ইসলামে মাতৃভাষার চর্চা
আল্লাহপাক মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা আখ্যায়িত করেছেন এবং তাদের মনের ভাব প্রকাশের জন্য ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন যাতে তারা একে অন্যের সাথে ভাবের আদান-প্রদান করে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তুলতে পারে। কুরআনুল কারিমে বলা হয়েছেঃ ‘আর তার নির্দেশনাবলির মধ্যে রয়েছে মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য।’ বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ৬ হাজারের অধিক ভাষা প্রচলিত আছে। এর প্রত্যেক ভাষায়ই কথা বলে একেকটি জনগোষ্ঠী।
এ ভাষাগুলোই প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের মাতৃভাষা। ইসলাম প্রত্যেক জাতি-গোষ্ঠীর মাতৃভাষার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেছে। কারণ ইসলাম মনে করে মাতৃভাষার সাথে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর সভ্যতা ও সংস্কৃতি জড়িত থাকে। একে অপরের সাথে ভাবের আদান-প্রদান করা, সৎ ও ন্যায় কাজ করা অসৎ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা বা বাধা প্রদান করা, ধর্মের বিধিবিধান প্রতিপালন করা, আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা কেবল মাতৃভাষার মাধ্যমেই সম্ভব। ইসলাম ভাষার বিষয়টিকেও সার্বজনীন আখ্যা দিয়েছে। বর্ণ, আঞ্চলিকতা ও ভাষার সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে ইসলাম ধর্মীয় প্রচারে মাতৃভাষা চর্চার জোরালো তাগিদ দিয়ে বলেছে ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে বিজ্ঞানসম্মত ও উত্তম ভাষণ দ্বারা আহ্বান করো এবং তাদের সাথে সদ্ভাবে আলোচনা করো [নাহলঃ ১২৫]।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাঙালি জাতির জীবনে কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ ভাষার এক বেদনাবিধুর ইতিহাস রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এক বাঙালি ছাড়া আর কোনো ভাষাগোষ্ঠীর জীবনে ভাষার জন্য আন্দোলন হয়নি। রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়নি। রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে কেবল বাঙালিরাই বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পেরেছে। সে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আজ পৃথিবীজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই কেবল আমাদের চেতনাবোধ জাগ্রত হয়। শহীদ মিনার ধোয়ামোছা, শহীদ মিনারে প্রভাতফেরির অনুষ্ঠান, গান গাওয়া, সরকারি-বেসরকারি নানা মাত্রিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমেই আমরা একুশকে স্মরণ করি। একুশ আসে, একুশ যায়। আজ ৫৫ বছর হলো আমাদের অর্জিত অমর একুশে। একুশের চেতনা কি বছরের বাকি ১১ মাস আমাদের মাঝে জাগ্রত থাকে এ প্রশ্ন অনেকের মনেই উদয় হয়। সর্বস্তরে মাতৃভাষার চর্চা এখনো কাগুজেই রয়ে গেছে, দেশের সব শিশুকে আমরা মাতৃভাষা শিক্ষা দিতে পারিনি।
পাকিস্তানিদের মতো অনেক বাঙালি মুসলমান ও আলেম-ওলামা-ইমাম আমাদের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি উদাসীন। আরবি-ফার্সি-উর্দু ভাষায় যত ধর্মগ্রন্থ লেখা হয়েছে, আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় ততটা নেই। এটি বাংলা ভাষাভাষী আলেম-ওলামাদের ব্যর্থতা। আমাদের অনেকের এ উপলব্ধি বোধ নেই যে, আরবি-ফার্সি ও উর্দু ভাষায় রচিত সিনেমার চেয়ে বাংলা ভাষায় রচিত নজরুলের হামদ ও নাত হাজার গুণ শ্রেয়। আমাদের ভাষাসৈনিক ও তাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি যথাযথ সম্মান জানাতে আমরা ভুলে গেছি। আমরা যে বায়ান্নর রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে একাত্তরের স্বাধীনতা পেয়েছি সে কথাটিও আজ আর বোধ হয় মনে নেই। আমরা আশা করব, আমাদের ধর্ম-কর্মে, আচার-ব্যবহারে, অফিস-আদালতে তথা জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনের দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে এবারের একুশ বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ফরহাদ হোসেন
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাঙালি জাতির জীবনে কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ ভাষার এক বেদনাবিধুর ইতিহাস রয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এক বাঙালি ছাড়া আর কোনো ভাষাগোষ্ঠীর জীবনে ভাষার জন্য আন্দোলন হয়নি। রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়নি। রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে কেবল বাঙালিরাই বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে পেরেছে। সে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আজ পৃথিবীজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই কেবল আমাদের চেতনাবোধ জাগ্রত হয়। শহীদ মিনার ধোয়ামোছা, শহীদ মিনারে প্রভাতফেরির অনুষ্ঠান, গান গাওয়া, সরকারি-বেসরকারি নানা মাত্রিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমেই আমরা একুশকে স্মরণ করি। একুশ আসে, একুশ যায়। আজ ৫৫ বছর হলো আমাদের অর্জিত অমর একুশে। একুশের চেতনা কি বছরের বাকি ১১ মাস আমাদের মাঝে জাগ্রত থাকে এ প্রশ্ন অনেকের মনেই উদয় হয়। সর্বস্তরে মাতৃভাষার চর্চা এখনো কাগুজেই রয়ে গেছে, দেশের সব শিশুকে আমরা মাতৃভাষা শিক্ষা দিতে পারিনি।
পাকিস্তানিদের মতো অনেক বাঙালি মুসলমান ও আলেম-ওলামা-ইমাম আমাদের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি উদাসীন। আরবি-ফার্সি-উর্দু ভাষায় যত ধর্মগ্রন্থ লেখা হয়েছে, আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় ততটা নেই। এটি বাংলা ভাষাভাষী আলেম-ওলামাদের ব্যর্থতা। আমাদের অনেকের এ উপলব্ধি বোধ নেই যে, আরবি-ফার্সি ও উর্দু ভাষায় রচিত সিনেমার চেয়ে বাংলা ভাষায় রচিত নজরুলের হামদ ও নাত হাজার গুণ শ্রেয়। আমাদের ভাষাসৈনিক ও তাদের পরিবার-পরিজনের প্রতি যথাযথ সম্মান জানাতে আমরা ভুলে গেছি। আমরা যে বায়ান্নর রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে একাত্তরের স্বাধীনতা পেয়েছি সে কথাটিও আজ আর বোধ হয় মনে নেই। আমরা আশা করব, আমাদের ধর্ম-কর্মে, আচার-ব্যবহারে, অফিস-আদালতে তথা জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনের দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে এবারের একুশ বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ফরহাদ হোসেন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন