বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০০৮

ইসলামে নেতৃত্ব নির্বাচনের গুরুত্ব


ইসলামে নেতৃত্ব নির্বাচনের গুরুত্ব


হে নবী! নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি পূর্ণ কুরআন পরম সত্যতার সাথে এ জন্যই নাজিল করেছি যে, তুমি সে অনুযায়ী মানুষের ওপর আল্লাহর দেখানো পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এবং বিচার-ইনসাফ কায়েম করবে কুরআন অনুযায়ী, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায় না তুমি এসব খিয়ানতকারীকে সাহায্যকারী এবং পক্ষাবলম্বনকারী হয়ে যেয়ো না (সূরা নিসাঃ ১০৫ আয়াত)। আমাদের সামনে আর কিছু দিন পরই নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসছে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে এখন নির্বাচনী হাওয়া প্রচন্ড গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। কে কাকে ভোট দেবে, এই নিয়ে নানা চিন্তাভাবনায় ব্যস্ত সম্মানিত ভোটাররা। অনেকে এমন আছেন যাদের নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামানোর ফুরসত নেই। দিনমুজুর যারা, তাদের কাছে সব কিছুই যেন একটা উল্লম্ফন মনে হয়। তার পরও ভোটের দিন সকালবেলা যেকোনো একজন প্রার্থীকে তিনি ভোট দেবেনই।


অন্যবারের চেয়ে এবার ভোটারদের মাঝে যেন একটি নতুন সাড়া। কারণ দেশ দু’বছরের জরুরি অবস্থা থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পেরেছে। দেশে যে নির্বাচন না হওয়ার একটা সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল সেটা এখন আর নেই। তাই ভোট সবাই দেবে। সবাই ভোট দিন সেটা আমরা সবাই চাই। কিন্তু আপনি কাকে ভোট দিচ্ছেন সে বিষয়টি কি ভেবে দেখেছেন? কারণ আপনি মুসলমান হলে অবশ্যই আপনার মধ্যে পরকালে আল্লাহর কাছে সব কাজের জবাবদিহিতার ব্যাপারে ভাবতে হবে। আপনি অবশ্যই মৃত্যুবরণ করবেন। আর কবরে তিনটি প্রশ্ন করা হবে­ আপনার রব কে ছিল? আপনার নবী কে ছিল? আপনার দীন বা ধর্ম কী ছিল? এসব প্রশ্নের জবাব তারা দিতে পারবেন যারা রবের হুকুমমতো দুনিয়ায় চলেছেন। নবীর আদর্শ মোতাবেক জীবনযাপন করেছেন। ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ এমন কোনো কাজ করেননি। তা না হলে ওই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন না। তখন কবরের কঠিন শাস্তি শুরু হয়ে যাবে যখন হাশরের ময়দানে উঠবেন। তখন পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে, যার জবাব না দিতে পারলে একটি পা পর্যন্ত নড়তে দেয়া হবে না। তা হলো­ তোমার গোটা জীবন তুমি কার পথে অতিবাহিত করেছ? বিশেষ করে জিজ্ঞাসা করা হবে­ তোমার যৌবনকালকে তুমি কার পথে কাটিয়েছ? তারপর বলা হবে­ তুমি কোন পথে অর্থ উপার্জন করেছিলে, আর তা কার পথে খরচ করেছিলে? তুমি যে জ্ঞান অর্জন করেছিলে সে অনুযায়ী তুমি চলেছিলে কিনা? এই প্রশ্নগুলোর জবাব না দিতে পারলে আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা ওই লোকটির কপালের সামনের চুল ধরবে আর পা ধরে সাথে সাথে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।
ইসলামের দাবি হলো­ নেতৃত্ব নির্বাচন করা, এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কেননা আপনার সামান্য একটি সিল বা রায় দেয়া নিয়ে একজন লোক বিশাল ক্ষমতাধর হবেন আর যা না করার তা-ই করবেন। এ ব্যাপারে আপনি কি ভাবছেন নিজে মোটেই দায়ী হবেন না? অবশ্যই হবেন। কারণ ভোট বা সমর্থন হলো একটি পবিত্র আমানত। এর অপব্যবহার যদি হয় তাহলে ভোটদাতা অবশ্যই দায়ী হবেন।
কুরআন অনুযায়ী আমরা সবাই এই পৃথিবীতে আল্লাহতায়ালার প্রতিনিধি। যিনি যার প্রতিনিধি হন তিনি তার অ্যাসাইনমেন্ট অনুযায়ী কাজ করেন। নিজের থেকে কিছুই করার এখতিয়ার রাখেন না।
যদি তা না করেন তাহলে তিনি তার প্রতিনিধি থাকতে পারেন না। মূলত আমাদের সৃষ্টি করেছেন আল্লাহতায়ালা। তিনি আমাদের পালনেওয়ালা। তিনি আমাদের মাথার ওপর বিশাল আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পায়ের নিচে বিস্তীর্ণ জমি সৃষ্টি করেছেন। জমি যার এখানে আইন চলবে একমাত্র তাঁরই। তাঁর আইন ছাড়া অন্য কারো আইন চলতে পারে না। মহানবী সাঃ-কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর নবী হজরত মুহাম্মদ সঃ-কে হেদায়েত ও সত্য দীন সহকারে পৃথিবীতে এ জন্যই পাঠিয়েছেন যে, যাতে করে তিনি পৃথিবীর সব মতাদর্শের ওপর ইসলামকে বিজয়ী করতে পারেন। মহানবী সাঃ আল্লাহর এই নির্দেশ পুঙ্খানুপঙ্খ পালন করেছিলেন। যার কারণে তার ইন্তেকালের সময় আরব ভূখণ্ডে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। পরবর্তীকালে তাঁর সাহাবি ও দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমরের সময় অর্ধেক দুনিয়ায় ইসলামের আলো প্রজ্বলিত হয়েছিল।

একেবারে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে মরক্কোর রাবাত পর্যন্ত মুসলমানদের করতলগত হয়েছিল। সুতরাং রাসূল সাঃ-এর আদর্শমতো না চললে সে মুসলমান থাকতে পারে না। কুরআনে অন্য আয়াতে বলা হয়েছে­ তারা মুমিন নয়, যারা তাদের পারস্পরিক ব্যাপারে রাসূল সাঃ-কে ফায়সালাকারী না মানবে। এমতাবস্থায় যদি আমরা রাসূল সাঃ-কে ফয়সালাকারী হিসেবে গ্রহণ করি, তাকে নেতা মানি তাহলে আজো তাঁর নির্দেশমতো নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। রাসূল সাঃ যাদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতা দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা হলেন তাঁর নিকটতম সাহাবি বা চার খলিফা। তাদের ৩০ বছরের খেলাফতকালে ইসলামের সোনালি সমাজ সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, লুটতরাজ, জেনা-ব্যভিচার ব হয়ে একটি নিরাপদ নগরীতে পরিণত হয়েছিল মক্কা-মদিনা ও গোটা আরব ভূখণ্ড। আজো যদি কুরআনের আলোকে সুখী সমাজ নির্মিত হয় তাহলে প্রত্যেক মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেয়ে ধন্য হবে। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য আল কুরআনের অনুশাসনের কোনো বিকল্প নেই। যিনি সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও চরিত্রবান তাকেই মনোনীত করতে হবে। পক্ষান্তরে অসৎ, অত্যাচারী, সন্ত্রাসী, কালো টাকার মালিক, দুর্নীতিপরায়ণ ও ইসলামবিরোধী কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হতে বিরত থাকাই ঈমানি দায়িত্ব।
মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী

কোন মন্তব্য নেই: