শুক্রবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

আল ছহিফাহ আল সাজ্জাদিয়াহ


আল ছহিফাহ আল সাজ্জাদিয়াহ


ইমাম জয়নুল আবেদীন নবী বংশধর ইমামগণের মধ্যে ছিলেন চতুর্থতম। তিনি আলী (রা·)-এর দৌহিত্র, ইমাম হোসাইন (রা·)-এর যোগ্যতম সন্তান। তিনি নবীর জ্ঞানের এবং তার বংশজাত পবিত্রতার দ্বারা দীক্ষিত হয়েছেন। আল ছহিফাহ আল সাজ্জাদিয়াহ ইমাম জয়নুল আবেদীনের হৃদয়ের আকুতি মেশানো মোট ৫৪টি মোনাজাতের সংকলন। বলা বাহুল্য, তিনি ছিলেন মহান আল্লাহতায়ালার সর্বোত্তম মহীমা প্রকাশকারীগণের মধ্যে অন্যতম। বেহেশতী শান্ত সুশীতল ঝরনাধারা তাঁর হৃদয়ে যেন প্রবহমান। তাঁর প্রতিটি উচ্চারণ আমাদের জীবনের জন্য সমুন্নত একেকটি ধাপ, তাঁর কর্ম আমাদের অনুপ্রেরণা।

তিনি আজও বৃষ্টির মতো রহমতরূপে বর্ষিত হন আমাদের অন্তরের গভীরতম তলদেশে। তিনি ফুলের মতো ছড়িয়ে দেন বেহেশতী সুরভি। আলোর মতো সমুজ্জ্বল করেন আমাদের চারপাশ। পূর্ণিমার মতো, জোসনার মতো অন্ধকার বনানীর তলদেশে শিশিরের শব্দ শোনান তিনি। তিনি আমাদের একান্ত আপনজন। কখনও পিতা হয়ে, কখনও সন্তান হয়ে কষ্ট ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার পথ বাতলে দেন আমাদের। তিনি তাঁর মোনাজাতে বিমর্ষতা থেকে উচ্চারণ শেখান, মন্দ-নৈতিকতাহীন পথ থেকে হেফাজতে থাকতে শেখান। শেখান ক্ষমা, আশ্রয়, অনুশোচনা, বিনম্রতা, উত্তম আচরণ, নিরাপত্তা আর সাহায্যের সর্বোত্তম ভাষা। তিনি তাঁর ছন্দময় ব্যাকুল কলতানে জানিয়ে দেন গভীরতম কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পদ্ধতি, বিরূপ পারিপার্শ্বিকতায় দৃঢ় থাকার জাদুকরী শক্তি। জীবনের সব অবস্থান থেকেই যেন তাঁর ভাষা দিয়ে আল্লাহর করুণাধারায় যাওয়া যায়। কোন কিছুই বাদ যায় না তাঁর মোনাজাত থেকে।

ঋণ পরিশোধে সাহায্যের ব্যাকুলতা, রাত জেগে গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার আহাজারি, নিজের অভাব কিংবা সীমাবদ্ধতা নিয়ে রোনাজারি, নতুন দেখা চাঁদের জন্য কৃতজ্ঞতা, রমজান, ঈদুল ফিতর, জুমা, খতমে কোরআন, আরাফাত দিবস, কোরবানি কোন কিছুই বাদ যায় না। তাঁর উত্তোলিত দু’হাতে জীবনের সব চাওয়া তুলে ধরেন মহান আল্লাহর দরবারে। তিনি আমাদের শিখিয়ে দেন উদ্বিগ্নতা থেকে বাঁচার পদ্ধতি, আল্লাহর কাছে জরুরি বিষয়ের আবেদন, শত্রুদের বিশ্বাসঘাতকতা এবং ইশারা দিয়ে আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন এই গ্রন্থে। মহান আল্লাহর প্রতি অমন বৈচিত্র্যময় সর্বোত্তম কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নবীর যোগ্য উত্তরসূরি ছাড়া কেইবা শেখাবেন আমাদের? দোয়া ও মোনাজাতের এমন অলংকৃত সংকলন সব মানবজাতির জন্য কেয়ামততক হাদিয়াস্বরূপ। আমরা এই অসামান্য দান গ্রহণ করে আমাদের অক্ষমতা নিয়ে কেবল কৃতজ্ঞ হতে পারি। তাঁর ভাষাতেই বলি ‘হে আল্লাহ। আপনি হজরত মুহাম্মদ (স·) ও তাঁর বংশধরগণের ওপর শান্তি বর্ষিত করুন। ইমাম জয়নুল আবেদীনের এই অমূল্য রত্নসম্ভার বাংলা ভাষাভাষীদের বোধগম্য করার জন্য ধন্যবাদ জানাই অনুবাদক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিনকে। আশা করি এ জাতীয় আরও অনেক গ্রন্থের অনুবাদ আমাদের হাতে তুলে দিতে ভবিষ্যতে তিনি সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। বইটি প্রকাশ করেছেন মুহম্মদ মনির হোসেন মিন্টু, অন্যধারা ৩৮/২ ক বাংলাবাজার (৫ম তলা), ঢাকা-১০০০। মূল্য ১৪০ টাকা। এখানে একটা অনুযোগ না করে পারছি না। লেখক কেন মূল্য শব্দটা ব্যবহার করলেন তা বোধগম্য নয়।
ইমাম জয়নুল আবেদীনের এই অমূল্য মুক্তোরাজির মূল্য নিরূপণ করা সমীচীন হয়নি। এখানে হাদিয়া শব্দটাই হয়তো যুক্তিযুক্ত হতো। যা হোক এমনি সব ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি ছাড়া পরিচ্ছন্ন ছাপা, চমৎকার প্রচ্ছদ, অনুবাদে গতিময় শব্দচয়ন সব মিলিয়ে দীর্ঘদিনের একটা চাওয়া যেন পূরণ হল বাংলাভাষী আশেকানদের জন্য। মহান আল্লাহতায়ালা অনুবাদককে এবং গ্রন্থটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোত্তম বিনিময় দান করুন।

আহমদ আবদুল্লাহ

কোন মন্তব্য নেই: