ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব
এ পৃথিবীতে ১ লাখ বা ২ লাখ ২৪ হাজার পয়গম্বর বা নবী রাসূল এসেছেন। তারা স্বজাতির মাতৃভাষায় কথা বলতেন। তাদের প্রতি নাজিলকৃত আসমানি কিতাব ও ছহিফাগুলো স্বীয় মাতৃভাষায় প্রচার করতেন। আল্লাহপাক কুরআনে উল্লেখ করেছেনঃ আমি সব পয়গম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই পাঠিয়েছি যাতে তাদের পরিষ্কার করে বুঝাতে পারে। (সূরা ইব্রাহিমঃ আয়াতঃ ৪)। হাদিস শরিফ থেকে প্রমাণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহপাক পয়গম্বরেরগণের প্রতি যত কিতাব নাজিল করেছেন সেগুলোর আসল ভাষা ছিল আরবি জিব্রাঈল আঃ তার নিজ নিজ পয়গম্বরের জাতীয় ভাষায় অনুবাদ করে নবী রাসূলগণের কাছে পৌঁছাতেন। যেমন তাওরাত, জাবুর, ইনজিল প্রভৃতি কিতাব কোনোটা ইবরানি, কোনোটা হিব্রু, কোনোটা সুরিয়ানি বা ইউনানি ভাষায় রূপান্তরিত করে নবী-রাসূলগণ তাদের মাতৃভাষায় বা স্বজাতীয় ভাষায় বুঝাতেন। এতে বোঝা গেল যে, প্রত্যেক নবী-রাসূলই আপন জাতির মাতৃভাষায় আসমানি গ্রন্থাবলির নির্দেশিকা প্রচার করতেন। মূলত পয়গম্বরদের ইসলাম প্রচারের মাধ্যম ছিল মাতৃভাষা।
বিশ্বনবীর মাতৃভাষায় ইসলাম প্রচারঃ আমাদের সর্বশেষ প্রিয়নবী বিশ্বনবীর মাতৃভাষা ছিল আরবি। আর সর্বশেষ আসমানিগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে প্রিয়নবীর মাতৃভাষাতেই। অতঃপর তিনি মাতৃভাষাতেই কুরআনের বাণী প্রচার করে জগৎকে আলোকিত করেছেন।
আল্লাহ পাক নবীজীর মাতৃভাষাতে কুরআন নাজিল করে তা সহজ করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতঃপর আমরা এ কুরআনকে তোমার মাতৃভাষায় সহজ করে দিয়েছি। যাতে মুত্তাকিদেরকে এর (বেহেশতের) সুসংবাদ দিতে পার আর এর সাহায্যে কলহে লিপ্ত জাতিকে (দোজখের) ভয় দেখাতে পারো। (সূরা মারইয়ামঃ আয়াত-৯৭) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, এটা রুহুল আমিন-জিব্রাইলের মাধ্যমে আপনার অন্তকরণে সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। যাতে ভয় প্রদর্শনকারী হতে পারো। (সূরা শুয়ারাঃ আয়াত ১১৩-১১৫)।
বাংলা ভাষায় ইসলাম প্রচারঃ রাসূল সাঃ আরবে মাতৃভাষার মাধ্যমে ইসলামকে প্রসারিত করে কুরআনের ভাষা আরবি ভাষাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হন। আমাদের এ ভারতীয় উপমহাদেশেও ইসলাম প্রচারক উলামায়ে কেরামগণ যারা ইসলামের বাণী প্রচার করতে এসেছিলেন, তারাও আরবি ভাষাকেই এ দেশের মাতৃভাষায় রূপান্তর করে আমাদের পূর্বপুরুষদের ইসলামে দীক্ষিত করে তুলেছিলেন। এ দেশে ইংরেজদের আগমনে আগে মুসলমানরা প্রায় ৭০০ বছর পর্যন্ত শাসন করে শিক্ষাসভ্যতা প্রবর্তন করেছিলেন। এ উপমহাদেশে ফার্সি, উর্দু, বাংলা ভাষায় কুরআন, হাদিসের প্রচুর গবেষণা ও বই পুস্তক রচনা করা হয়। আরবি ভাষার কুরআন ও হাদিসের বাণী এ দেশের মাতৃভাষার মাধ্যমে ব্যাপক চর্চার ফলে এখানকার মানুষের মধ্যে ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটে। বাংলা ভাষায় কুরআন তাফসির, হাদিস ও অন্যান্য বিষয়ের যে বিশাল ভাণ্ডার গড়ে উঠেছে তাতে মাতৃভাষায় যে গুরুত্ব বহন করে তা অবাক করার মতো। বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আধুনিক প্রকাশনীসহ অসংখ্য প্রকাশনা সংস্থা মাতৃভাষায় যে সব কিতাবাদি বই পুস্তক রচনা ও অনুবাদ করেছে তা সত্যিই অতুলনীয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মাতৃভাষায় ইসলাম চর্চা এ দেশে এক যুগান্তকারী অধ্যায় সূচিত করেছে। সত্যিকার অর্থে বাংলা ভাষায় ইসলাম চর্চা এটা এক বিরাট অবদান।
বাংলা ভাষা তথা আমাদের মাতৃভাষা আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন এ ভাষাতে ইসলাম চর্চা আরো ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হবে। ইসলাম যেমন আরবীয় মরু অঞ্চল পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল ঠিক তেমনি বাংলা ভাষা তথা মাতৃভাষার মাধ্যমে আমরা ইসলামের চর্চাকে আরো বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত করতে সক্ষম হবো।
অধ্যাপক মাওলানা মোঃ শফিকুর রহমান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন