ইসলামে সন্ত্রাসের স্থান নেই
ভারতের মুম্বাইয়ে যে জঘন্য সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল, তাতে মুসলমান এবং মানুষ হিসেবে আমি লজ্জিত ও আতংকিত। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা কাসাস, ২৮:৭৭)।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আগে পাঠানো কিতাবের আদেশের কথা মুসলমানদের মনে করিয়ে দিয়েছেনঃ ‘কেউ কাউকে প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ কিংবা দুনিয়ায় ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার কারণ ছাড়া হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল, আর যে কেউ কারও জীবন রক্ষা করল, সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করলঃ।’ (সূরা মায়িদা; ৫:৩২)।
কোন মুসলমানই নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শিশু, নিরপরাধ নারী-পুরুষঃ তারা যে ধর্মেরই হোক না কেন, তাদের মেরে ফেলতে পারে না। হ্যাঁ, যুদ্ধের ময়দানে সশস্ত্র শত্রুকে খুন করা জায়েজ, কিন্তু অন্য সময় একজন অমুসলিমের জানমাল মুসলমানদের হাতে নিরাপদ থাকবে।’
অনেক মুসলমান কোরআনে যুদ্ধের আয়াতগুলোর ভুল ব্যাখ্যা করেন ও ভাবেন, আল্লাহ সব সময়, যেখানেই সম্ভব অমুসলমানদের খুন করতে বলেছেন। এটা ঠিক নয়। হজরত মুহাম্মদ (সা·) একবার এক ইহুদির পক্ষে ও মুসলমানের বিপক্ষে ফায়সালা দিয়েছিলেন। তিনি পবিত্রতম মসজিদ কাবাকে মূর্তি থেকে মুক্ত করেন, কিন্তু কোনদিনই কোন মন্দিরে বা গির্জায় গিয়ে কোন মূর্তি ভাঙেননি বা কোন মুসলমানকে এমনটি করতে আদেশ দেননি। এমনকি, অমুসলিমদের উপাস্যকে গালি দেয়াও কোরআনে নিষেধ। (সূরা আনআম, আয়াত-১৮৮)।
নিরপরাধ নারী, শিশু, বেসামরিক পুরুষদের খুন করার তো প্রশ্নই আসে না, কোন অবিচারও তাদের ওপর করা যাবে না, এটাই ইসলামের শিক্ষা- ‘ওহে যারা ঈমান এনেছ। তোমরা অবিচল থাকবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে; এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদের কখনও প্ররোচিত না করে ন্যায়বিচার বর্জন করতে। ন্যায়বিচার করবে। ন্যায়বিচার করাই তাকওয়ার নিকটতম। আল্লাহকে ভয় করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন যা তোমরা করো।’ (সূরা মায়িদা, ৫:৮)।
যুদ্ধের ময়দানেও বাড়াবাড়ি করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন- আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তবে সীমা লংঘন করো না। আল্লাহ সীমা লংঘনকারীদের ভালোবাসেন না।
(সূরা বাকারা; আয়াত-১৯০)।
এটা ঠিক যে, ভারত, ইসরাইলসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চলছে; কিন্তু তার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বেসামরিক মানুষ খুন করা যাবে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম, এটা শুধু মুখে দাবি করলে হবে না; কাজে প্রমাণ করার দায়িত্বও মুসলমানদেরই নিতে হবে।
জাবীন হামিদ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন