্রকৃত তাৎপর্যন্ত জানতে হবে। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন এর বাস্তবতা ও বৈশিষ্ট্যগুলোর বিশ্লেষণ। আক্ষরিক অর্থে, উগ্রতাবাদ বা চরমপন্থার অর্থ হচ্ছে কেন্দ্র থেকে সম্ভাব্য সর্বশেষ প্রান্তে অবস্থান। বাহ্যত, এটা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ, চিন্তাধারা তথা আচার-আচরণের ক্ষেত্রে অনুরূপ দূরত্বে অবস্থানের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে। চরমপন্থার একটি অন্যতম পরিণাম হচ্ছে এটি সমাজকে বিপজ্জনক ও নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়। অথচ ঈমান, ইবাদত, আচার-আচরণ, আইন-বিধি তথা জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলাম মধ্যম সুষমপন্থা অবলম্বনের সুপারিশ করেছে। এটাকেই আল্লাহতায়ালা ‘সিরাতুল মুস্তাকিম’ বা সহজ-সরল পথ বলে উল্লেখ করেছেন। এ পথের একটি সুনির্দিষ্ট ও সু্‌স্পষ্ট বৈশিষ্ট হচ্ছে, এর বিপরীত যত মত-পথ রয়েছে তার অনুসারীরা আল্লাহর গজবে পতিত হয়েছে। মোট কথা, আল্লাহর নির্দেশিত সিরাতুল মুস্তাকিমই হচ্ছে সুপথ আর এর উল্টো পথই হচ্ছে কুপথ বা বিপথ। তাই মধ্যম বা ভারসাম্যময় পন্থা ইসলামের শুধু সাধারণ বৈশিষ্ট্য নয়, বরং এর মধ্যেই ইসলামের মৌলিক পরিচয় নিহিত। এ প্রসঙ্গে কুরআনের ঘোষণাঃ ‘এমনিভাবে আমরা তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী উম্মাহ হিসেবে সৃজন করেছি যাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষী হবে আর রাসূল সাঃ তোমাদের জন্য সাক্ষী হবেন।’ (২ঃ১৪৩)

এ দৃষ্টিতে, মুসলিম উম্মাহ একটি সুবিচারপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ পন্থার পথিক। একইভাবে এই জাতি ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে সরল পথ থেকে মানুষের প্রতিটি বিচ্যুতির বিরুদ্ধে সাক্ষী। ইসলামের এমন কিছু পরিভাষা রয়েছে যাতে মধ্যপন্থা অবলম্বনের এবং সব ধরনের চরমপন্থা ও হঠকারিতা প্রত্যাখ্যান ও পরিহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। যেমন গুলু (বাড়াবাড়ি), তানাতু (উগ্রতা) ও তাশদিদ (কঠোরতা)­ এই পরিভাষাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসলাম বাড়াবাড়িতে শুধু নিরুৎসাহিত করেনি, বরং এর বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। নিØোক্ত হাদিসগুলোতে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

১. ‘ধর্মে বাড়াবাড়ি সম্পর্কে সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী (জাতিগোষ্ঠী) এরূপ বাড়াবাড়ির পরিণামে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।’ (আহমাদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ) এখানে জাতি বলতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জাতিগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। এর মধ্যে আহলে কিতাব বিশেষত খ্রিষ্টানরা উল্লেখযোগ্য। এদের সম্বোধন করে আল-কুরআন বলছেঃ ‘বলুন, হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের দ্বীন সম্বন্ধে অন্যায় বাড়াবাড়ি কোরো না; এবং যে সম্প্রদায় অতীতে বিপথগামী হয়েছে এবং অনেককে বিপথগামী করেছে এবং সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে তাদের স্বেচ্ছাচারিতার অনুসরণ কোরো না।’ (৫ঃ৭৭)

উপরিউক্ত কারণে মুসলমানদের বিপথগামীদের পথ অনুসরণ থেকে বিরত থাকার কঠোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। যারা অন্যের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে প্রকৃতপক্ষে তারাই অধিকতর সুখী। তদুপরি বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন (আল-গুলু) এমন অর্থহীন কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করে যার তাণ্ডব আমাদের অগোচরে বিস্তৃত হয়ে শেষ পর্যন্ত গোটা সমাজদেহকে একটা হুমকির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। হজরত মুহাম্মদ সাঃ বিদায় হজের সময় মুজদালিফায় পৌঁছে হজরত ইবনে আব্বাস রাঃ’কে কিছু প্রস্তরখণ্ড সংগ্রহ করতে বললেন। ইবনে আব্বাস রাঃ কিছু ক্ষুদ্র প্রস্তরখণ্ড সংগ্রহ করে আনলেন। রাসূলুল্লাহ সাঃ পাথরগুলোর আকার দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে বললেন, ‘হ্যাঁ, এই পাথরগুলোর মতোই ধর্মীয় ব্যাপারে বাড়াবাড়ি বা জবরদস্তি থেকে সাবধান।’ (ইমাম আহমাদ, আন-নাসাঈ, ইবনে কাছির ও হাশিম)। এ থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মুসলমানরা যেন অতি উৎসাহী হয়ে বড় পাথর ব্যবহারের মতো বাড়াবাড়িতে প্রবৃত্ত না হয়। ইমাম ইবনে তাইমিয়াও ঈমানের সাথে সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে তথা ইবাদত ও লেনদেনের ব্যাপারে বাড়াড়ির বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস ও আচরণের ব্যাপারে সবচেয়ে সীমালঙ্ঘনকারী জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ পাকও কুরআনুল কারিমে তাদের ভর্ৎসনা করে বলেছেন, ‘ধর্মীয় বিষয়ে তোমরা সীমালঙ্ঘন কোরো না।’ (৪ঃ১৭১)

২. ‘তারা অভিশপ্ত, যারা চুল ফাঁড়তে (অর্থাৎ ক্ষুদ্র বিষয়ে) লিপ্ত এবং রাসূলুল্লাহ সাঃ তিনবার এই কথা উচ্চারণ করলেন।’ (মুসলিম, আহমাদ ও আবু দাউদ) ইমাম আননব্বী বলেন, ‘এখানে ‘চুল ফাঁড়তে’ লিপ্ত ব্যক্তিদের বলতে তাদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যারা কথায় ও কাজে সীমা অতিক্রম করে।’ উল্লিখিত দু’টি হাদিসে স্পষ্টত এ কথাই ব্যক্ত করা হয়েছে যে, বাড়াবাড়ি ও হঠকারিতার পরিণামে মানুষ সম্পূর্ণরূপে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

৩. রাসূলুল্লাহ সাঃ বলতেন, ‘নিজের ওপর এমন অতিরিক্ত বোঝা চাপিও না যাতে তোমার ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তোমাদের পূর্ববর্তী জনগোষ্ঠী নিজেদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে ধ্বংস হয়েছে। তাদের ধ্বংসাবশেষ পুরাতন মঠ-মন্দিরে খুঁজে পাওয়া যায়।’ আবু ইয়ালা তার মসনদে আনাস ইবনে মালিকের বরাতে এবং ইবনে কাছির সূরা হাদিদের ২৭ আয়াতের তাফসিরে এই হাদিস উল্লেখ করেছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ সর্বদা ধর্মীয় বাড়াবাড়ির প্রবণতাকে প্রতিহত করতে চেয়েছেন। তিনি তার সাহাবিদের মধ্যে যাদের ইবাদত-বন্দেগিতে বাড়াবাড়ি করতে দেখেছেন, সংসার-ধর্ম পালনে বিমুখ দেখেছেন তাদের প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছেন। কারণ এ সবই হচ্ছে ইসলামের মধ্যপন্থার পরিপন্থী। ইসলাম দেহ ও আত্মার সুষম বিকাশ চায় অর্থাৎ মানুষের পূর্ণরূপে বেঁচে থাকার অধিকার এবং স্রষ্টাকে উপাসনা করার অধিকারের মধ্যে সমন্বয় চায়। মানুষের অস্তিত্বের যৌক্তিকতা এখানেই। এই আলোকে মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধি এবং ব্যক্তিগতভাবে ও সমষ্টিগতভাবে তার নৈতিক ও বৈষয়িক উৎকর্ষের লক্ষ্যে ইসলাম ইবাদতের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। এভাবে ইসলাম এমন এক সমাজ গড়তে চায় যেখানে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি বিরাজ করবে এবং এটা করতে গিয়ে ইসলাম সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে না। তাই দেখা যায় নামাজ, রোজা ও হজের মতো ফরজ ইবাদতগুলোর একই সাথে ব্যক্তিগত ও সামাজিক ভূমিকা রয়েছে। স্বভাবত এই দায়িত্বগুলো পালন করতে গিয়ে একজন মুসলমান জীবনের মূলস্রোত থেকেও বিচ্ছিন্ন হয় না, আবার সমাজ থেকেও তাকে নির্বাসিত হতে হয় না। বরং ভাবগত, বাস্তব ও উভয় দিক দিয়ে সমাজের সাথে তার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়। এ কারণে ইসলাম বৈরাগ্যবাদকে অনুমোদন করে না। আর বৈরাগ্যবাদ মানে সমাজ থেকে নির্বাসন। সেখানে স্বাভাবিক সামাজিক জীবনের স্পন্দন থাকে না। ইসলাম চায়, এই স্বভাবসম্মত সামাজিক জীবনযাপনের মাধ্যমে মানুষ পবিত্রতা অর্জন করুক। সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে প্রতিটি মানুষ তার অবদান রাখুক। অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে গোটা পৃথিবী মানুষের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্র। তাই সিরাতুল মুস্তাকিমের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ মানুষের প্রতিটি কাজই ইবাদত ও জিহাদ বলে গণ্য করা হয়। ইসলাম অন্যান্য ধর্ম ও দর্শনের মতো মানুষের জৈবিক চাহিদাকে অস্বীকার করে তথাকথিত আধ্যাত্মিক সাধনায় তাকে মোটেও উৎসাহিত করে না। দেহের দাবিকে অস্বীকার বা উপেক্ষা করে আত্মার পরিশুদ্ধির স্থান ইসলামে নেই। এ ব্যাপারে কুরআনের ঘোষণা দ্ব্যর্থহীনঃ ‘হে আল্লাহ, আমাদের ইহকালকে সুন্দর করুন এবং সুন্দর করুন আমাদের পরকালকে।’ (২ঃ ২০১)

হাদিসেও আমরা একই বাণীর প্রতিধ্বনি শুনতে পাইঃ ‘হে আল্লাহ, আমার সব কাজকর্মের হিফাজতকারী ধর্মকে সঠিকরূপে উপস্থাপিত করুন; আমার জাগতিক কর্মকাণ্ডকে পরিশুদ্ধ করুন যেখানে আমি জীবন নির্বাহ করি এবং আমার পরকালীন জীবনকেও পবিত্র করুন এবং সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে আমার জীবনকে প্রাচুর্যের উৎস বানিয়ে দিন এবং সব অপকর্ম থেকে আমাকে রক্ষা করে আমার মৃত্যুকে শান্তির উৎসে পরিণত করুন।’ (মুসলিম)

হাদিসে আরো বলা হয়েছে, ‘তোমার ওপর তোমার দেহের অধিকার রয়েছে।’ (সব প্রামাণ্য সূত্রে সমর্থিত) তদুপরি কুরআনুল কারিমে পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করার প্রবণতা অনুমোদন করা হয়নি বরং এটাকে বান্দার প্রতি আল্লাহর দান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মক্কায় অবতীর্ণ একটি আয়াতে আল্লাহ পাক বলছেনঃ ‘হে আদম সন্তানরা! সুন্দর পরিচ্ছদে ভূষিত হও সব সময় এবং নামাজের স্থানেও। খাও ও পান করো কিন্তু অপচয় কোরো না। আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না।’

‘বলুন, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জীবিকা সৃষ্টির জন্য যেসব শোভন বস্তু এবং বিশুদ্ধ ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন তাকে কে নিষিদ্ধ করেছে?’ (৭ঃ৩২)। মদিনায় অবতীর্ণ একটি সূরায় আল্লাহতায়ালা বিশ্বাসীদের সম্বোধন করে বলছেনঃ ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহতায়ালা যেসব উৎকৃষ্ট বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন তাকে তোমরা হারাম কোরো না এবং সীমালঙ্ঘন কোরো না। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ তোমাদের যে হালাল ও উৎকৃষ্ট জীবিকা দিয়েছেন তা থেকে আহার করো আর আল্লাহকে ভয় করে চলো যাঁর প্রতি তোমরা ঈমান এনেছ।’ (৫ঃ ৮৭-৮৮)

এসব আয়াতে ঈমানদারদের কাছে পবিত্রতা অর্জনের প্রকৃত ইসলামি পথ বাতলে দেয়া হয়েছে এবং অন্যান্য ধর্মে যেসব বাড়াবাড়ি রয়েছে সেরূপ প্রবণতা থেকে মুসলমানদের নিবৃত্ত করা হয়েছে। এই আয়াত দু’টির শানে নুজুলও এখানে লক্ষণীয়। একদল সাহাবি নিজেদের খোজা করে দরবেশ হয়ে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে ব্যক্ত করলে এই আয়াত নাজিল হয়।

ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, ‘একটি লোক রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি যখনই এই গোশতগুলো খাই তখনই আমার কামপ্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তাই আমি গোশত না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ এবং এর পরপরই আয়াত নাজিল হয়। আনাস ইবনে মালিক রাঃ বর্ণনা করেন, ‘একদল লোক নবী সহধর্মিণীদের কাছে এসে রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। এ ব্যাপারে অবহিত হওয়ার পর তারা তাদের ইবাদত-বন্দেগিকে অপর্যাপ্ত বিবেচনা করে একজন বললেন, আমি সর্বদা সারারাত নামাজ পড়ব; আরেকজন বললেন, আমি সারাবছর রোজা রাখব এবং কখনো ভাঙবো না। এ সময় আল্লাহর নবী তাদের কাছে এলেন এবং বললেনঃ আল্লাহর শপথ, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য আমারই সবচেয়ে বেশি এবং তাঁকে বেশি ভয় করি তোমাদের চেয়ে; তথাপি আমি রোজা রাখি এবং ভাঙ্গিও, আমি ঘুমাই এবং নারীকে বিয়ে করি। সুতরাং যে আমার সুন্নাহকে অনুসরণ করে না সে আমার অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’

প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর সুন্নাহর মধ্যেই ইসলামের ধ্যানধারণা এবং তার বাস্তব রূপায়ণের সমগ্র চিত্র ফুটে উঠেছে। এতে আল্লাহর প্রতি, পরিবারের প্রতি, নিজের প্রতি, তথা প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্যের এক সুষম ও সমন্বিত রূপ মূর্ত হয়েছে।


ড. ইউসুফ আল কারজাভি


November 07, 2008



বিজ্ঞানময় কুরআন

বিজ্ঞানময় কুরআন
আমরা কুরআনকে ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই জানি। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে কুরআন কি শুধুই ধর্মগ্রন্থ? না, এই পবিত্র গ্রন্থের মধ্যে লুকায়িত আছে বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন মানুষের কল্যাণে। ফুল-ফলের ভেতর মধু থাকে যা কেউ দেখে না, কিন্তু মধুমক্ষিকা তা আহরণ করে উপহার দেয় মানুষকে মধুরূপে, যেটা হয়ে যায় ওষুধ। রোগের প্রতিকারক। পবিত্র কুরআনের ১৬ নম্বর সূরাটি হলো নাহল বা ÷ঞভপ দপপ’ এই সূরাটির ৬৮-৬৯ আয়াতে বর্ণিত ঘটনার ইঙ্গিত বহন করে। এখানে বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ মধুমক্ষিকাকে আদেশ দিলেন, পর্বতগাত্রে বৃক্ষে এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরি করতে, ফল ভক্ষণ করতে, উন্মুক্ত পথে চলমান হতে, পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানি (মধু) বের করতে যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার। এই আয়াতে আরো বলা হয়েছে, এটা চিন্তশীলদের জন্য নিদর্শন। কুরআনই বিজ্ঞান বিষয়টি চিন্তার ও গবেষণার। কুরআন এসেছে ১ হাজার ৪২৮ বছর আগে আর বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার বিমান সৃষ্টি মাত্র ১৭ ডিসেম্বর ১৯০৩। কুরআন বলে, ‘তারা কি সেই পাখাগুলি দেখে নাই? যাহারা শূন্যমার্গে বশীভূত থাকে আল্লাহ ছাড়া কেহই তাহাদিগকে থামাইতে পারে না। নিশ্চয় এতে বিশ্ববাসীর জন্য নির্দেশাবলি রয়েছে।’ (১৬ঃ ৭৯)। কুরআন আরো বলে, ‘আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যত প্রকার পাখি দু’ডানাযোগে উড়ে বেড়ায় তারা সবাই তোমাদের মতোই একেকটি শ্রেণী, আমি কোনো কিছু লিখতে ছাড়িনি, অতঃপর সবই স্বীয় প্রতিপালকের কাছে সমবেত হবে।’ (৬ঃ৩৮)। ‘তারা কি লক্ষ করে না তাদের মাথার ওপর উড়ন্ত পক্ষীকুলের প্রতি পাখা বিস্তারকারী ও সঙ্কোচনকারী? রহমান আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন, তিনি সর্ব বিষয় দেখেন।’ (৬৭ঃ১৯)। এটাই ছিল সূত্র। জার্মান ইঞ্জিনিয়ার অটো লিলিয়েন থাল চিন্তা ও গবেষণা করলেন ব্যাপারটি নিয়ে। কিভাবে আকাশে ওড়া যায় উড়ন্ত যান নিয়ে, তার প্রচেষ্টায় যান আকাশে উড়লেও নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হতো। একই সূত্র ধরে প্রচেষ্টা চালালেন দুই ভাই অরভিল রাইট ও উইলবার রাইট। আমেরিকার ইন্ডিয়ানা প্রদেশের অধিবাসী ছিলেন তারা। তারা সফল হলেন বিমান আবিষ্কার করতে ১৯০৩ এর ১৭ ডিসেম্বর। বিজ্ঞান কী? মানুষ কি কিছু সৃষ্টি করতে পারে? মানুষ পারে শুধু সৃষ্টি কর্তার প্রদত্ত উপকরণগুলো কাজে লাগিয়ে নতুন একটা কিছু আবিষ্কার করতে। আজকের আবিষ্কার রেডিও, টেলিভিশন বা মোবাইল ফোন। এগুলো হলো লোহা, তামা, দস্তা, সিসা বা র‌্যাং ইত্যাদির সংমিশ্রণে তৈরি একটা যন্ত্র, যার উপাদানগুলো সৃষ্টিকর্তার দেয়া। আর তাঁরই দেয়া বায়ু যার ইঙ্গিত হয়েছে কুরআনেই। তাঁর নির্দেশাবলির মধ্যে একটা এই যে, তিনি সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন। যাতে তিনি তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের আস্বাদন করান এবং যাতে তার নির্দেশে জাহাজগুলো বিচরণ করে এবং যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ তালাশ করো এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (৩০ঃ৪৬)। মধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব বিজ্ঞানের বিশেষ অবদান হিসেবে অভিহিত। এই তত্ত্বের উৎঘাটনকারী স্যার আইজ্যাক নিউটন। কলেজের ছুটির অবকাশে মায়ের কাছে গিয়েছেন। নিউটন দিনের বেশির ভাগ সময়ই বাগানের মধ্যে বসে থাকেন। প্রাণভরে উপভোগ করেন প্রকৃতর রূপ-রস-গন্ধ। এক দিন হঠাৎ সামনে খসে পড়ল একটি আপেল। মুহূর্তে তার মনের কোণে উঁকি মারে এক জিজ্ঞাসা­ কেন আপেলটা আকাশে না উঠে মাটিতে এস পড়ল? এই জিজ্ঞাসাটাই মানুষের চিন্তার জগতে এক যুগান্তর নিয়ে এলো। জন্ম নিলো মধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের ১৬৮৭ সালে। এ বিষয়ে স্যার আইজ্যাক নিউটনকে অনেক প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি জবাবে বলেছিলেন, প্রকৃতপক্ষে বিশ্বপ্রকৃতি এমন সুশৃঙ্খল সু-সামঞ্জস্যভাবে সৃষ্টি হয়েছে। তাতে মনে হয় এর পশ্চাতে কোনো ঐশ্বরিক স্রষ্টা রয়েছেন। (বিশ্বের ১০০ মনীষীর জীবনী মাইকেল এইচ, হাট, সম্পাদনায় এস এম শুভ্রত পৃঃ ৯৪)। ধন্যবাদ জানাই স্যার আইজ্যাক নিউটনকে। তিনি স্রষ্টার সৃষ্টির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। স্রষ্টা এ ব্যাপারে কী বলে দেখা যাক। সূরা মুরসালাত, আয়াত ২৫ ‘আমি কি পৃথিবীকে সৃষ্টি করিনি ধারণকারিণীরূপে? পৃথিবী সব কিছুই তার কেন্দ্রের দিকে টানে Draw together or Receptacle। এটাই হলো মাধ্যকর্ষণ তত্ত্ব, যার ইঙ্গিত রয়েছে কুরআনে।
পৃথিবীর আজকের বিস্ময় ক্লোন। মানুষ থেকে মানুষের সৃষ্টি। তাহলে কি কুরআনের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলল। (নাউজুুবিল্লাহি মিন জালিক)। না তা হতে পারে না। মানুষ থেকে মানুষের সৃষ্টি এটা অসম্ভব নয়। পৃথিবীর দ্বিতীয় মানুষটি (আদমের স্ত্রী হাওয়া) আদম (আঃ) থেকে সৃষ্ট হয়েছিল। এটা তো কুরআনই সাক্ষ্য দেয়। কাজেই এই হেন সৃষ্টি কুরআনের ওপর বিশ্বাস আরো সুদৃঢ় করে। এর ওপর কয়েকটি আয়াত আছে। “আল্লাহই তোমাদিগকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন আর উহা হতেই তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন যেন তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে। স্ত্রীর সাথে অবস্থান করল, স্ত্রী হালকা গর্ভধারণ করল এবং চলাফেরা করল। যখন গর্ভ ভারী হয় তখন উভয়েই প্রভুকে ডেকে বলল যে, ‘প্রভু আমাদিগকে সুসন্তান দিলে আমরা শোকর আদায় করিব।’ (৭ঃ১৮৯)।” কুরআনকে যদি শুধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবে দেখা হয় তবে এই পবিত্র গ্রন্থের সব দিক হদয়ঙ্গম করা হবে না বরং সেগুলো অদৃষ্টে থেকে যাবে। কুরআন খুবই ব্যাপক। কুরআন বলে, ‘আল্লাহ কুরআনে মানুষকে বিভিন্ন উপকার দ্বারা সব রকম বিষয়বস্তু বুঝিয়েছেন (১৭ঃ৮৯)। বিজ্ঞানের উৎস বুঝিয়েছে কুরআন, বিজ্ঞান বলতে পারে আজ ২০০৮ পর্যন্ত অত্র তত্ত্বটি ঠিক। আগামীকাল এটা সঠিক থাকবে তা বলা যায় না। বিজ্ঞান চির সত্য হতে পারে না, কুরআন চির সত্য। এর সত্যতা শেষ দিন পর্যন্ত টিকে থাকবে। যা কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে তা হলো কুরআন গবেষণার ফল। কিন্তু এই গবেষণা আমরা করলাম না, যারা করেছে তারা সফল হয়েছে। যে যে দৃষ্টি নিয়ে তাকাবে সে কুরআনে সেটাই পাবে।
মোঃ আব্দুল জব্বার
November 07, 2008

সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০০৮

পৃথিবী একটি ট্রানজিট স্টেশন

পৃথিবী একটি ট্রানজিট স্টেশন



এম. হায়দার উজ্জামান
আমরা পৃথিবীতে যারা এই মুহ‚র্তে আছি, চোখ বন্ধ করে যদি একবার ভাবি কোথা থেকে আমরা প্রত্যেকে এলাম, বড় হলাম, আবার-কোথায় চলে যাওয়া। কি এক অবাক ব্যাপার, জীবন নিয়ে আমরা একদিন এলাম, এভাবেই আমাদের বংশধররা এসেছেন জীবন কাটিয়েছেন, পৃথিবীর আলো, বাতাস, সম্পদ সম্ভার এর সদ্বব্যবহার অপচয় করে আবার জীবন সায়ান্যে চলে যাওয়া। সে যাত্রা কোথায় কেউ আমরা জানি না। তবে পৃথিবীতে আসবার পর যেতে হবে এর কোন ব্যত্যয় এখনো মানব ইতিহাসে ঘটেনি, ঘটার সম্ভাবনাও নেই। মুরুব্বিদের সামনে যখন এসব তত্ত¡ কথা নিয়ে আলোচনা করতে গেছি সবাই থামিয়ে দিয়েছেÐ একথা বলে যে আলøাহর সৃষ্টি নিয়ে এত মাথা ঘামানো ঠিক না- তাই এ নিয়ে আলোচনার কোন সুযোগ কখনো পাইনি। কিন্তু আমার মনের মাঝে যখন ভেসে ওঠে আমার বাবার কথা, তিনি এক সময় জন্ম নিয়েছিলেন, ছিলেন শিশু, তারপর বড় হওয়া, কত ঘটনা বহুল জীবন এরপর একদিন তিনি চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। আমার জীবদ্দশায় তার সাথে সাÿাতের কোন সুযোগ নাই। তিনি চলে গেছেন এক অসীম ভবিষ্যতের দিকে। তিনি এখন হয়ে গেছেন গত। সামনে যে কোন সময় আমাদের সবার এমনই রা¯Íা বা গন্তব্য। মনের মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করে উত্তর একটাই পেয়েছি, ঠিকানা আমাদের একটিই তা সে আমার, আপনার মার্কিন মূলুকের প্রতাবশালী রাজা জর্জ বুশ আর আমার বাড়ীর কাজের সহযোগী রওশন বা সিরাজ, সকলের অরিজিন আর ডেসটিনেশন এক।
আমার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য, দেনা পাওনা নিয়ে সময়ে সময়ে অনেকেই অনেক ভাল ব্যবহার করেন- আবার চরম দুর্ব্যবহারও করেন-অনেক সময় কষ্ট হয় নিজেকে সামাল দিতে। রাতদিন খাটা-খাটির পর মাঝে মাঝে মনে হয় ছেড়ে দেই সব। অনেকের সাময়িক দাম্ভিকতা, প্রতাপ সকল কিছু দেখে মাঝে মাঝে আমি একা মনে হাসিÐ ভাবনা একটাই, আজব এ দুনিয়া রাজ্য। এ যেন একটি ফ্লাইট তার যাত্রা হয়ত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, পথে দুবাইতে কয়েক ঘন্টার যাত্রা বিরতি- তারপর আবার যাত্রা এবং নিশ্চিত গন্তব্য। তাই বন্ধুদের আর আমার স্ত্রীর সাথে যখন মন খুলে কথা বলি তখন মনের এই অনুভ‚তির কথা বুঝাতে পারি। অনেকেই এসব কথা শুনতে চায় না। তারুণ্য যৌবনের শক্তির বলে, অর্থ বিত্তের প্রভাবে, সাময়িক রাজনৈতিক অবস্থানের দাপটে, অফিসিয়াল অবস্থানের কারণে আমরা সবাই নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় আচরণ করি। হয়ত অনেকের ভাবনায় কখনো আসেই না আমাদের যাত্রা পথ দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে- সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে তীব্র গতিতে। পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ যার একটি আন্দাজ করে হিসেব করলেও দেখা যাবে আমরা কেউই পৃথিবীতে নিজের আয়ুর কত শূন্য শূন্য দশমিক সময় এখানে থাকছি- আর সবার জন্য নির্ধারিত স্থানে ছিলাম আর থাকব নিরানব্বই দশমিক নিরানব্বই শূন্য শূন্য অংশ সময়। কি আশ্চর্যভাবে আলøাহ পাক এই দুনিয়া তৈরী করেছেন। অথচ আমরা সামান্য সময়ের জন্য এখানে এসে কত হিংসা বিদ্বেষ, হানাহানি, কাটাকাটি, অবজ্ঞা, পাপ, ভুল, অন্যায়, জবর দখল, কত কি যে করছি। আমার হাসি পায় মনে মনে। আমি জানি আমার এই লেখা পড়ে অনেক পাঠক আমাকে গালি দেবেন। তারপরও আমি বলব পৃথিবীর সকলের পারমানেন্ট ঠিকানা যখন একটাই, কারণ যে যে ধর্মেরই হোক দেহাবশেষ এই মাটিতে স্থান করে নেয়, তাই মাটিই আমাদের ঠিকানা। সেখানে যাবার আগে যতদিন পৃথিবী নামক ট্রানজিট পয়েন্টে যতÿণ আমরা থাকব চলুন না একটু সুন্দর করেই সকল নেগেটিভের উপরে উঠে কাটাই। আর আমাদের পরবর্তী জেনারেশনকেও সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য উদ্বুদ্ধ করি, কারণ ট্রানজিট লাউঞ্জে বেশি সময় থাকা যায় না, চলে যেতে হবেই। পৃথিবী একটি ট্রানজিট স্টেশন

ইসলামী সমাজে অমুসলিমদের মর্যাদা

ইসলামী সমাজে অমুসলিমদের মর্যাদা



এ এম জিয়া হাবীব আহসান
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর প্রতিষ্ঠিত মদিনাকেন্দ্রিক ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্খা ছিল একটি মৌলিক নাগরিক অধিকারপূর্ণ সাম্যের সমাজ। প্রেমের নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রদর্শিত জীবনব্যবস্খার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মহাত্মা গাìধী বলেছিলেন, ‘প্রতীচ্য যখন অìধকারে নিমজ্জিত, প্রাচ্যের আকাশে তখন উদিত হলো এক উজ্জ্বল নক্ষত্রও এবং আর্ত পৃথিবীকে তা দিল আলো ও স্বস্তি। ইসলাম একটি মিথ্যা ধর্ম নয়। শ্রদ্ধার সাথে হিন্দুরা তা অধ্যয়ন করুক, তাহলে আমার মতোই তারা একে ভালোবাসবে।’ মহানবী সা: বলেছেন, ‘কোনো অমুসলিম নাগরিককে যে অত্যাচার করল বা তার অধিকার ক্ষুণí করল বা তাকে সাধ্যাতীত পরিশ্রম করাল বা তার অমতে তার থেকে কিছু নিল কেয়ামতের দিন আমি হবো তার বিপক্ষে মামলা দায়েরকারী।’ তিনি আরো বলেন, ‘যে কোনো অমুসলিম নাগরিককে কষ্ট দিলো আমি তার পক্ষে বাদি হব। আর আমি যার বিরুদ্ধে বাদি হব কিয়ামতের দিনে আমি হব বিজয়ী।’ তিনি অন্যত্র বলেন, ‘যে সংখ্যালঘুকে উত্ত্যক্ত করল সে আমাকে উত্ত্যক্ত করল, আর যে আমাকে উত্ত্যক্ত করল আল্লাহকেই সে উত্ত্যক্ত করল।’ অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করা সম্পর্কে রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে কোনো সংখ্যালঘুকে হত্যা করবে সে বেহেশতের ঘ্রাণও ভোগ করতে পারবে না। অথচ বেহেশতের সুঘ্রাণ ৪০ বছরের দূরত্ব হতেও অনুভব করা যাবে।’ (অমুসলিমের প্রতি ইসলামের উদারতা- ডা. ইউসুফ আল কারজাভি- অনুবাদক, মাহমুদুল হাসান- পৃ: ২১-২২)। বিশ্বমানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ সা: সুস্পষ্ট ভাষায় অমুসলিমদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য ঘোষণা দিয়েছেন, ‘তাদের রক্ত আমাদের রক্তের মতো এবং তাদের ধনসম্পদ আমাদের ধনসম্পদের মতো।’ অমুসলিমদের জানমাল মুসলমানদের নিজের জানমালের মতো পবিত্র ও নিরাপত্তাযোগ্য। মহানবী সা: একদিন মসজিদে নববীতে কিছু সাথীকে নিয়ে আলোচনায় মশগুল ছিলেন। এমন সময় একজন বেদুইন এসে মসজিদের ভেতরে এক কোণে প্রস্রাব করেছিল। রাসূল সা:-এর সাথীরা ওকে প্রহার করতে উদ্যত হলে মহানবী সা: তাদের নিবৃত্ত করলেন। প্রস্রাব করা শেষ হলে শান্তির দূত মুহাম্মদ সা: তাকে বুঝিয়ে বললেন, ‘ওটা মুসলমানদের ইবাদতখানা, প্রস্রাবের স্খান নয়।’ এ বলে তিনি তাকে বিদায় দিয়ে সাথীদের নিয়ে মসজিদের প্রস্রাব ধুয়ে দিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বয়ং কুরআনে বলেছেন, ‘তোমার ধর্মের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেনি, তোমার বসতি থেকে তোমাকে উচ্ছেদ করেনি, তাদের প্রতি তোমার দয়ালু হওয়া উচিত এবং তাদের সাথে ন্যায়ানুগ আচরণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায় ভালোবাসেন।’ (৬০:৮)। অন্যের উপাসনাস্খল ভেঙে ফেলার অনুমতি ইসলাম দেয়নি। হজরত উমর ইবনে আবদুল আজিজের শাসনামলের আগে খ্রিষ্টানদের একটি গির্জা ভেঙে মুসলমানরা মসজিদ বানিয়েছিলেন। ওমর রা: খলিফা হলে চারদিকে তার ন্যায়পরায়ণতার কথা ছড়িয়ে পড়ে। খ্রিষ্টানরা সুযোগ বুঝে তাদের গির্জা ভেঙে মসজিদ করার অভিযোগ দায়ের করল। খলিফা ওই প্রদেশের গভর্নরকে তৎক্ষণাৎ এক ফরমান পাঠিয়ে খ্রিষ্টানদের গির্জা যেমনটি ছিল ঠিক তেমনিভাবে তৈরি করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। মুসলিম নেতৃস্খানীয় ব্যক্তিদের বহু অনুনয় বিনয় সত্ত্বেও খলিফা তার নির্দেশের বিষয়ে অটল থাকলেন। এটাই হলো ইসলাম। দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর রা:-এর খেলাফতকালে যখন মিসরের শাসনকর্তা হিসেবে হজরত আমর ইবনুল আ’স রা: দায়িত্ব পালন করছিলেন, সে সময় একদিন আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রিষ্টান পল্লীতে হইচই পড়ে গেল। কেউ একজন যিশু খ্রিষ্টের প্রস্তর নির্মিত মূর্তির নাক ভেঙে ফেলেছে। খ্রিষ্টানরা ধরে নিল যে এটা মুসলমানদের কাজ। তারা উত্তেজিত হয়ে উঠল। খ্রিষ্টান বিশপ অভিযোগ নিয়ে এলেন আমর ইবনুল আ’স-এর কাছে। আমর শুনে অত্যন্ত দু:খিত হলেন। তিনি ক্ষতিপূরণস্বরূপ মূর্তিটি নতুনভাবে তৈরি করে দিতে চাইলেন। কিন্তু খ্রিষ্টান নেতাদের প্রতিশোধ স্পৃহা ছিল অন্যরকম। তারা চাইল মুহাম্মদ সা:-এর মূর্তি তৈরি করে অনুরূপভাবে নাক ভেঙে দিতে। হজরত আমর কিছুক্ষণ নীরব থেকে খ্রিষ্টান বিশপকে বললেন, ‘আমার অনুরোধ, এ প্রস্তাব ছাড়া অন্য যেকোনো প্রস্তাব করুন আমি রাজি আছি। আমাদের যেকোনো একজনের নাক কেটে আমি আপনাদের দিতে প্রস্তুত, যার নাক আপনারা চান।’ খ্রিষ্টান নেতারা সবাই এ প্রস্তাবে সম্মত হলো। পরদিন খ্রিষ্টান ও মুসলমান বিরাট এক ময়দানে জমায়েত হলো। মিসরের শাসক সেনাপতি আমর রা: সবার সামনে হাজির হয়ে বিশপকে বললেন, ‘এ দেশ শাসনের দায়িত্ব আমার। যে অপমান আজ আপনাদের, তাতে আমার শাসনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই তরবারি গ্রহণ করুন এবং আপনিই আমার নাসিকা ছেদন করুন।’ এ কথা বলেই বিশপকে একখানি তীক্ষî ধারালো তরবারি হাতে দিলেন, জনতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, খ্রিষ্টানরা স্তম্ভিত। চারদিকে থমথমে ভাব। সে নীরবতায় নি:শ্বাসের শব্দ করতেও যেন ভয় হয়। সহসা সেই নীরবতা ভঙ্গ করে একজন মুসলিম সৈন্য এগিয়ে এলো। চিৎকার করে বলল, ‘আমিই দোষী, সিপাহসালার কোনো অপরাধ নেই। আমিই মূর্তির নাক ভেঙেছি। এইত আমার হাতেই আছে। তবে মূর্তি ভাঙার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। মূর্তির মাথায় বসা একটি পাখির দিকে তীর নিক্ষেপ করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’ সৈন্যটি এগিয়ে এসে বিশপের তরবারির নিচে নাসিকা পেতে দিল। স্তম্ভিত বিশপ! নির্বাক সবাই। বিশপের অন্তরাত্মা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল। তরবারি ছুড়ে বিশপ বললেন, ‘ধন্য সেনাপতি, ধন্য হে বীর সৈনিক, আর ধন্য আপনাদের মুহাম্মদ সা:, যার মহান আদর্শে আপনাদের মতো মহৎ উদার নির্ভিক ও শক্তিমান ব্যক্তি গড়ে উঠেছে। যিশু খ্রিষ্টের প্রতিমূর্তিই অসম্মান করা হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার চেয়েও অন্যায় হবে যদি অঙ্গহানি করি। সেই মহান ও আদর্শ নবীকেও আমার সালাম জানাই।’ পরধর্ম সহিষäুতার এ জ্বলন্ত উদাহরণ আজো বিশ্ববাসীকে হতবাক করে। দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমরের সময়ে বকর বিন ওযাইল গোত্রের একজন লোক হিরার একজন অমুসলিমকে হত্যা করেছিল। নিহত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনের হাতে হত্যাকারীকে দিয়ে দেয়ার জন্য খলিফা ওমর নির্দেশ দিলেন এবং তা করা হলো। নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা হত্যাকারীকে হত্যা করে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। তৃতীয় খলিফা ওসমানের শাসনামলে হজরত ওমরের এক পুত্র হরমুজান নামক জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করে। খলিফা ওসমানের নির্দেশে তাকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। চতুর্থ খলিফা হজরত আলীর শাসনামলে একজন অমুসলিম ব্যক্তিকে হত্যার জন্য একজন মুসলমান অভিযুক্ত হয়। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর তার প্রাণদণ্ডের নির্দেশ হয়। ইত্যবসরে নিহত ব্যক্তির ভাই এসে জানাল, সে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছে। হজরত আলী প্রশ্ন করলেন, ‘তারা কি তোমাকে চোখ রাঙ্গিয়েছে? হুমকি দিয়েছে? এ জন্যই তুমি বাধ্য হয়ে ক্ষমা করে দিচ্ছ?’ উত্তরে লোকটি বলল, না, ‘হত্যাটি ছিল অনিচ্ছাকৃত এবং তারা এর রক্তপণ দিয়ে দিয়েছে। এতেই আমি রাজি।’ তখনই শুধু হজরত আলী অভিযুক্তকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, ‘যারা আমাদের নিরাপত্তায় থাকবে, তাদের রক্ত আমাদের রক্তের মতোই পবিত্র এবং তাদের অর্থসম্পত্তি আমাদের অর্থসম্পদের মতোই নিরাপদ।’ ইসলামে সুবিচার ও আইনের শাসনের এ ধরনের দৃষ্টান্ত আরো রয়েছে। পরে যখন ইসলামী সমাজের অধ:পতন ঘটেছিল, তখনো ইসলামী সুবিচারের অতুলনীয় দৃষ্টান্তের অভাব দৃষ্ট হয় না। একজন হিন্দু প্রজা সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে কাজীর আদালতে মামলা দায়ের করেন। রাজ্যের একচ্ছত্র সুলতান মাহমুদ একজন প্রজার অভিযোগের জবাব দানের জন্য কাজীর সামনে আদালতে হাজির হন। শেরাশাহ সুরী একজন ব্যবসায়ীর সাথে অসদাচরণ করার জন্য তার ছেলেকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব একজন অমুসলিম মহিলার অবমাননার অপরাধে তার প্রধানমন্ত্রী আসাদ খানের পুত্র মির্জা তাফাখুরকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। মুসলমানদের সুবিচারের কারণেই অমুসলিমরা তাদের স্বধর্মের শাসকদের চেয়ে মুসলিম শাসকদের অধীনে বাস করতে অধিকতর পছন্দ করত : ঞ.ড. অড়ষসলন তার 'চড়পথধভমষব সফ ওঢ়লথশ' গ্রন্থে লিখেছেন­ ‘যখন মুসলিম সৈন্য জর্দান উপত্যাকায় পৌঁছে এবং মুসলিম সেনাপতি আবু ওবায়দা ফি বলে তার শিবির স্খাপন করেন, দেশের খ্রিষ্টান জনসাধারণ আরবদের লিখেন, ‘হে মুসলমানগণ, বাইজান্টাইনদের চেয়ে আমরা আপনাদের পছন্দ করি। তারা আমাদের স্বধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও আমাদের সহায় সম্পদ হরণ করেছে এবং আমাদের করেছে গৃহহারা। আর আপনারা এনেছেন আমাদের জন্য নিশ্চিত নিরাপত্তার আশ্বাস এবং আমাদের ওপর আপনাদের শাসন তাদের চেয়ে অনেক ভালো।’ এমিসা নগরীর অধিবাসীরা তাদের নগরের দরজা হেরাক্লিয়াসের খ্রিষ্টান সেনাবাহিনীর মুখের সামনে বìধ করে দিয়েছিল এবং মুসলমানদের জানিয়েছিল যে, এমিসা নগরীর অধিবাসীরা গ্রিকদের অবিচার ও অত্যাচারের চেয়ে মুসলমানদের শাসন ও সুবিচারকে অধিকতর পছন্দ করে।’ ইসলামী সমাজে অমুসলিমদের জীবনযাত্রা, ধন, প্রাণের নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা মুসলিম নাগরিকদের সমতুল্য। এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নায়ক মহানবী সা: এর মহানুভব অসাম্প্রদায়িক মতাদর্শের অনুসারীদের আরো কিছু ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত­ হজরত আলী রা:-এর খেলাফতকালে জনৈক মুসলিম কর্তৃক একজন ‘জিম্মি’ নিহত হয়। হজরত আততায়ী মুসলমানের প্রাণদণ্ডের আদেশ দেন। হজরত আলী রা: সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, ‘আমরা যাদের জিম্মা বা দায়িত্ব নিয়েছি, তাদের রক্ত আমাদের রক্ততুল্য। উমাইয়া বংশের প্রবল প্রতাপান্বিত খলিফা হিশাম ইবনে আবদুল মালিকের বিরুদ্ধে জনৈক খ্রিষ্টান নাগরিক হজরত উমর ইবনে আবদুল আজিজের আদালতে অভিযোগ উথাপন করে। অভিযোগ সম্বìেধ নিজের বক্তব্য পেশ করার জন্য নির্দিষ্ট আদালতে হাজির হওয়ার জন্য খলিফাকে নির্দেশ দেয়া হয়। একজন সাধারণ লোকের অভিযোগের উত্তরে সাধারণেরই মতো আদালতে হাজির হতে আরো পাঁচজনের মতো আসামির নির্দিষ্ট আসনে দাঁড়াতে ও জবাবদিহি করতে খলিফা সঙ্কোচ করেন। তাই তিনি উকিল নিযুক্ত করতে চান। কিন্তু ওমর তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘তোমার নিজেকে হাজির হতে হবে, নিজেকেই বলতে হবে নিজের কথা।’ অগত্যা তাকে আদালতে হাজির হতে হয়। বিচারে খলিফা হিশামের বিরুদ্ধে ডিক্রি প্রদান করা হয়। মুসলিম সেনাবাহিনী সিরিয়ায় জনৈক অমুসলিম চাষির ফসল নষ্ট করেছে বলে সে খলিফা উমর রা:-কে জানায়। ক্ষতিপূরণস্বরূপ খলিফা তাকে ১০ সহস্র মুদ্রা প্রদান করেন। ইসলাম কোনো ধর্মীয় উন্মাদনা, বিদ্বেষ কিংবা পরমৎ অসহিষäুতার নাম নয়। ইসলাম মানবতা, মনুষ্যত্ব, সাম্য ও শুভেচ্ছার নাম। ইসলামের আবেদন দেশ-কাল-বর্ণভাষা কিংবা গোত্রের সীমানায় আবদ্ধ নয়। এর প্রীতি সার্বজনীন ও শাশ্বত। মানবতা যেখানে বিধ্বস্ত, ইসলাম সেখানে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা নিয়ে হাজির হয়েছে। কুরআনের ভাষায়, ‘মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বা জীব।’ এ জন্যই বেলাল রা:-এর মতো নির্যাতিত কালো মানুষরাও দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে সমবেত হয়েছিলেন। ধর্মের নামে সব অধর্মের বিরুদ্ধে ইসলামই প্রথম সোচ্চার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। তাই বলা হয়, একজন মুসলমান মুমিন হতে পারে, ধর্মাìধ হতে পারে না।