জাতীয় মসজিদের জন্য কেমন খতিব চাই
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এ দেশের মুসলমানদের মসজিদভিত্তিক জাতীয় জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। এ মসজিদ এক দিকে যেমন ইসলামি ঐতিহ্য, কৃষ্টি-কালচার ও স্থাপত্য শিল্পের উজ্জ্বল নিদর্শন, ঠিক তেমনি এর সাথে রয়েছে দল-মত নির্বিশেষে এ দেশের প্রতিটি মুসলমানের অবিমিশ্র ঈমান ও আত্মার সম্পর্ক। এ মসজিদ আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ ও জাতিসত্তার পরিচায়ক ও স্মারকও বটে। যিনি মসজিদের খতিব হবেন তিনি ১৪ কোটি বাংলাদেশী মুসলিম জনগোষ্ঠীর মুরুব্বিও। তিনি অবশ্যই সর্বজনশ্রদ্ধেয় এবং সম্মানিত হবেন। আর এমন একজন ব্যক্তিত্ব দল, মত ও সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে থেকে জাতিকে সঠিক পথের নির্দেশনা দেবেন।
এ মসজিদের যিনি খতিব হবেন তিনি অবশ্যই অত্যন্ত উঁচু দরের একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ব হবেন এবং একই সাথে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও হবেন সুপরিচিত। বিশ্ব ইসলামি সংস্থা ও সংগঠনগুলোতে তার সম্পৃক্ততা এবং গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক ইসলামি ব্যক্তিত্ব বা স্কলারদের সাথেও তার সখ্য ও অভিন্ন আকিদা থাকতে হবে।
মরহুম মাওলানা উবায়দুল হক রহঃ বহুলাংশে সেই মানের লোকই ছিলেন। তার ইন্তেকালের পর সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য চাই সেই মাপের একজন মানুষ। উপমহাদেশের দীনি শিক্ষার ধারা মূলত দু’টি একটি কওমি নেসাব আর অন্যটি হলো আলিয়া নেসাব। কওমি নেসাবের প্রাণকেন্দ্র দেওবন্দ মাদ্রাসার কথা বাদ দিলে এ দেশে এলমে দীনের কথা কল্পনাও করা যায় না। বলা বাহুল্য, মরহুম মাওলানা উবায়দুল হক রহঃ ছিলেন সমান তালে এ দু’টি ধারায় সঞ্জীবিত এক সার্থক পুরুষ। যিনি তার স্থলাভিষিক্ত হবেন তাকে অবশ্যই এ দু’টি মৌল ধারার সাথে সম্পৃক্ত থাকা প্রয়োজন। আগেই বলা হয়েছে, বায়তুল মোকাররম আমাদের ঈমান, আকিদা ও ইসলামি আদর্শবাদের জাতীয় প্লাটফর্ম এবং তার খতিব হলেন জাতির মুখপাত্র। আমাদের এ জাতীয় প্লাটফর্মের কেন্দ্রীয় সদর দফতর হলো পবিত্র মক্কা- মদিনা। সুতরাং আমাদের জাতীয় মসজিদের সম্মানিত খতিব সাহেব স্বভাবসিদ্ধভাবেই সদর দফতর কাবাকেন্দ্রিক জীবনাদর্শে উজ্জীবিত হবেন।
যিনি জাতীয় মসজিদের খতিব হবেন তার বংশ পরিচয়, ছেলেবেলা, শিক্ষাদীক্ষা, চাকরি বা কর্মজীবন, অর্থনৈতিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, আকিদা-বিশ্বাস, দীনদারি-পরহেজগারি, দেশ-জাতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসা এবং অবস্থান ইত্যাদি ব্যাপারে জাতির কাছে সুস্পষ্ট স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। তিনি দেশ, মানুষ ও সমাজের জন্য কী অবদান রেখেছেন? স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবস্থান কী ছিল? ইসলামের জন্যই বা তার কী অবদান আছে? এ জাতীয় সব প্রশ্নের স্বচ্ছ এবং সুস্পষ্ট ইতিবাচক ধারণা থাকা প্রয়োজন। দুঃখের বিষয় এসব কোনো কিছুই বিবেচনা না করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বায়তুল মোকাররমের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ মসজিদের খতিব নিয়োগে উদ্যোগী হলে এ পদের ভাবমর্যাদা এবং সম্মান দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হবে।
আমরা বায়তুল মোকাররমের খতিব নিয়োগ নিয়ে যে বিতর্কের জন্ম হয়েছে সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুর্ভাগ্যজনক মনে করি। আমরা এ ইস্যুতে সকল বিতর্কের অবসান চাই। চাই এমন একজন মানুষ যার ব্যাপারে কারো পক্ষ থেকে আমলে নেয়ার মতো কোনো বিতর্ক থাকবে না।
মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন