শুক্রবার, ২ জানুয়ারী, ২০০৯

ইসলামে সামাজিক দায়বদ্ধতা


ইসলামে সামাজিক দায়বদ্ধতা


পৃথিবী বাস উপযোগী হতেই মহান আলস্নাহ্‌তায়ালা মানুষকে প্রেরণ করেন এ জগতে। তখন তারা নতুন পরিবেশে পরিবার সৃষ্টি করে বিবাহের মাধ্যমে। আর পরিবারের বিস্তৃতিতে গড়ে ওঠে সমাজ। মানুষ নিজের অস্তিôত্বের কারণেই সমাজবদ্ধভাবে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। ওই সমাজবদ্ধ জীবন-যাপনে নানা ভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে ইসলাম। কালক্রমে বংশবৃদ্ধির কারণে মানুষের মাঝে সামাজিক দায়িত্ব কর্তব্য বহুলাংশে বেড়ে যায়। সে চাহিদা মেটাতেই সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি সর্বাধিক গুরম্নত্ব প্রদান করেছে ইসলাম।
সামাজিক জীবন-যাপনে অনেক নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতি প্রতি পালন করতে হয়; কর্তব্য কর্ম দায়িত্বসমূহ নিষ্ঠার সাথে অনুশীলন করে প্রতিনিয়ত তৎপর হওয়া অপরিহার্য। আর এরই মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতিফলন ঘটে থাকে। তবে ইসলাম আবির্ভাবের পূর্বে তা বেশিকাল টেকেনি। তখনকার সামাজিক দায় টেকশই না হওয়ায় মানুষ সামাজিকভাবে বিভ্রান্তিতে পড়ে। আর তারা হয়ে পড়ে পরস্পরে বিচ্ছিন্ন। আরব জাতি তখন তিনশত গোত্রে বিভক্ত একটি জাতিতে পরিণত হয়। জীবনপ্রবাহকে সে সময় বিশৃঙ্খল করে তোলে। সে কারণে সমাজে হানাহানি, শত্রম্নতা প্রকটরূপে দেখে দেয়। মানুষ অন্য মানুষের প্রভু হয়ে বসে পেশীশক্তির বলে।
আরবের অরাজক এক অবস্থায় বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আবির্ভাব ঘটায় নবুয়্যতলাভের পর ইসলামের দাওয়াত মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের উপর মানুষের প্রভূত্বকে উৎখাত করেন এবং এক আলস্নাহ্‌র প্রভুত্বের ভিত্তিতে এক নতুন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করেন। সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তিনি (সাঃ) ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় গুরম্নত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তৎকালীন বিশৃঙ্খল আরব জাতিকে সুসংগঠিত করে বিশৃঙ্খল জীবন-প্রবাহ থেকে সুশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থায় নিয়ে আসেন। তিনি অনুকরণযোগ্য নিয়ম-কানুন, নীতি-পদ্ধতি সুসংগঠিত সমাজ গঠনে প্রতিষ্ঠা করেন।

নবী করীম (সাঃ) -এর প্রদর্শিত সমাজ ব্যবস্থায় নিজেদের টিকিয়ে রাখতে হলে পরিবার ও সমাজে মিলেমিশে থাকতে হবে। ওই মিলেমিশে থাকার মাঝে শান্তিô আর শান্তি, সুখ আর আনন্দ। পবিত্র কোরআনের সূরা-নাহ্‌ল-এর ২৮ আয়াতে আছে ‘আমরা কোন মন্দ কর্ম করতাম না’। এবং নিশ্চয়ই তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আলস্নাহ সবিশেষ অবহিত।” মানুষের উচিত নয় নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। সূরা-নাহ্‌ল-এর ১৯ আয়াতে আছে “তোমরা যা গোপন রাখ এবং যা প্রকাশ কর আলস্নাহ তা জানেন”। সমাজে তথা পৃথিবীতে যারা অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের জন্য আলস্নাহ সূরা আল বাকারার২৭ আয়াতে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন-এভাবে- ‘যে সম্পর্ক অড়্গুণ্ন রাখতে আলস্নাহ আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তারাই ড়্গতিগ্রস্ত।’ এছাড়াও সূরা-রা’দ এর২৫ আয়াতে আলস্নাহ্‌ ইরশাদ করেছেন, ‘যে সম্পর্ক অড়্গুণ্ন রাখতে আলস্নাহ আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য আছে লা’নত এবং তাদের জন্য আছে মন্দ আবাস।’ উলেস্নখিত আয়াত সমূহ থেকে আমরা অবহিত হলাম অশান্তি সৃষ্টি, সম্পর্ক ছিন্ন করা সমাজিক দায়বদ্ধতার পরিপন্থী ও ধ্বংসের পথে ধাবিত হওয়ার সামিল। যারা ঈমান এনেছে, অর্থাৎ হয়েছে মুসলমান, তারা আলস্নাহ্‌র নির্দেশ, নবী করীম (সাঃ) এর পরামর্শ থেকে অন্য পথে যেতে পারে না। তাইতো সূরা আল বাকারার ৮৩ আয়াতে আলস্নাহ্‌ ইরশাদ করেন, ‘মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন ও দরিদ্র্যদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে এবং মানুষের সঙ্গে সদালাপ করবে, সালাত কায়েম করবে ও যাকাত দিবে---’। অন্যত্র ৮৪ আয়াতে আছে--- ‘তোমরা পরস্পরে রক্তপাত করবে না এবং আপনজনকে স্বদেশ হতে বহিষ্কার করবে না’,--। সূরা তাহ্‌রীম -এর ৬ আয়াতে আলস্নাহ ইরশাদ করেছে ‘হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে রড়্গা কর দোজখ হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর’।

হ্যাঁ, ওই দোজখের আগুন থেকে বাঁচার জন্যই সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি অবশ্য যত্নবান হতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে সামাজিক দায়বদ্ধতা যেন আমাদের কোনরকম আচরণে ক্ষুণ্ন না হয়। প্রতিটি মানুষকে তাই সর্বোত্তম আচরণের মাধ্যমে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখার প্রয়াস চালাতেই হবে। হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) বলেছেন, “সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে” (মিশকাত শরীফ)। হাদীসে আরো পাই “সেই ব্যক্তি মু’মিন হতে পারে না, যে ব্যক্তি নিজে পেট ভরে পানাহার করে, কিন্তু তার পার্শ্বেই প্রতিবেশী খাদ্যের অভাবে অভুক্ত থাকে।” (মিশকাত-বায়হানী)। তাই নবী করীম (সাঃ) -এর পরামর্শমতো চলতে হবে। আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখতে হবে জান্নাতে যেতে চাইলে এবং মু’মিন হতে হলে প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর অবশ্যই রাখতে হবে। এ সবের জন্যই সামাজিক দায়বদ্ধতায় সকলের সাথে মিলেমিশে থাকতে হবে। নবী করীম (সাঃ) আদর্শ স্থানীয় ভাবে সকলের সাথে মিলেমিশে থাকতেন, স্বাতন্ত্র্য মর্যাদা বজায় রেখে চলতেন না। মাঝে মাঝে তিনি (সাঃ) হাসি-কৌতুকও করতেন। তবে সে কৌতুকও হতো সত্য কথায় বাস্তôবসম্মত। কাউকে কটাড়্গ করে বা অবাস্তব কথা বলে তিনি কৌতুক করতেন না (শামায়িলে তিরমিজী-১৫)। রাসূলে আকরাম (সাঃ) স্বীয় পরিবারের লোকদের ব্যাপারেও খুব লড়্গ্য রাখতেন। যাতে তার জন্য তাদের কোন রকম কষ্ট না হয়। এজন্য রাতে ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন হলে অত্যন্ত ধীরস্থির ভাবে উঠে জুতা পরিধান করতেন এবং নিঃশব্দে দরজা খুলে বের হতেন। অনুরূপ ভাবে ঘরে প্রবেশ করার সময়ও নিঃশব্দে প্রবেশ করতেন, যাতে কারো ঘুমের কোন প্রকার ব্যাঘাত না ঘটে (মিশকাত-১৮১-১৮২)।

নবী করীম (সাঃ) পারিবারিক দায়িত্ববোধ থেকে এবং সামাজিক কর্তব্য থেকেও দিনের সময়কে তিন ভাগ করে এক ভাগ আলস্নাহর ইবাদত ও দ্বীনের কাজ, একভাগ পরিবার -পরিজনের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য এবং আর এক ভাগ ব্যক্তিগত কাজ ও নিজের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট করে নেয়ার তালীম দিতেন (উসওয়ায়ে রাসূলে আকরাম, ১০৪)। একবার ক’জন সাহাবীর সাথে আলাপ করলে নবী (সাঃ) বলছিলেন, ‘জিবরাইল (আঃ) প্রতিবেশীদের সাথে কি ধরণের সম্পর্ক থাকা উচিত এবং তাদের প্রতি, দায়-দায়িত্ব পালনে কেমন আচরণ করা উচিত সে বিষয়ে গুরম্নত্বের পরামর্শ দিতে গিয়ে শেষপর্যন্ত সম্পদের অংশীদারিত্ব দিয়ে দিতে বলেন কিনা তেমন চিন্তায় পড়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে ধরনের পরামর্শ আসেনি। এ থেকে প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্কের গুরম্নত্ব অনুধাবন করা যায়।

কোন আত্মীয়ের দুর্ব্যাবহার পেলে তাকে মাফ করে দিয়ে তার সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে (বুখারি শরীফ-২:৮৮৬১। অমন পরামর্শ আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ)’র ছিল। প্রতিবেশীর প্রতি দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে নবী করীম (সাঃ)-এর প্রবল তাগিদ, তিনি বলেছেন- “সে আমার উম্মত নয়, ‘যে প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর করে না।” তিনি এও পরামর্শ দিয়েছেন, পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তôানসহ সকল আত্মীয়-স্বজন ও মুসলমানদের হক আদায়ে সচেষ্ট থাকতে হবে। মোট কথা, মানুষের হকের ব্যাপারে খুব বেশি ফিকির রাখা অবশ্যম্ভাবী, নতুবা সমস্ত ইবাদত বিফলে যাবে। ওই ‘হক’ হচ্ছে পারিবারিক-সামাজিক দায়বদ্ধতা। এ দায়বদ্ধতা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখলে ব্যক্তির ইবাদতসমূহ কোন কাজে আসবে না।
মুসা (আঃ) আলস্নাহকে এক সময় বলেন, আলস্নাহ্‌ আমি তো তোমার জন্য ইবাদত করি, রোজা রাখি, তোমার নির্দেশ অন্তôর দিয়ে পালন করি, তুমি কি আমাকে ড়্গমা করবে না? তখন-এর জবাবে আলস্নাহ্‌ বলেন, তুমি নামাজ পড়ো দোজখের শাস্তি থেকে রড়্গা পেতে, রোজা রাখো আগুন থেকে রড়্গার ঢাল হিসেবে, ইবাদত করো তোমার কল্যাণের নিমিত্তে এগুলো সব তোমার নিজের জন্য আমার জন্য কিই বা করলে? হে আলস্নাহ্‌ তাহলে! তুমি কি মানুষকে ভালোবাসা দাও! মানুষকে ভালোবাস তবেই আমার জন্য কিছু করা হবে। এখানেও মানুষ তথা সামাজিকবৃন্দের প্রতি অশেষ গুরম্নত্ব প্রদান করেছেন আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন। অন্যদিকে মুসলিম হাদীসে উলেস্নখ রয়েছে- “যে বান্দা তার ভাইয়ের সাথে শত্রম্নতা পোষণ করে সে ছাড়া প্রত্যেক মুমিন বান্দাকে মাফ করে দেয়া হয়।”

সমাজকে গতিশীল রাখার জন্য শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আদর্শও বাস উপযোগী সমাজ প্রতিষ্ঠায় মানুষের অনেক কিছু করনীয় রয়েছে। দায়বদ্ধতা নিয়ে তা করতে হবে। তাই সামজের মাঝে মানুষে মানুষে বিরোধ দেখা দিলে তা মিটিয়ে ফেলার প্রয়াস নিতে হবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের সূরা-শূরার ৪০ আয়াতে আছে” যে ড়্গমা করে দেয় ও আপোষ নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আলস্নাহর নিকট আছে। আলস্নাহ জালিমদেরকে পছন্দ করেন না।’ অন্য এক আয়াতে (সূরা-শূরা-আয়াত-৪৫) আছে--- ‘ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যারা নিজেদের ও নিজেদের পরিজনবর্গের ড়্গতিসাধন করেছে।’ জেনে রাখ জালিমরা অবশ্যই ভোগ করবে স্থায়ী শাস্তিô। সমাজকে সুদৃঢ় সহঅবস্থান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার মধ্যে দায়বদ্ধতায় আবদ্ধ রাখতে হলে প্রয়োজন ধৈর্য ও ড়্গমা।

সমাজে নানারকম বৈষম্য দেখা যায়। বৈষম্যের কারণে মানুষে মানুষে নানারকম অবস্থার সৃষ্টি হতে থাকে। ফলে সমাজ হয়ে পড়ে বন্ধনহীন, ওই বন্ধন অটুট রাখার লড়্গ্যে আলস্নাহ পাক ইরশাদ করেছেন- ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে (দান খয়রাত দেয়, অপরকে সাহায্য করে) এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ড়্গমাশীল; আলস্নাহ্‌ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালোবাসেন, (সূরা-আল-ইমরান-আয়াত-১৩৪১)। সামাজিকদের মাঝের বৈষম্য দূর করার মাধ্যমে মনুষ্য সমাজের প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতা প্রতিপালন এভাবেই করা অবশ্যই সম্ভব। আর এর ফলে মানুষে মানুষে সম্পর্কের বন্ধন মজবুত হয়। এর পাশাপাশি হাদীসে আছে-অন্যের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত তোমার কাছে পবিত্র আমানত, এর খেয়ানত করা হারাম।’ হাদীসে সামাজিকতাকে অনেক গুরম্নত্ব দেয়ায় আমরা সেখানে পাই- ‘যে বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না, সে আমার উম্মত নয়’। এর চাইতে শক্ত কথা আর কি হতে পারে। এ হাদীস থেকে এ কথাই প্রতীয়মান হয় সমাজকে আদর্শের রজ্জুতে বাধতে হলে এ ধরনের কাজ সকলকে অবশ্যই করতে হবে। তাহলে সমাজের প্রবহমানতা স্বচ্ছভাবে বিদ্যমান থাকবে।

‘মানবতার সেবায় যিনি নিজের জীবন নিঃশেষে বিলিয়ে দিতে পারেন, তিনিই মহামানব। যার থেকে (প্রতিবেশীর) ড়্গতির কোন আশঙ্কা নেই তিনি উত্তম একজন মানুষ, ঈমানদার একজন মানুষ।’ হাদীসের এসব বাণীতে সামাজিকতার প্রতি কতটা গুরম্নত্ব দেয়া হয়েছে তা উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না। এমনকি বিপদগ্রস্তেôর পাশে দাঁড়াতে হাদীসে তাগিদ রয়েছে। এও বলা হয়েছে, ‘রোগীর সেবা ও শুশ্রূষাকারী নিজ গৃহে ফিরে না আসা পর্যন্ত বেহেস্তের পথে চলতে থাকে’। মানবতার অনুরূপ সেবা সামাজিক দায়বদ্ধতার উজ্জ্বলতম উলেস্নখযোগ্য দৃষ্টান্ত। স্বজনত্যাগীর পরিবারে আলস্নাহর রহমত অবতীর্ণ হয় না। তাইতো হাদীসে এসেছে -“সকল মুসলমান (সম্মিলিতভাবে) যেন একটি প্রাচীর, যার প্রতিটি অংশ বাকি অংশগুলোকে দৃঢ় করে। এমনিভাবে তারা নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠিত হবে একে অন্যের সহায়তায়”। ‘মুসলমান ভাইকে মুসলমান ভাই সাহায্যে করবে, সে অত্যাচারিত হোক বা অত্যাচারী হোক’। কিন্তু সে অত্যাচারী হলে কিভাবে আমারা সাহায্য করব? রাসূলে আকরাম (সাঃ) বললেন, ৈ‘তাকে অত্যাচার করা থেকে নিষেধ ও নিরস্তô করবে’। মানুষের সাথে আচরণে শিষ্টতা, কর্মে ধীরতা ও সর্ব বিষয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন নবূয়াতের চব্বিশ ভাগের এক ভাগ’। ওই মানুষ (মুসলমান) জনসাধারণের সাথে মিশে তাদের সৃষ্ট অসুবিধাগুলো সহ্য করে, সে তার চেয়ে উত্তম যে তাদের সাথে মেশে না ও সহ্য করে না।’ এছাড়াও বলা যায় ৈ‘লোকে তোমাদের ভাল করলে তোমরা তাদের ভাল করবে, আর তারা তোমাদের পীড়ন করলেও, তোমরা তাদের পীড়ন করবে না।’ জ্ঞাতিদের উপকার করা, তারা না করলেও’। সেইসাথে লোকজনের সঙ্গে, নম্র ব্যবহার করবে, কঠোর হবে না; তাদের প্রফুলস্ন করবে, নিন্দা করবে না।’ এ সকল হাদীস মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রেখে থাকে। ফলে সামাজিক সহঅবস্থান আরো ভাল হয়, সম্পর্কের বন্ধন হয় অটুট।
মুসলমানদের গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে ভাগ হতে বলেননি, বরং ধ্বংসের/বিনাশের হাত থেকে বাঁচার জন্য নবী করীম (সাঃ) ও তাঁর প্রিয়জনের অনুগামী থাকার মতাদর্শে সংলগ্ন থাকারই জন্য সতর্কতা প্রদান করেছেন। এ ব্যপারে আলস্নাহ্‌ পাক ইরশাদ করেছেন- ‘তোমরা সকলে আলস্নাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না। তোমাদের পতি আলস্নাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, তোমরা ছিলে পরস্পর শুত্রম্ন এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা তো অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তেô ছিলে আলস্নাহ তা থেকে তোমাদের রড়্গা করেছেন”---

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে হলে সামাজিক দায়বদ্ধতাকে অনুশীলনের প্রয়াস ঐকান্তিôকতার সাথে চালাতে হয়।”
মূলকথা হচ্ছে ইসলামের গুরম্নত্বনুযায়ী মহানবী (সাঃ)- এর জীবনাদর্শ ও শিড়্গাকে অনুশীলন করে সামাজিক দায়বদ্ধতার গুরম্নত্বকে যথাযথ অনুধাবনের মাধ্যমে জীবন-যাপন করতে হবে। দুনিয়ার সুখ-শান্তি অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে আমাদের সকল প্রকার বিদ্বেষ, ঈর্ষা ভুলে গিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও সামাজিকবৃন্দের সাথে সুসম্পর্ক গড়ায় আরো সর্তক, সচেতন ও আন্তরিক হওয়া সমীচীন!

জাহাঙ্গীর হাবীব উলস্নাহ

কোন মন্তব্য নেই: