শুক্রবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

মুক্তির পথ ইসলাম


মুক্তির পথ ইসলাম


ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। শুধু মুসলমানদের জন্য ইসলামের আবির্ভাব ঘটেনি; বরং বিশ্বের সব মানুষের জন্য, এক কথায় মানবজাতির জন্য ইসলামের আগমন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদত করো যিনি তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২১)
যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই ভালো জানেন যে, কিভাবে চললে অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়া যাবে বা জীবনে সফলতা আসবে। মহান আল্লাহ এ আসমান-জমিনসহ মানবজাতিকে সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের প্রতিপালনও করছেন। পবিত্র কুরআনের ভাষায়, ‘যে পবিত্র সত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদস্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করছেন তোমাদের খাদ্য হিসেবে।’
স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার ইবাদত কিভাবে করতে হবে তা তিনি পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআন ও হজরত মুহাম্মদ সাঃ-এর দেখিয়ে যাওয়া সুন্নাহই সেই ইবাদতের পথ; এবং সেই সব মিলিয়েই একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যার নাম ‘ইসলাম’। ইসলাম যে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা তাতে আজকাল আর কেউ সন্দেহ করেন না। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা করেছেন­ ‘নিশ্চয়ই ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াতঃ ১৯) ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবনব্যবস্থা যে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় তাও তিনি পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন­ ‘কেহ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন গ্রহণ করিতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হইবে না এবং সে হইবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভêুক্ত।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াতঃ ৮১)। সুতরাং ইসলাম হলো সর্বশেষ এবং স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের পক্ষ থেকে সৃষ্ট মানুষের জন্য প্রেরিত ও নির্বাচিত একমাত্র দীন বা জীবনব্যবস্থা।
পবিত্র কুরআন যদি আসমানি গ্রন্থ হয়ে থাকে (অবশ্যই আসমানি গ্রন্থ) এবং তার মধ্যে যদি সন্দেহের কোনো অবকাশ না থেকে থাকে (অবশ্যই সন্দেহ নেই) তাহলে এই পবিত্র কুরআন সমগ্র বিশ্বের সব মানুষের জন্য গাইড বুক হিসেবে অনুসরণীয় হবে এটাই সমীচীন। কারণ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন বা জীবনব্যবস্থা আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় নয় এবং পবিত্র কুরআন সেই ইসলামের মূল উৎস। এই পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করছেন­ ‘তিনি তাহার রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করিয়াছেন অপর সব ধর্মের ওপর ইসলামকে বিজয়ী করিবার উদ্দেশ্যে। সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা ফাতহ, আয়াতঃ ২৮)।
আল্লাহপ্রদত্ত এ জীবনবিধানই যেসব মানুষের জন্য অনুসরণীয় তা অস্বীকার করার উপায় নেই। স্রষ্টা মহান রাব্বুল আ’লামিন নিজেই বলছেন­ ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করিলাম।’ (সূরা মায়িদা, আয়াতঃ ৩)।
এ কথা সত্য যে হজরত ইবরাহিম আঃ-এর আহ্বানে নমরুদ সাড়া দেয়নি। একইভাবে হজরত মূসা আঃ-এর ডাকে ফেরাউন বা হজরত মুহাম্মদ সাঃ-এর আহ্বান আবু জেহেল, আবুল লাহাব, শায়বা, উৎবারা কিংবা বাদশা খসরু, হিরাক্লিয়াসরা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তাই বলে নবী-রাসূলগণ আঃ দীনের পথে আহ্বান বন্ধ করে দিয়েছেন? পাশের ঘরে আগুন লাগলে ঘরটি ইহুদি না নাসারা না কাফির-মুশরিকের, তা দেখার যেমন কোনো সুযোগ থাকে না বরং আগুন নেভানোর জন্য সবাই মরিয়া হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হয়। ঠিক তেমনি কিয়ামতের কঠিন দিনে ঈমান আর আমল ছাড়া যখন সব কিছু মূল্যহীন হয়ে যাবে সেই দিন যে অমুসলিম বেহাল অবস্থায় নিপতিত হবে শুধু সঠিক শিক্ষা ও জ্ঞানের অভাবে তার কাছে সেই শিক্ষা পৌঁছে দেয়া প্রত্যেকটি মুসলিমের জন্য অন্যতম দায়িত্ব নয় কি? কিন্তু অমুসলিম সম্প্রদায় যারা ঘোর অন্ধকারের দিকে নিরন্তর পথ চলেছেন তাদের রক্ষার জন্য মুসলমানদের তেমন কোনো প্রচেষ্টা কি দেখা যায়? বরং আজ মুসলমানরা নিজেদের ঈমান আমল বাঁচাতেই যেন তৎপর। কিন্তু একজন মুসলমান কখনো তার এই সত্যের প্রচার ও প্রসার থেকে দূরে সরে থাকতে পারে না। কারণ আল্লাহ তা’আলা বারবার সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করার তাকিদ দিয়েছেন। অর্থাৎ সুনীতি প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি উচ্ছেদ প্রত্যেক মুসলমানের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। সত্য দীনের পথে আখিরাতের মুক্তির ন্যায় স্রষ্টার মহাপয়গাম দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেয়ার মতো মহান সৎ কাজটির দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। একই সাথে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সব মানুষেরই উচিত অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা ফিকির করা। দুনিয়ায় আগমনের কারণ কী? এখানে তার দায়িত্ব ও কর্তব্যই বা কী? মানুষের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী হতে পারে তার উদ্ভাবনের প্রয়াস সবার থাকা উচিত। এই লক্ষ্যে ধাবিত হলে সত্য দেখা দিতেও পারে। ইহকালে শান্তি আর পরকালে মুক্তির দিশা এ পথেই অর্জিত হতে পারে!
মাওলানা মাহমুদ জামাল

কোন মন্তব্য নেই: