শনিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০০৯

মহিমাময় আলস্নাহর অপার অনুগ্রহ

মহিমাময় আলস্নাহর অপার অনুগ্রহ


মানুষ, জন্তু-জানোয়ার ও উদি্‌ভদ জগতের ওপর পানির প্রভাব অপরিসীম। এগুলোর অসিত্ব-স্থিতি-জীবন নির্বাহ পানির ওপর ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। তাই বলা হয় পানির অপর নাম জীবন। ‘ওয়াটার সাইকেল’ অর্থাৎ পানি-চক্র তথা পানির উৎপত্তি ও গতিপ্রৈকৃতি বিষয়টি যুগে যুগে দর্শন ও বিজ্ঞানের আলোকে বেশ আলোচিত হয়েছে। কিন্তু সটিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে অনেক সময় লেগে যায়।
খৃষ্টপূর্ব ৭ম শতাব্দিতে বৈজ্ঞানিক মিলেটুসের থেলেস এ মতবাদ পোষণ করতেন যে সমুদ্রের পানি বাতাসের তাড়নায় দ্রম্নতগতিতে মহাদেশের অভ্যন্তôরে ঢুকে পড়ে। এ কারণে পানি ভূমিতে আছড়ে পড়ে এবং সে পানি পরে মাটির ভেতরে প্রবেশ করে। অন্যদিকে এরিস্টটলের ধারণা ছিল মাটির পানি বাষ্প হয়ে ঠাণ্ডা পর্বতের গভীর গহ্বরে জমা হয় সেখানে ভূগর্ভে এক গভীর হ্রদ সৃষ্টি হয় এবং এ হ্রদের পানিই ঝরনা হয়ে বয়ে যায়। ‘ওয়াটার সাইকেল’ সম্পর্কিত প্রথম সুস্পষ্ট মতবাদ চালু হয় অনেক পরে অর্থাৎ ১৫৮০ সালে বার্ণাড প্যালিসির মাধ্যমে। তিনি অভিমত দেন যে ভূগর্ভস্থ পানির উৎস হলো মাটি চোয়ানোর বৃষ্টি পানি। ১৭ শত শতাব্দিতে বৈজ্ঞানিক ম্যারিয়াট এবং পি, প্যারলট কর্তৃক তা সমর্থিত হয়। অথচ ৭ম শতাব্দিতেই অর্থাৎ প্রায় এক হাজার বছর পূর্বেই এ তত্ত্ব আরো বিশদভাবে আল কোরআনে আগে বিধৃত ছিল।
আসুন এখন আমরা কোরআনের দিকে দৃষ্টি দেই। সূরা নাফ আয়াত ৯-১১, সূরা আল মুমিনুন আয়াত ১৮-১৯, সূরা আর রূম আয়াত ৪৮, সূরা রাফ আয়াত ১৭, সূরা যুমার আয়াত ২১, সূরা মুরসালাত আয়াত ১-৪ ইত্যাদির সারাংশ হিসেবে আলস্নাহ বলেন, আমি বাতাস, প্রবাহিত করি যা ভারবাহী মেঘমালাকে বহন ও সঞ্চালন করে, বিচ্ছিন্ন করে, টুকরো টুকরো করে অঞ্চলে অঞ্চলে পাঠিয়ে দেই এবং দেখতে পাও সে মেঘ থেকে ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ে এবং তা মৃত জমিতে প্রবেশ করিয়ে বিভিন্ন শস্যাদি, তৃণ, সবজি, ফলাদি উৎপন্ন করি মানুষ ও জানোয়ারের জন্য। সূরা ওয়াকিয়াতে আয়াত ৬৮-৭০ এ আলস্নাহ প্রশ্ন রেখে বলেন, তোমরা যে পানি পান কর সে মন্বন্ধে চিন্তা করেছে কি? “তোমরা কি তা মেঘ থেকে নামাও না আমি বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছা করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবু তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না?” সূরা আল ফুরকান আয়াত ৫৩ এ আলস্নাহ বলেন “আমি দুই সাগর সৃষ্টি করেছি। একটির পানি মিষ্টি/ সুপেয়, অপরটির লোনা।” সবই মানুষের কল্যাণে। আবার সূরা নাবা আয়াত ১৩ এ বলেছেন “ আমি আকাশে স্থাপন করেছি একটি জ্বলন্ত প্রদীপ (সূর্য)।
এখন এগুলো বিশেস্নষণ করা যাক।

উপরোক্ত বক্তব্যগুলো থেকে প্রতিভাত হচ্ছে যে পানি-চক্র সৃষ্টিতে সূর্য, সমুদ্র এবং বাতাসের ত্রিমুখী ভূমিকা রয়েছে। সূর্যকে আল্রাহ এক জ্বলন্ত প্রদীপ করে সৃষ্টি করেছেন তাপ, আলো দেয়া ও সময় নির্ধারণের জন্য। সূর্যের বাইরের তাপ হলো ৪০০০-৬০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সূর্যের এ তাপের ২০০ ভাগের মাত্র এক ভাগ পৃথিবীতে আসে। কোর্রনিক তথ্য বিশেস্নষণ করে জানা যায় সারা বিশ্বে পানরি অংশ ৭১ ভাগ এবং মাটির অংশ ২৯ ভাগ। আলস্নাহ বাতাস সৃষ্টি করেছেন এবং বিশাল জিনিষকে বহন ও ধাক্কা দিয়ে চালনা করার জন্য এ বাতাসকে দিয়েছেন অকল্পনীয় প্রচণ্ড শক্তি। সূর্য সমুদ্রের জলরাশির ওপর তাপ বিকিরণ করে বাষ্পের সৃষ্টি করে। এ বাষ্প ওপরে উঠে বায়ুমণ্ডলে গিয়ে ঘনত্ব লাভ করে মেঘে পরিণত হয়। সে মেঘ সমুদ্র বিশেষে ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ মাইল লম্বা এবং ৬-৮ মাইল চওড়া হয়ে থাকে। অভাবনীয় পানি ভরা এ বিশাল মেঘমালাকে ধাক্কা দিয়ে চালনা করার জন্য আলস্নাহ বাতাসকে হুকুম করেন। পরে তারই আদেশে এ বাতাস আবার ঘূর্নিপাকে এ বিশাল মেঘমালাকে বিচ্ছিন্ন করে টুকেরা টুকরো করে এক এক টুকরো মেঘ এক এক দেশ বা অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয় মানুষ ও প্রাণির মঙ্গলার্থে। যদি এ বিশাল শেঘমালা থেকে কোন একটি অঞ্চলে বারিবর্ষণ হতো তা হলে সে অঞ্চল/ দেশ পানিতে ভেসে যেত এবং বিরাট বিরাট নদী হয়ে যেত। তাই দয়ার সাগর আলস্নাহর আদেশে বাতাস কর্তৃক ক্রমাগত ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করার কারণে সে বৃষ্টি ধারা চুলের মত চিকন তারে ফোটা ফোটা হয়ে পড়ে। মোটা মোটা ধারায় পড়লে শস্য ও ফুল-ফলের ক্ষতি হতো। এ বৃষ্টির পানি সমুদ্রে পৌঁছার সাথে সাথে বৃষ্টি ও গতিচক্রের পুনরাবৃত্তি শুরম্ন হয়ে যায়। অন্যদিকে বৃষ্টি যখন ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয় তখন উদি্‌ভদ জগৎ তা গ্রহণ করে। উদি্‌ভদ জগৎ আবার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত বৃষ্টির পানির কতকাংশ বাষ্পাকারে আকাশের বায়ুমণ্ডলে পাঠাতে থাকে। অবশিষ্ট পানি চুয়ে চুয়ে মাটির ভেতর চলে যায়। সেই পানি যা সূর্যোতাপে সমুদ্র থেকে বাষ্পাকারে উত্থিত হয়ে প্রথমে মেঘ ও পরে বৃষ্টিতে পরিণত হয়েছিল তাই বিভিন্ন নদী-নালা-খাল বেয়ে আবার সে সমুদ্রেই গিয়ে পড়ে। এভাবে পানি-চক্রের পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকে।
এ ব্যাপারে সংশিস্নষ্ট আরেকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। প্রায় সব সমুদ্রের পানিই তিক্ত নোনা। তাতে রয়েছে অক্সিজেন-হাইড্রোজেন ও লবণ। আলস্নাহ তার কুদরতি শক্তি বলে সূর্য থেকে বিকীর্ণ ২০০-২৫০ সেলসিয়াস তাপে কেবল অক্সিজেন-হাইড্রোজেন সম্বলিত পানিই বাষ্পাকারে তুলে নিচ্ছেন আর লবণ সমুদ্রেই রেখে দিচ্ছেন। মানুষ শিল্প প্রক্রিয়ায় এ লবণ পানিকে খাদ্যোপযোগী লবণে পরিণত করে আমাদের খাদ্য সম্ভারকে সু-স্বাদু ও মজাদার করে থাকে। তবে আলস্নাহ কিন্তু তার সার্বভৌম ক্ষমতা বলে ১২০০-১৪০০ সেলসিয়াস তাপে লবণকেও বাষ্পাকারে তুলে লবণ বৃষ্টিপাত করতে পারতেন। তা হলে লবণের কারণে কোন তৃণলতা, গাছপালা-শাকসবজি-ফলমূল কিছুই উৎপন্ন হতো না। অন্যদিকে এ অত্যুচ্ছ তাপে সমুদ্রের পানি শুকে যেত। ফলে মানব-প্রানি-উদি্‌ভদ জীবন বিপন্ন হয়ে পরতো। তাই দয়াশীল আলস্নাহ তাদের সবার কল্যাণ কল্পে তা করেননি। অন্যদিকে সমুদ্রের উপরিভাগে লবণ না থাকলে শীতকালে সমুদ্রের পানি বরফ হয়ে যেত। ফলে, সমুদ্রের অভ্যন্তরে অবস্থিত মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণি তীব্র হিম পানিতে ধ্বংস হয়ে যেত। সমুদ্রের পানিতে তীব্র লবণ থাকায় পানি সহজে জমে না। ও তীব্র শীতল হয় না। তাই মাছ ও জলজপ্রাণি পানির অভ্যন্তরে মানুষের কল্যাণে বেঁচে থাকে। আলস্নাহ তায়ালার এ সব কুদরতি রহমতের জন্য তিনি সূরা ও কিয়াতে মানুষকে শোকর গুজারি করতে বলেছেন। আসুন আমরা আমাদের দয়াল প্রভুর এ সব অনুগ্রহের জন্য তার সকাশে সবিনয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আনত হই।

মুহাম্মদ কাসেম

কোন মন্তব্য নেই: