বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০০৮

আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলে করিম (সা·) এর সন্তুষ্টি অর্জন


আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলে করিম (সা·) এর সন্তুষ্টি অর্জন



তরীকা আবরী শব্দ, এর অর্থ পথ-পন্থা, রাস্তা উপায়-পদ্ধতি বা রীতি-আদর্শ। সোজা কথায় যে আদর্শকে অনুসরণ করে মহান আলস্নাহপাক ও রাসূলে করিম (সা·)-এর সন্তুষ্টি অর্জিত হয় সেই পথ বা পন্থা-পদ্ধতিকে তরীকা বলে। মহান আলস্নাহপাক পবিত্র কোরআনুল করিমে সূরা তওবার ১১৯ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেছে।

“কূ-নূ মা’ আচ সা-দিকীন”

অর্থঃ তোমরা সাদিক(সত্যবাদী ) লোকের সঙ্গী হও।

সকল হক্কানী তাফসীরে সাদেকীন দ্বারা পীর-মাশায়েখগণকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। তাই পীর-অলী-আলস্নাহগণের সান্নিরধ্য লাভ করার কথা আলস্নাহ তা’য়ালা কুরআন পাকেই বলেছেন এবং পীর, অলী, আলস্নাহগণের তরীকা গ্রহণ করা অবশ্য কর্তব্য। মহান আলস্নাহ পাক কুরআনের অন্যত্র বলেছেনঃ

‘ইত্তাবি’ ছাবীলা মান আনা- বা ইলাইয়া”

অর্থঃ আমার দিকে যে ব্যক্তি রম্নজু হয়েছে, তার পুর্নাঙ্গ অনুসরণ কর। (সুরা লোকমান, আয়াত১ৈ৫)।

আলস্নাহ পাক কুরআনের অন্যত্র বলেছেন

“ইয়া আয়্যু হালস্নাযীনা আ-মানুত্তাকুলস্নাহা আবতাগু ইলাইহিল অসীলাহ।”

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা আলস্নাহ তায়ালাকে ভয় কর এবং তাহাকে পাওয়ার জন্য অসীলা (মাধ্যম) তালাশ কর।(সুরা মায়িদা, আয়াত-৩৫)।

বিভিন্ন তাফসীরে উলেস্নখ রয়েছে এই অসীলা হলো কামেল অলীআলস্নাহগণ। কামেল অলী আলস্নাহগণের পথই প্রকৃত সত্যের পথ আলস্নাহ তা’য়ালা যাহাদের মঙ্গল কামনা করেন তাহাদেরকে এই সত্য পথ দেখানোর জন্য কামেল পীরের সন্ধান মিলাইয়া দেন। তাই আলস্নাহ তা’য়ালা বলেনঃ “অ মাই ইউদলিল পালান তাজিদা লাহু অলিয়্যাম পুরশিদা” অর্থঃ যাহারা পথভ্রষ্ট, তাহারা কামেল মুর্শিদের সন্ধান পাবে না (সূরা কাহাফ আয়াত-১৭)। অর্থাৎ কামেল পীর ধরা তাদের নসীব হবে না। পীর ধরা, মুরীদ হওয়া, বাইয়াত হওয়া তরীকা গ্রহণ করা এসব কিছুরই একই অর্থ এবং এর উদ্দেশ্য হলো খোদা প্রাপ্তির পথ হাছিল করা। কুরআন শরীফে সূরা ফাতাহ এর ১০নং আয়াতে বাইয়াতের কথা উলেস্নখ আছে- । ইন্নাললস্নাযীনা ইয়ুবায়িউনাকা ইন্নামা ইয়ুবায়িউৗৗলস্নাহা ইয়াদুলস্নাহি ফাউকা আইদীহিম”

অর্থঃ হে নবী, যারা আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করল, তারা মূলত আমার হাতেই বাইয়াত গ্রহণ করল। আমার হাত তাহাদের হাতের উপর রহিয়াছে।

এই আয়াতের হুকুম কিয়ামত দিবস পর্যন্তô বহাল থাকবে। সেড়্গেত্রে এখনতো নবী রাসূল এর যুগ নয় দুনিয়াতে আর কোনো নবী রাসূল আসবেন না। এখন হল নায়েবে রাসূলের যুগ তথা বেলায়েতের যুগ। যাহারা আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন তাহারাই হলেন এই বেলায়েতের অধিকারী। যুগের মানুষকে তাহাদের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করা অর্থাৎ মুরীদ হওয়া একান্তô কর্তব্য ও জরম্নরি।

হাদীস শরীফে উলেস্নখ আছেঃ

“তালাবুল ইলমি ফারীদাতুন আ’লা কুলিস্ন মুসলিমিউ অ মুসলিমাতিন” অর্থঃ ইলম শিড়্গা করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরয। এই ইলম আবার দুই প্রকারঃ ইলমে শরীয়ত ও ইলমে মা’রিফাত। খোদা প্রাপ্তির পথে উভয় ইলমই অতীব জরম্নরি। এই উভয় বিদ্যা অর্জন করতে হইলে যাদের কাছে এই উভয় বিদ্যা আছে তাদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে হবে। এই শিষ্যত্ব গ্রহণ করাকেই তরীকা গ্রহণ করা বা মুরীদ হওয়া বলে।

ইমাম আজম আবু হানীফা (রা·) বলেনঃ “লাউলা-ছিনতা-নে হালাকা নু’মানু”।

অর্থ আমি নু’মান যদি (আমার মোর্শেদ ইমাম বাকের (র·)-এর) দুই বছর খেদমত না করিতাম তাহা হইলে ধ্বংস হইয়া যাইতাম।

তিনি আরো বলেনঃ

“ইলমে শরীয়ত বাহিরের দিককে পরিশুদ্ধ করে। আর ইলমে তাসাউফ ভিতরের দিককে পবিত্র করে”

যে ব্যক্তি ফিকাহ ও তাসাউফ আমল করল সে ব্যক্তি জাহেরী এবং বাতেনী উভয়দিক পরিশুদ্ধ হয়ে কামেল মু’মিনের দরজা লাভ করল। ইলমে মা’রিফাত আলস্নাহতা’য়ালার দেওয়া বিশেষ দান। এই ইলমে মা’রিফাত শিড়্গা করার জন্য হযরত মুসা (আ·) হযরত খিযির (আ·)-এর সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন।

বুখারী শরীফে অনেক জায়গায় হযরত মুসা (আ·) যে খিযির (আ·)-এ শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন তার প্রমাণ আছে। আলস্নামা জালালউদ্দীন রম্নমী (র·) বড় আলেম হওয়ার পরও তিনি হযরত শামছে তাবরিযী (র·)-এর কাছে তরীকা গ্রহণ করেছিলেন।

তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ মসনবী শরীফে উলেস্নখ করেন

“খোদ বাখোদ কামেল না শোদ মাওলায়ে রম্নম

তা গোলামে শামছে তামছে তাবরিযী না শোদ”

অর্থঃ আমি নিজে নিজে মাওলানা রম্নমী হইতে পারি নাই, যতড়্গণ পর্যন্তô না আমি শামছে তাবরিযী (র·)-এর গোলাম হয়েছি।

আলস্নামা রম্নমী (র·) বলেন-ঃ

“দর হাকীকত গাশতায়ী দূর আয খোদা

গর শুভি দূর আয ছোহবতে আওলিয়া”

অর্থঃ সত্যিকারে ঐ ব্যক্তিই আলস্নাহরতা’য়ালার নিকট হইতে দূরে আছে, যে ব্যক্তি অলী আলস্নাহগণের নিকট হইতে দূরে থাকে।

আলস্নামা রম্নমী (র·) আরো বলেনঃ

“আগারখাহী হাম নাশিনী বা খোদা

গো নাশিনাদ দর হুযুরে আওলিয়া”

অর্থঃ তোমরা যদি আলস্নাহর দরবারে বসতে চাও তবে অলী আলস্নাহগণের সামনে বস।

কুতুববাগ পাক দরবার শরীফে মহান আলস্নাহপাকও রাসূলে করিম (সা·)-এর আদর্শ অনুসরণের লড়্গ্যে প্রতিদিন অনুসারীগণ উপস্থিত হন। এইসব অনুসারীকে নিয়মিত অজীফাসমূহ পালন করতে হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের প্রাক্কালে অজীফাসমূহ পালন করতে হয়। ফজর নামাজের সময় ফাতেহা শরীফ ও খতম শরীফ অবশ্যই পাঠ করতে হয়। এছাড়াও রয়েছে দরম্নদ শরীফ ও নির্ধারিত মুনাজাত। কুতুববাগ পাক দরবার শরীফের অনুসারীদের যথাযথভাবে আদব-কায়দা পালন করতে হয়। এগুলো হলোঃ মুর্শিদের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা, নির্দেশ পালন, হুকুমের প্রতি বিশ্বাস, দরবারে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা, বার্ষিক অনুষ্ঠানে শরীক হওয়া এবং অনুমতি ছাড়া মুর্শিদের সঙ্গ না ছাড়া।
আল হাজ্ব মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান

কোন মন্তব্য নেই: