রোগীর সেবা শ্রেষ্ঠ ইবাদত
প্রত্যেক ধর্মেই রোগীর সেবা করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। আর বিনিময় হিসেবে বড় ধরনের পুণ্য কিংবা প্রতিদানেরও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ইসলাম ধর্মে নফল ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে বড় পুণ্য হলো মানুষের উপকার করা। আর সবচেয়ে জঘন্য পাপ হলো অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে কষ্ট দেয়া। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, কেউ যদি কোনো মানুষের একটু উপকার করে কিংবা চলার পথে কোনো পথচারীর কষ্ট হবে ভেবে পথের ওপর থেকে একটি কাঁটা বা কষ্টদায়ক এক টুকরো বস্তু উঠিয়ে নিয়ে দূরে ফেলে দেয় তাহলে ওই ব্যক্তি মসজিদে বসে ১০ বছর এতেকাফ করার চেয়েও উত্তম নেকি পাবে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে রোগীর সেবাও যে একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত সেটি সহজেই অনুমেয়। হাদিসের আলোকে দেখা যায়, একজন মুসলমানের আরেক মুসলমানের কাছে যে ছয়টি হক রয়েছে তার মাঝে প্রথম এবং প্রধান হক হলো রোগ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। সাধ্যমতো সেবা শুশ্রূষা করা। এটি রোগীর প্রতি দয়া নয় বরং রোগীর হক আদায় করা। আল্লাহ হয়তো বা আল্লাহর হকের জন্য তাঁর বান্দাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। কিন্তু বান্দার হকের জন্য তাঁর বান্দা ক্ষমা না করলে তা কখনো আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।
রোগীর সেবা কখনো কখনো নফলের চেয়েও বড় নফল, সুন্নতের চেয়েও বড় সুন্নত, এমনকি ফরজের চেয়েও বড় ফরজ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ইসলামী বিধান মতে, কোনো ব্যক্তি নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর যদি পাশে কোনো রোগীর হঠাৎ রোগ বেড়ে গিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মৃত্যুমুখে উপনীত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তখন ওই নামাজির ফরজ নামাজও ভেঙে ফেলে ওই রোগীর জান বাঁচানো নামাজের চেয়েও বড় ফরজ হয়ে দাঁড়াবে। ইবাদতের নিয়তে তথা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো রোগীকে প্রয়োজনে মাত্র একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিয়েও কিংবা শুধু একটু সান্ত্বনার বাণী শুনিয়েও আমরা অনেক বড় ধরনের পুণ্য অর্জন করতে পারি। এ ব্যাপারে প্রচুর হাদিস রয়েছে।
এখানে শুধু একটি হাদিস উল্লেখ করছি। সেটি হলো হজরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, ‘যে মুসলমান কোনো অসুস্থ মুসলমানকে সকালে দেখতে যায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন এবং জান্নাতে সে একটি বাগান পায়।’ (তিরমিজি)। এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমাদের ডাক্তাররা তো টাকার বিনিময়ে রোগী দেখেন। তাহলে তারাও কি রোগী দেখার ফলে ফেরেশতাদের তেমন দোয়া এবং পরলোকে জান্নাত লাভের আশা করতে পারেন? জবাবে বলব, অবশ্যই। তবে শর্ত হলো রোগী দেখার সময় শুধু ইবাদতের নিয়তে তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে রোগীকে দেখতে হবে। একজন ডাক্তার ইবাদতের নিয়তে রোগী দেখলে তিনি কমপক্ষে তিন দিক থেকে লাভবান হবেন। যেমন- প্রথমত, ইবাদতের নিয়তে রোগী দেখার সময় টাকার কথা ভুলে থাকার ফলে চিকিৎসা সেবাটা যথাযথ হয় বলে তাদের টাকা খুঁজতে হয় না বরং টাকাই তাদের খুঁজে বেড়ায়। দ্বিতীয়ত, যতবার যতটা রোগী দেখেন ফেরেশতার সংখ্যাটাও ততবার বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে লাখ-কোটি ফেরেশতার পক্ষ থেকে দোয়া লাভ করতে থাকেন। তৃতীয়ত, পরকালে বেহেশত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেন।
আর যারা ইবাদতের নিয়তে অর্থাৎ প্রকৃত সেবা মনোবৃত্তির পরিবর্তে শুধু টাকার চিন্তা মাথায় নিয়ে রোগী দেখেন তাদের চিকিৎসাসেবার মানটাও ভালো হয় না। ফলে তারা সব দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। তাদেরকে দুর্ভাগা বললেও বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না। কোনো রোগী যদি কোনো ডাক্তারের ব্যবহার এবং চিকিৎসাসেবায় মুগ্ধ হয়ে ওই ডাক্তারের জন্য নেক দোয়া করেন, তাহলে ওই দোয়া সাথে সাথেই কবুল হয়ে যায়।
পক্ষান্তরে কোনো রোগী যদি কোনো ডাক্তারের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে এ ডাক্তারের জন্য বদদোয়া করেন তাও সাথে সাথেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। কারণ হাদিস শরিফে (ইবনে মাজাহ) এসেছে, আল্লাহর দরবারে রোগীর দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতো কবুল হয়ে যায়। এ ছাড়া হাদিস শরিফ প্রমাণ দেয়, যারা রোগীর সেবা করল তারা আল্লাহর সেবা করল। যারা রোগীকে অবহেলা করল তারা আল্লাহকে অবহেলা করল। আর রোগীর প্রতি অবহেলা করার কারণে শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদেরকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। এ প্রসঙ্গে কবি আবদুল কাদিরের ‘মানুষ’ কবিতার প্রথম প্যারাটি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। কবির ভাষায় ‘হাশরের দিন বলিবেন খোদা- হে আদম সন্তান/ তুমি মোরে সেবা কর নাই যবে ছিনু রোগে অজ্ঞান।/ মানুষ বলিবে- তুমি প্রভু করতার,/ আমরা কেমনে লইব তোমার পরিচর্যার ভার?/ বলিবেন খোদা- দেখনি মানুষ কেঁদেছে রোগের ঘোরে,/ তারি শুশ্রূষা করিলে তুমি যে সেখায় পাইতে মোরে...।’
অতএব, চিকিৎসক সমাজসহ আমাদের সবার মনেই শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
জয়নাল আবেদীন পাঠান
লেখকঃ লেখক ও গবেষক
প্রত্যেক ধর্মেই রোগীর সেবা করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। আর বিনিময় হিসেবে বড় ধরনের পুণ্য কিংবা প্রতিদানেরও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ইসলাম ধর্মে নফল ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে বড় পুণ্য হলো মানুষের উপকার করা। আর সবচেয়ে জঘন্য পাপ হলো অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে কষ্ট দেয়া। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, কেউ যদি কোনো মানুষের একটু উপকার করে কিংবা চলার পথে কোনো পথচারীর কষ্ট হবে ভেবে পথের ওপর থেকে একটি কাঁটা বা কষ্টদায়ক এক টুকরো বস্তু উঠিয়ে নিয়ে দূরে ফেলে দেয় তাহলে ওই ব্যক্তি মসজিদে বসে ১০ বছর এতেকাফ করার চেয়েও উত্তম নেকি পাবে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে রোগীর সেবাও যে একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত সেটি সহজেই অনুমেয়। হাদিসের আলোকে দেখা যায়, একজন মুসলমানের আরেক মুসলমানের কাছে যে ছয়টি হক রয়েছে তার মাঝে প্রথম এবং প্রধান হক হলো রোগ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। সাধ্যমতো সেবা শুশ্রূষা করা। এটি রোগীর প্রতি দয়া নয় বরং রোগীর হক আদায় করা। আল্লাহ হয়তো বা আল্লাহর হকের জন্য তাঁর বান্দাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। কিন্তু বান্দার হকের জন্য তাঁর বান্দা ক্ষমা না করলে তা কখনো আল্লাহ ক্ষমা করবেন না।
রোগীর সেবা কখনো কখনো নফলের চেয়েও বড় নফল, সুন্নতের চেয়েও বড় সুন্নত, এমনকি ফরজের চেয়েও বড় ফরজ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ইসলামী বিধান মতে, কোনো ব্যক্তি নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর যদি পাশে কোনো রোগীর হঠাৎ রোগ বেড়ে গিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মৃত্যুমুখে উপনীত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তখন ওই নামাজির ফরজ নামাজও ভেঙে ফেলে ওই রোগীর জান বাঁচানো নামাজের চেয়েও বড় ফরজ হয়ে দাঁড়াবে। ইবাদতের নিয়তে তথা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো রোগীকে প্রয়োজনে মাত্র একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিয়েও কিংবা শুধু একটু সান্ত্বনার বাণী শুনিয়েও আমরা অনেক বড় ধরনের পুণ্য অর্জন করতে পারি। এ ব্যাপারে প্রচুর হাদিস রয়েছে।
এখানে শুধু একটি হাদিস উল্লেখ করছি। সেটি হলো হজরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, ‘যে মুসলমান কোনো অসুস্থ মুসলমানকে সকালে দেখতে যায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন এবং জান্নাতে সে একটি বাগান পায়।’ (তিরমিজি)। এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমাদের ডাক্তাররা তো টাকার বিনিময়ে রোগী দেখেন। তাহলে তারাও কি রোগী দেখার ফলে ফেরেশতাদের তেমন দোয়া এবং পরলোকে জান্নাত লাভের আশা করতে পারেন? জবাবে বলব, অবশ্যই। তবে শর্ত হলো রোগী দেখার সময় শুধু ইবাদতের নিয়তে তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে রোগীকে দেখতে হবে। একজন ডাক্তার ইবাদতের নিয়তে রোগী দেখলে তিনি কমপক্ষে তিন দিক থেকে লাভবান হবেন। যেমন- প্রথমত, ইবাদতের নিয়তে রোগী দেখার সময় টাকার কথা ভুলে থাকার ফলে চিকিৎসা সেবাটা যথাযথ হয় বলে তাদের টাকা খুঁজতে হয় না বরং টাকাই তাদের খুঁজে বেড়ায়। দ্বিতীয়ত, যতবার যতটা রোগী দেখেন ফেরেশতার সংখ্যাটাও ততবার বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে লাখ-কোটি ফেরেশতার পক্ষ থেকে দোয়া লাভ করতে থাকেন। তৃতীয়ত, পরকালে বেহেশত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেন।
আর যারা ইবাদতের নিয়তে অর্থাৎ প্রকৃত সেবা মনোবৃত্তির পরিবর্তে শুধু টাকার চিন্তা মাথায় নিয়ে রোগী দেখেন তাদের চিকিৎসাসেবার মানটাও ভালো হয় না। ফলে তারা সব দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। তাদেরকে দুর্ভাগা বললেও বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না। কোনো রোগী যদি কোনো ডাক্তারের ব্যবহার এবং চিকিৎসাসেবায় মুগ্ধ হয়ে ওই ডাক্তারের জন্য নেক দোয়া করেন, তাহলে ওই দোয়া সাথে সাথেই কবুল হয়ে যায়।
পক্ষান্তরে কোনো রোগী যদি কোনো ডাক্তারের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে এ ডাক্তারের জন্য বদদোয়া করেন তাও সাথে সাথেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। কারণ হাদিস শরিফে (ইবনে মাজাহ) এসেছে, আল্লাহর দরবারে রোগীর দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতো কবুল হয়ে যায়। এ ছাড়া হাদিস শরিফ প্রমাণ দেয়, যারা রোগীর সেবা করল তারা আল্লাহর সেবা করল। যারা রোগীকে অবহেলা করল তারা আল্লাহকে অবহেলা করল। আর রোগীর প্রতি অবহেলা করার কারণে শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদেরকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। এ প্রসঙ্গে কবি আবদুল কাদিরের ‘মানুষ’ কবিতার প্রথম প্যারাটি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। কবির ভাষায় ‘হাশরের দিন বলিবেন খোদা- হে আদম সন্তান/ তুমি মোরে সেবা কর নাই যবে ছিনু রোগে অজ্ঞান।/ মানুষ বলিবে- তুমি প্রভু করতার,/ আমরা কেমনে লইব তোমার পরিচর্যার ভার?/ বলিবেন খোদা- দেখনি মানুষ কেঁদেছে রোগের ঘোরে,/ তারি শুশ্রূষা করিলে তুমি যে সেখায় পাইতে মোরে...।’
অতএব, চিকিৎসক সমাজসহ আমাদের সবার মনেই শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
জয়নাল আবেদীন পাঠান
লেখকঃ লেখক ও গবেষক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন