শুক্রবার, ২ জানুয়ারী, ২০০৯

কারবালার শহীদানের কথা


কারবালার শহীদানের কথা


মহররম হিজরি সনের প্রথম মাস। এই মাসটি অত্যন্ত পবিত্র মাস হিসেবে বিবেচিত। মহররম শব্দের অর্থ নিষিদ্ধ। এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এ মাসের ১০ তারিখ আশুরা নামে খ্যাত। এই ১০ তারিখে সংঘটিত হয়েছে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা। এই দিন আল্লাহতায়ালা লাওহে মাহফুজ, দুনিয়া ও দুনিয়ার সব কিছু সৃষ্টি করেন, আসমান থেকে প্রথম বৃষ্টি বর্ষণ করেন। হজরত আদম আঃ-কে সৃষ্টি, তাঁর বেহেশতে প্রবেশ এবং তাঁর তওবা কবুল করেন। হজরত নূহ আঃ-কে অভিশপ্ত ৪০ দিনের মহাপ্লাবন থেকে উদ্ধার, হজরত ইবরাহিম আঃ-কে নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি, তুর পাহাড়ে আল্লাহতায়ালার সাথে হজরত মূসা আঃ-এর কথোপকথন, নীলনদে ফেরাউনকে ডুবিয়ে তাঁকে উদ্ধার, হজরত আইউব আঃ-এর ১৮ বছর রোগভোগের পর রোগমুক্তি, হজরত ইউনূস আঃ-কে মাছের পেট থেকে মুক্তি, হজরত ইয়াকুব আঃ ও তাঁর হারানো পুত্র হজরত ইউসুফ আঃ-এর পুনর্মিলন, হজরত সুলায়মান আঃ-এর রাজত্ব পুনরুদ্ধার, হজরত ঈসা আঃ-এর জন্ম ও আসমানে উঠানো এবং এই দিনই কোনো এক শুক্রবারে কিয়ামত সংঘটিত হবে।
এত সব ঘটনার জন্য আশুরা পবিত্র দিন হিসেবে বিবেচিত হওয়ার পরও আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনার জন্য মুসলিম জগতে চির স্মরণীয় হয়ে আছে। কারবালার প্রান্তরে হজরত ইমাম হোসেন রাঃ ইসলামবিরোধী স্বৈরাচারী ইয়াজিদের সহস্রাধিক আগ্রাসী সেনাবাহিনীর সাথে মরণপণ জিহাদে অবতীর্ণ হয়ে ১৩০ জন সঙ্গীসহ শাহাদত বরণ করেন।

এই প্রান্তরে দৃশ্যত ন্যায়ের পরাজয় হলেও পরে ন্যায়েরই বিজয় সংঘটিত হয়। তাই কবি জাওহার লিখেছেন, ‘ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালা কি বাদ’। আমরা অনেকেই এই মর্মান্তিক ঘটনার শহীদানের নাম জানি না, যাঁরা সত্য ও ন্যায়ের জন্য আল্লাহর রাস্তায় নিশ্চিত পরাজয় জেনেও জীবন উৎসর্গ করেছেন। আজ সেসব বীর শহীদানের নাম পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি- ১. হজরত ইমাম হোসেন বিন আলী রাঃ ২. হজরত আলী আকবর বিন হোসেন রাঃ ৩. হজরত আলী আসগর বিন হোসেন রাঃ (ছয় মাসের শিশুপুত্র বাবার কোলে শহীদ হন)। তাঁরা দু’জন ইমাম হোসেনের পুত্র ৪. হজরত আব্বাস বিন আলী রাঃ ৫. হজরত আবদুল্লাহ বিন আলী রাঃ ৬. হজরত জাফর বিন আলী রাঃ ৭. হজরত ওসমান বিন আলী রাঃ, তাঁরা চারজন ইমাম হোসেনের সৎভাই। তাঁদের মায়ের নাম হজরত উম্মুল বেনিন ৮. হজরত আবদুল্লাহ বিন আলী রাঃ ৯. হজরত আবু বকর বিন আলী রাঃ­ তাঁরা দু’জনও ইমাম হোসেনের সৎভাই। তাঁদের মায়ের নাম হজরত লায়লা বিনতে মাসউদ ১০. হজরত কাসেম বিন ইমাম হাসান রাঃ ১১. হজরত আবদুল্লাহ বিন ইমাম হাসান রাঃ ১২. হজরত আবু বকর বিন ইমাম হাসান রাঃ ১৩. হজরত মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ বিন জাফর রাঃ­ হজরত জাফরের নাতি। তাঁর মায়ের নাম খাবছা, ১৪. হজরত আউন বিন আবদুল্লাহ বিন জাফর। তিনিও হজরত জাফর তাইয়ার ইবনে আবি তালিবের নাতি। তবে তাঁর মা ছিলেন ইমাম হোসেনের বোন ও কারবালার বীর নারীদের সর্দার হজরত জয়নাব বিনতে আলী রাঃ ১৫. হজরত আবদুল্লাহ বিন আকিল, ১৬. হজরত জাফর বিন আকিল, ১৭. হজরত আবদুর রহমান বিন আকিল। তাঁরা তিনজন ইমাম হোসেনের চাচা হজরত আকিলের পুত্র। উল্লেখ্য, হজরত আকিলের অপর পুত্র হজরত মুসলিম ও তাঁর দুই শিশুসন্তান কিছু দিন আগেই কুফায় শহীদ হয়েছিলেন। ১৮. হজরত মুহাম্মদ বিন আবু সাঈদ বিন আকিল। তিনিও হজরত ইমাম হোসেনের চাচা আকিলের নাতি। এই ১৮ জন শহীদ ছিলেন সরাসরি নবী পরিবারের ও বনি হাশিমের সদস্য।
বনি হাশিম ছাড়াও আরো ১১২ জন কারবালায় ইমাম হোসেনের পাশে থেকে শহীদ হয়েছিলেন।

তাঁরা হলেন­

১। হজরত ইব্রাহিম বিন হাসিন আসাদি

২। হজরত আবুল হানিফ বিন হারেস আনসারি

৩। হজরত আবু সামামা সায়েদি ৪। হজরত আবু আমের নাহশালি

৫। হজরত আহমদ বিন মুহাম্মদ হাশেমি,

৬। হজরত আদহাম বিন উমিদ আবদি,

৭। হজরত আসলাম তুর্কি,

৮। হজরত উমাইত বিন সাদ তাঈ,

৯। হজরত আনাস বিন হারেস কাহেলি,

১০। হজরত আনিস বিন মাক্কাল আসবাহি,

১১। হজরত বুরাইর বিন খাদির হামাদানি,

১২। হজরত বশর বিন আমরু হাজরামি,

১৩। হজরত বক্কর বিন হাই তাইমি,

১৪। হজরত জাবের বিন হারেস,

১৫। হজরত জিলাত বিন আলি সাইবানি,

১৬। হজরত জোন, ১৭। হজরত জুইন বিন মালেক তামিমি,

১৮। হজরত জুনাদা বিন হারেস আনসারি,

১৯। হজরত জুনাদা বিন কাব আনসারি,

২০। হজরত জুনদাব বিন হাজার কিন্দি,

২১। হজরত হারেস বিন ইমরাউল কায়েস কিন্দি,

২২। হজরত হারেস বিন নেইহান,

২৩। হজরত হাব্বাব বিন হারেস,

২৪। হজরত হাব্বাব বিন উমর শা’বি,

২৫। হজরত হাবশি বিন কাসেম নাহমি,

২৬। হজরত হাবিব বিন মাজাহের আসাদি,

২৭। হজরত হাজ্জাজ বিন বদর সাদি,

২৮। হজরত হাজ্জাজ বিন মাসরুক,

২৯। হজরত হরস বিন নেইহান,

৩০। হজরত হুর বিন ইয়াজিদ রিয়াহি (তিনি শত্রু পক্ষে ছিলেন পরে ইমাম হোসেনের পক্ষে যোগ দেন),

৩১। হজরত হালাস বিন আমরু রাসেবি,

৩২। হজরত হানজালা বিন সাদ শাবামি,

৩৩। হজরত খালেদ বিন আমরু বিন খালেদ,

৩৪। হজরত জাহের বিন আমরু,

৩৫। হজরত জুহাইর বিন বাশার খাসআমি,

৩৬। হজরত জুহাইর বিন সারিম আযুদি,

৩৭। হজরত জুহাইর বিন কেইন বাজালি,

৩৮। হজরত যিয়াদ বিন উবাইর সায়েদি,

৩৯। হজরত সালেম, ৪০। হজরত সালেম বিন আমরু,

৪১। হজরত সাদ বিন হরস,

৪২। হজরত সাদ,

৪৩। হজরত সাদ,

৪৪। হজরত সাঈদ বিন আবদুল্লাহ হানাফি,

৪৫। হজরত সাঈদ বিন হানজালা তামিমি,

৪৬। হজরত সালমান বিন মুজারেব বাজালি,

৪৭। হজরত সালমান, ৪

৮। হজরত সাওয়ার বিন মুনেম নাহামি,

৪৯। হজরত সুয়ায়িদ বিন আমরু (সর্বশেষ শহীদ),

৫০। হজরত সাইফ বিন হাসের বিন সারি,

৫১। হজরত সাইফ বিন মালেক আবদি,

৫২। হজরত শুজাব বিন আবদুল্লাহ হামাদানি,

৫৩। হজরত জার আমা বিন মালেক, ৫

৪। হজরত আয়াজ বিন মাজমা আযাদি,

৫। হজরত আবেস বিন শাবিব মাকেরি,

৫৬। হজরত আমের বিন হাইয়ান বিন শারিহ,

৫৭। হজরত আমের বিন মুসলেম বিন আবদি,

৫৮। হজরত ইবাদ বিন মুহাজের জাহনি,

৫৯। হজরত আবদুল আ’লা বিন ইয়াজিদ কালবি,

৬০। হজরত আবদুর রহমান বিন ওরবা গাফফারি,

৬১। হজরত আবদুর রহমান বিন আবদুল্লাহ বিন বাজনি,

৬২। হজরত আবদুর রহমান বিন মাসউদ তিমি,

৬৩। হজরত আবদুল্লাহ বিন আরজি,

৬৪। হজরত আবদুল্লাহ বিন আবুবক্কর ইবনে কাহানা,

৬৫। হজরত আবদুল্লাহ বিন বাশার খাসআমি,

৬৬। হজরত আবদুল্লাহ বিন ওরবা গাফফারি,

৬৭। হজরত আবদুল্লাহ বিন ওমাইর কালবি,

৬৮। হজরত আবদুল্লাহ বিন ইয়াজিদ আবদি,

৬৯। হজরত ওবায়দুল্লাহ বিন ইয়াজিদ আবদি,

৭০। হজরত ওকবা বিন সামআন,

৭১। হজরত ওকবা বিন সালাত জাহনি,

৭২। হজরত আইয়ার বিন সালখার আযুদি,

৭৩। হজরত আম্মার বিন হোসান তাঈ,

৭৪। হজরত আম্মার বিন সালামা,

৭৫। হজরত ইমরান বিন কাব,

৭৬। হজরত আমরু বিন আবদুল্লাহ জান্দায়ি,

৭৭। হজরত আমরু বিন খালেদ আযুদি,

৭৮। হজরত আমরু বিন খালেদ সাইদায়ি,

৭৯। হজরত আমরু বিন কারজা আনসারি,

৮০। হজরত আমরু বিন মাশিয়া (দাবিয়া),

৮১। হজরত আমরু বিন খুবাদা আনসারি,

৮২। হজরত আমরু বিন মুতা জাফি,

৮৩। হজরত ওমাইর বিন আবদুল্লাহ মাজহাজি,

৮৪। হজরত কারের বিন আবদুল্লাহ দায়ালি,

৮৫। হজরত কাসেত বিন জুহাইর তাগলাবি,

৮৬। হজরত কাসেম বিন হাবিব আযুদি,

৮৭। হজরত কুরাত বিন আবি কুরাত আনসারি,

৮৮। হজরত কায়নাব বিন আমরু,

৮৯। হজরত আমরু কারদুসি,

৯০। হজরত কানানা বিন আকিক আনসারি,

৯১। হজরত মালেক বিন আনাস কাহেলি,

৯২। হজরত মালেক বিন জুদান,

৯৩। হজরত মালেক বিন আবদুল্লাহ বিন সারি,

৯৪। হজরত মাজমা জাহনি,

৯৫। হজরত মাজমা বিন আবদুল্লাহ আয়েজি,

৯৬। হজরত মুহাম্মদ বিন বাশার হাজরাসি,

৯৭। হজরত মাসউদ বিন হাজ্জাজ তিমি,

৯৮। হজরত মুসলিম বিন কাসিব আযুদি,

৯৯। হজরত মুসলিম বিন আওসাজাহ,

১০০। হজরত মাসকাত বিন জুহাইর তাগলাবি,

১০১। হজরত মানজাহ বিন সাহায,

১০২। হজরত মাওকা বিন সামামা আসাদি,

১০৩। হজরত নাফে বিন হেলাল রাজালি,

১০৪। হজরত নাসর বিন আবি নেযজার,

১০৫। হজরত নুমান বিন আমরু রাসেবি,

১০৬। হজরত নাঈম বিন আজলান আনসারি,

১০৭। হজরত ওয়াজেহ রুমি,

১০৮। হজরত ওহাব বিন আবদুল্লাহ কালবি,

১০৯। হজরত ইয়াহিয়া বিন সালিম মাজানি,

১১০। হজরত ইয়াজিদ বিন সাবির আবদি,

১১১। হজরত ইয়াজিদ বিন যিয়াদ আবুল শাশা,

১১২। হজরত ইয়াজিদ বিন মাকাল।

এসব মহান শহীদদের নিয়ে হজরত ইমাম হোসেন রাঃ ও তাঁর পরিবারবর্গের শহীদানের মোট সংখা ১৩০ জন। (তথ্য সূত্র সিরাতে ইমাম হোসেন রাঃ - মুহসেন গাফফারি ইরানি।)


মসউদ-উশ-শহীদ

কোন মন্তব্য নেই: