শনিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০০৯

মানুষের মুক্তি লাভের উপায়

মানুষের মুক্তি লাভের উপায়



মানুষ পরস্পর ভাই ভাই। পৃথিবীতে তারা তাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আলস্নাহ তাআলার নির্দেশনায় চলবে এবং সেখানে কোন প্রকার অন্যায়-অবিচার করবে না, অহেতুক ঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হবে না এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না, এটাই ছিল মহান আলস্নাহ তাআলার অভিপ্রায়। সুসময়ে মানুষ আলস্নাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং অসময়ে, বিপদাপদে, ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণে এর সমাধানের পথ বেছে নিবে। যারা মহান আলস্নাহ তাআলার নির্দেশনা থেকে মুখ ফিরাবে এবং এর বিরম্নদ্ধাচারণ করবে, তাদের ধ্বংস অনিবার্য। কেননা, তাঁর নির্দেশ অমান্য করাতে এর মধ্যে পৃথিবীর বহু মানব জাতি ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আলস্নাহ তাআলা বলেনঃ “অতঃপর যখন আমার পড়্গ হতে তোমাদের নিকট সৎ পথের কোন নির্দেশ আসবে, তখন যারা আমার সৎ পথের নির্দেশ অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। আর যারা অবিশ্বাস করবে ও আমার নির্দেশকে প্রত্যাখ্যান করবে, তারাই অগ্নিবাসী সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সূরা বাকারা-৩৮-৩৯)।
পৃথিবী এখন আশান্ত এবং নানা কারণে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার জালে নিমজ্জিত হয়ে আছে। তদুপরি সারা বিশ্বের ড়্গমতাধর মানুষেরা ক্ষমতার লোভে এবং আত্মকলহের দ্বন্দ্বে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত রয়েছে। তাই মহান আলস্নাহ রাব্বুল আলামীনের কঠোর বাণী এদের সম্পর্কে পবিত্র আলকুরআনে বর্ণিত হয়েছে। মহান আলস্নাহ বলেন, “তোমরা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না, নিশ্চয়ই আলস্নাহ তাআলা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা কাসাস-৭৭) মহান আলস্নাহ আরো বলেন, “শৃঙ্খলাপূর্ণ পৃথিবীতে তোমরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না। (সূরা আ’রাফ-৫৬)। আলস্নাহ তাআলা মানুষকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসাও প্রীতির বন্ধন দিয়ে।
কিন্তু মানুষ আলস্নাহ তাআলার এ নিয়ম ভুলে গিয়ে পরস্পরে অপরাধ ও দুর্নীতিতে আবদ্ধ হয়েছে। তাই মানুষ যেন আলস্নাহর নির্দেশে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও প্রীতি প্রেমের বন্ধনে আসক্ত হয়, এ সম্পর্কে নির্দেশ দেন। আলস্নাহ তাআলা বলেন, হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি পালককে ভয় কর। যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন, যিনি তাদের দু’জন থেকে বহু নর-নারী (পৃথিবীতে) বিস্তার করেন। এবং আলস্নাহকে ভয় কর যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচাই কর, জ্ঞাতি বন্ধন ছিন্ন করাকে ভয় কর অর্থাৎ তোমরা মানুষ হিসেবে পরস্পর ভাই ভাই। নিশ্চয়ই আলস্নাহ তাআলা তোমাদের উপর তীড়্গ্ন দৃষ্টি রাখেন।” (সূরা আন্‌-নিসা-০১)। পৃথিবীর শাসকদের প্রতি মহান আলস্নাহ তাআলার নির্দেশনা এই যে, হে ড়্গতার অধিকারীরা! ড়্গমতা পেয়ে অন্যায় ও অবিচারে এবং মানুষের অকল্যাণে নিজকে নিয়োজিত করো না। সকল ক্ষমতার মালিক মহান আলস্নাহ তাআলাই। তিনিই সম্মান ও ঐশ্বর্য দানের মালিক। তিনিই জীবন ও মরণের মালিক এবং সকল প্রতিপত্তির অধিকারী।
এ সম্পর্কে মহাগ্রস্থ আল কুরআন ইরশাদ হচ্ছে “(হেনবী) আপনি বলুন! ‘হে সার্বভৌম শক্তির মালিক মহান আলস্নাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর, এবং যার থেকে ইচ্ছা রাজ্য কেড়ে নাও, এবং যাকে ইচ্ছা সম্মানিত কর, আর যাকে ইচ্ছা অপমানিত কর। যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে। নিশ্চয়ই তুমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। তুমি রাতকে দিনে, দিনকে রাতে পরিবর্তন কর, এবং তুমিই মৃত হতে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও, আবার জীবন্ত থেকে মৃতের আবির্ভাব ঘটাও। তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করে থাকো।” (সূরা আল-ইমরান- ২৬-২৭)।
পৃথিবীতে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি তখনই আসবে, যখন মানুষ ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করবে। এছাড়া পরস্পরে হানাহানি, আত্মকলহ, ও হিংসা-বিদ্বেষ বন্ধ করে, প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ও সমঝোতার দিকে হাত বাড়াবে এবং সকল প্রকার স্বার্থের মাথায় আঘাত করে ত্যাগের বিনিময়ে মানুষের মন জয় করতে সচেষ্ট ও নিবেদিত প্রাণের অধিকারী হবে। এই অস্থায়ী পৃথিবীতে ত্যাগেই আনন্দ এবং ভোগে শুধু শুধু দুঃখ ও অশান্তির যন্ত্রণা বাড়ে।

মহান আলস্নাহ তাআলা মানবজাতির দায়িত্ব রক্ষা এবং এর সৎ ব্যবহার সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বিবৃত করে বলেন, ‘ইরশাদ’ হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করে ও সৎ কাজ করে আলস্নাহ তাআলা তাদের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন যে, তিনি তাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব (শাসন ক্ষমতা) দান করবেনই, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন, সুদৃঢ় করবেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে তাদের নিরাপত্তা দান করবেনই। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার কোন অংশী করবে না, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারাই সত্য ত্যাগী। যথাযথভাবে নামাজ আদায় কর, যাকাত দাও (দান কর) এবং রাসূলের অনুগত্য কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহ ভাজন হতে পার। তোমরা অবিশ্বাসীদের পৃথিবীতে প্রবল মনে করো না। ওদের আশ্রয়স্থল অগ্নি; কতই না নিকৃষ্ট এ পরিণাম।(সূরানূর-৫৫-৫৭)

মহান আলস্নাহ পূর্ববর্তী নবী রাসূলের উম্মতদের সম্পর্কে বলেন, “(হে সামুদজাতি) স্মরণ কর তখনকার কথা, যখন তিনি (আলস্নাহ) আদ কওমের পরে তোমাদেরকে খলিফা (শাসক) নিযুক্ত করেছিলেন।”(সূরা-আরাফ-৭৪)
হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলিফা নিযুক্ত করেছি। অতএব তুমি লোকদের মধ্যে পরম সততা সহকারে নির্দেশ চালাও।”(সূরা ছোয়াদ-২৬)
পৃথিবীতে শৃঙ্খলা সৃষ্টি, শান্তি স্থাপন এবং মনাব সমাজকে আলস্নাহর পথে দিক-নির্দেশনা দিতে হলে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নামের হাদীসগুলো খুবই প্রণিধানযোগ্য।
রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) সাহাবাগণকে সম্বোধন করে বলেন, এমন একটি সময় আসবে যখন অন্ধকার রাত্রির ন্যায় ফিতনা-ফাসাদ সমগ্র দুনিয়াকে সম্পূর্ণরূপে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। একজন সাহাবী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আলস্নাহর রাসূল (সাঃ) সেই বিপদ হতে বাঁচার উপায় কী? রাসূলুলস্নাহ (সাঃ) বলেন, আলস্নাহর কুরআনে, আলস্নাহর দেয়া বিধানই বাঁচবার একমাত্র উপায়। তাতে অতীতের জাতিগুলোর ইতিহাস আছে। ভবিষ্যতের মানব বংশের অবস্থা ও ঘটনাবলী সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে এবং বর্তমানের প্রেড়্গাপটে তোমাদের পারস্পরিক বিষয় সম্পর্কীয় রাষ্ট্রীয় আইন-কানুনও তাতে রয়েছে। বস্তুত উহা এক চূড়ান্ত বিধান, উহা কোন সাধারণ জিনিস নহে। (সহীহ্‌ তিরমিযী)।
রাসূলুলস্নাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এই বিধান (কুরআন) অনুসারে জীবন-যাপন করবে, যে, উহার প্রতিফল লাভ করবে। যে উহার অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, তার শাসন সুবিচারপূর্ণ হবে এবং যে উহাকে দৃঢ়রূপে আঁকড়িয়ে ধরবে, সে সঠিক এবং সত্যিকার কল্যাণের পথে পরিচালিত হতে পারবে।
মাওলানা মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ইবনে ইউসুফ

কোন মন্তব্য নেই: