আল্লাহতায়ালার প্রতি ভালোবাসা
যাকে ভালোবাসা যায়, জান দিয়ে তার সন্তুষ্টির জন্য নৈকট্য অর্জনই ভালোবাসার প্রকৃত পরিচয়। এটিই হচ্ছে আল্লাহর প্রতি সঠিক মুহাব্বত ও অন্তরের গভীরতম প্রদেশ থেকে সঠিক ভালোবাসার নমুনা। এ সম্পর্কে রাসূলে করিম সাঃ এরশাদ করেছেন আল্লাহপাক পরওয়ার দেগারের ইচ্ছায় রাজি (খুশি) থাকাই হচ্ছে মুহাব্বতের বড় দরজা। ভালোবাসা প্রবল ও খাঁটি হলে অন্য কোনো কিছু সেখানে দাঁড়াতে পারে না। কোনো রকম প্যাঁচপয়জার ছাড়াই মুহাব্বতই কেবল প্রাধান্য লাভ করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি মুহাব্বত সব কিছুর ঊর্ধ্বে। সুতরাং এই মুহাব্বত ও ভালোবাসা সত্যিকারভাবে প্রমাণিত হবে আল্লাহপাকের প্রতি আনুগত্যের ভেতর দিয়ে। আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি-মর্জি যে চায় সে উচ্চ মরতবায় পৌঁছে যায়। কেননা সে তো যেকোনো কোরবানি (ত্যাগের) পরিবর্তে আলামিনের খুশি তালাশ করে। অদৃশ্য হাতের কারসাজিতে দুঃখ-কষ্ট অ্লান বদনে হজম করে। রাজহাঁসের মতো পানি ও দুধ থেকে পানিটুকু (দুঃখ) উগরে ফেলে দুধ (সুখ) টুকু সে শুষে নিতে জানে। মনের জোর উন্নয়নের ধারায় বজায় রেখে আল্লাহপাকের হুকুম-আহকাম নিবেদিত চিত্তে পালন করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি মুহাব্বত সম্পর্কে হজরত হাসান বসরি রহঃ বলেছেন, আল্লাহর মুহাব্বত যার হাসিল হয় সে সত্যিকারভাবে আল্লাহকে খাসভাবে ভালোবাসতে শুরু করে। আর যে দুনিয়াকে কিনে ফেলে সে দুনিয়াকে মুহাব্বত করতে শুরু করে। সে আর রাব্বুল আলামিনের মুহাব্বত করতে পারে না। মুমিন মুসলমান কেবল আদেল অবস্থায় খুশি হতে পারেন। কেননা যার মধ্যে আল্লাহর স্মরণ থাকে সে চিন্তিত না হয়ে পারে না। একবার হজরত ঈসা আঃ কিছু লোককে জীর্ণশীর্ণ বেশে দেখতে পান। তাদের প্রশ্ন করেন তাদের এ হাল কেন। উত্তরে তারা বলেন, সারাক্ষণ তারা খোদার ভয়ে ভীত থাকেন। হজরত ঈসা আঃ তখন বলেন, আল্লাহপাক তোমাদের ভালোবাসেন।
কাজেই এ কথা বলা যেতে পারে দুনিয়ার সব কাজকর্ম এবং নেক আমল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি ভালোবাসা দৃঢ় করার উপলক্ষ মাত্র। রাহমানুর রাহিমের মুহাব্বত অর্জনের সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে বহু রৈখিক সংগ্রাম দিয়ে তার প্রতি গভীর ধ্যান-আত্মসমর্পণ ও মনোনিবেশ করা। রাসূল সাঃ এরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহপাক ও তার পেয়ারা রাসূলকে দুনিয়ার সব কিছু হতে ভালো না বাসে তার ঈমানের আকিদা পূর্ণ নয়। ঘটনাচক্রে এক সাহাবি হজরত মুহাম্মদ সাঃ-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘ঈমান কী’? জবাবে রাসূল সাঃ বলেছিলেনঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এবং তদীয় প্রিয় রাসূল সাঃ-এর সাথে সর্বাপেক্ষা অধিক মুহাব্বতের নাম ঈমান। কেউ পূর্ণ মুসলমান হতে পারবে না যতক্ষণ সে তার পরিবার-পরিজন ধনদৌলত এবং দুনিয়ার সব কিছু থেকে আল্লাহ ও তদীয় রাসূল সাঃ-কে অধিকতর মুহাব্বত ও ভালোবাসবে।
মোটকথা মানুষের ভালোবাসার একমাত্র লক্ষ্য হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আমাদের জীবনে ডুবন্ত নৌকা থেকে পানি ঝেড়ে ফেলার জন্য এক আল্লাহ ব্যতীত মুহাব্বত বা ভালোবাসার কেউ নেই। যে আল্লাহকে ভুলে দুনিয়া নিয়ে মত্ত থাকে তার মতো জাহেল ব্যক্তি আর কেউ নেই। যারা মাতা-পিতা, ভাই-বোন, স্ত্রী-পুত্র, আত্মীয়স্বজন এবং গরিব-দুঃখীজনকে মানবতার দৃষ্টিতে যথারীতি ভালোবাসে, সে মূলত আল্লাহরই হুকুমের তাঁবেদারি করে। যারা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে মুহাব্বত করে এবং হজরত মুহাম্মদ সাঃ ও অন্য নবী-পয়গম্বর, অলি-আউলিয়াদের মুহাব্বত করে তাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর রহমত, বরকত, নেয়ামত ও অশেষ করুণা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি মুহাব্বত ও ভালোবাসার দৃষ্টান্ত অনেকই আছে। যারা আল্লাহ পাকের খুশি ও মর্জিতে খুশি থাকে এবং আল্লাহ মহানের জন্য সর্বাবস্থায় আত্মসমর্পিত থাকে এবং যত বড় দুঃখ-কষ্ট আসুক না কেন তারা আল্লাহর কথা স্মরণ করে নিজেকে ধীরস্থির রাখতে পারে, তারাই কার্যত আল্লাহপাকের মুহাব্বত ও ভালোবাসায় নিজেকে নিবেদিত চিত্তে উৎসর্গ করতে পেরেছে। কথিত আছে হজরত আয়েশা রাঃ একটি নখ এক সময় উপড়ে যায়। তা দেখে হজরত মুহাম্মদ সাঃ বলেন তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। উত্তরে আয়েশা রাঃ বলেন, এ কষ্ট যন্ত্রণার বদলে পরবর্তী পুরস্কারের আনন্দ অ-নে-ক বেশি। অতএব বলা যেতে পারে, দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হবে। কেননা পরকালে আল্লাহ পাকের মুহাব্বত ছাড়া অন্য কোনো সম্বল নেই। সুতরাং সেই ব্যক্তি সবচেয়ে সৌভাগ্যশালী, যে আল্লাহর মুহাব্বতের রঙে রঞ্জিত। নিজেকে যে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করেছে সে-ই মঙ্গল ও কল্যাণ লাভ করেছে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে বিফল মনোরথ হয়ে পড়বে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের হুকুম-আহকাম যথাযথ পালন করে সত্যিকারভাবে মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ইহ ও পরলৌকিক সুখ ও শান্তিময় করে রাখতে সচেষ্ট হই। রাব্বুল আলামিনের মুহাব্বত ও ভালোবাসার স্বীয় জীবনের প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস অতিবাহিত করতে পারি আল্লাহপাক যেন আমাদের সেই তৌফিক দেন।
রেহানা ফারুক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন