শুক্রবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সালাত


সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত সালাত


ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। সালাত বা নামাজ তার মধ্যে অন্যতম এবং ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই পবিত্র কুরআনে ৮২ জায়গায় সালাত কায়েম করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। ইসলামে সালাতের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি আল্লাহ পাকের রহমত এবং ইহ-পরোকালের মুক্তিলাভের প্রধান অবলম্বন হিসেবে সালাতের বৈশিষ্ট্য তাৎপর্যবহ।
আমরা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে থাকি। এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মধ্যে ১৭ রাকাত ফরজ সালাত আল্লাহ পাক নির্ধারিত করে দিয়েছেন। ইবাদতের ক্ষেত্রে ফরজ সালাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি আল্লাহ পাকের হুকুম। সালাত (নামাজ) প্রধানত চার প্রকার। ফরজ, সুন্নাত, ওয়াজিব ও নফল। স্বয়ং আল্লাহ পাক যে সালাত আদায় করতে বলেছেন, তাই ফরজ সালাত। ফরজ সালাত আবার দুই প্রকার­ ফরজে আইন ও ফরজে কেফায়া। ফরজ সালাত প্রত্যেক মুসলমানের জন্য সমানভাবে ফরজ। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমার সালাত। ফরজে কেফায়া প্রত্যেকের ওপর সমান ফরজ হলেও তা একটি এলাকায় সবার পক্ষে কিছুসংখ্যক লোক আদায় করলে এই ফরজে কেফায়া আদায় হয়ে যায়। যেমন জানাজার সালাত। সুন্নাত সালাত আবার দুই প্রকার­ সুন্নাতে মোয়াক্কাদা ও সুন্নাতে জায়েদা।
ওয়াজিব সালাত হচ্ছে­ দুই ঈদের সালাত ও বিতরের সালাত। নফল সালাত আদায় করার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত সাওয়াব অর্জনের স্বীকৃতি। প্রকৃতপক্ষে বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাধ্যমেই আমরা আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। মাকরুহ সময় ছাড়া অন্য যেকোনো সময় নফল সালাত আদায়কালে অশেষ রহমত, বরকত ও নেয়ামত পাওয়া যায়।
তারাবির সালাত আদায় করার মধ্যে রয়েছে অনেক ফজিলত। হজরত রাসূলে পাক সাঃ এরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের অনুভূতিসহ আখিরাতের প্রতিদান নাজাতের উদ্দেশ্যে রমজানের রাতগুলোতে তারাবিহ পড়বে আল্লাহপাক পরওয়ারদেগার তার কৃত সব গুনাহরাশি ক্ষমা করে দেবেন। এতদ্ব্যতীত সালাতের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেনঃ সালাত কঠিন কাজ। তবে ওই সব লোকের প্রতি নয় যারা ভয়ভীতির সাথে সালাত আদায় করে এবং মনে করে যে, তারা আখিরাতে আল্লাহর সামনে হাজির হবে এবং প্রত্যাবর্তন করবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, সেই সব সালাত (নামাজ) আদায়কারীদের জন্য সর্বনাশ। যারা নিজ নিজ সালাত সম্পর্কে উদাসীন এবং যে বা যারা মানুষকে দেখানোর জন্য সালাত (নামাজ) পড়ে।
সালাত (নামাজ) ইসলামের দ্বিতীয় রোকন এবং ইবাদতসমূহের মধ্যে সালাতের স্থান অনেক ঊর্ধ্বে। তাই সালাতের গুরুত্ব মরতবা বর্ণনা করে শেষ করে যায় না। সালাত আমাদের জন্য আল্লাহ পাকের বড় একটি রহমত, বরকত ও নেয়ামত। মহান পাক পরওয়ারদেগারের সামনে হাজির হওয়ার জন্য বড় মাধ্যম। হজরত রাসূলে পাক সাঃ বলেছেন, আসসালাতু মিরাজুল মুমিনিন। অর্থাৎ সালাত মুমিনদের জন্য মেরাজ। শুধু গুনাহ খাতা মুক্তিই নয়। যেকোনো কঠিন থেকে কঠিনতম সমস্যাসঙ্কুল বালা মুসিবতে আপতিত হলে সালাতের মাধ্যমে কায়মনে আল্লাহপাক পরওয়ারদেগারের কাছে ফরিয়াদ মুনাজাত করলে মুক্তি নাজাত লাভ করা যায়। এ জন্য সালাতুল হাজতও পড়ার বিধান রয়েছে। আখিরাতে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে সালাত। এই পবিত্র সালাতের মাধ্যমেই এক কাতারে শামিল হয়ে আমরা শ্রেণী বৈষম্য ভুলে যাই এবং স্ব স্ব দেহমন পরিশুদ্ধ হয়। অতএব আসুন, আমাদের চলমান জীবনে আল্লাহর নৈকট্য, সন্তুষ্টি, রহমত, বরকত, নেয়ামত ও নাজাত লাভে সালাতের মাধ্যমে নিজেদের একাকার করে দুনিয়া ও আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করি এবং আল্লাহর মকবুল বান্দা হিসেবে সমর্পিতচিত্তে রাব্বুল আলামিনের দরবারে হাজির হই আল্লাহ পাক আপনার আমার ও সব মুমিন মুসলমানের সালাত কবুল করুন।
মাওলানা শাহ আবদুস সাত্তার

কোন মন্তব্য নেই: