বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০০৮

মহান আলস্নাহ তায়ালার গুণাবলী


মহান আলস্নাহ তায়ালার গুণাবলী


মহান আলস্নাহ রাব্বুল আলামীনের মহৎ গুণাবলীর সম্যক জ্ঞান ও স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর অবশ্য কর্তব্য এবং অপরিহার্য। কেননা, যারা মহান আলস্নাহতাআলার মহা মহিমান্বিত মহাজ্ঞান, মহাশক্তিধরের মহাশক্তির এবং অসীম ড়্গমতা সম্পর্কে অজ্ঞ, তারা কীভাবে আরশ-কুর্সীর অধিকারী, মহাবিশ্বের ও সৌরজগতের নিয়ন্ত্রণকারী এবং অসীম দয়ার অধিকারীর সকল গুণের মূল্যায়নে ও তাঁর আদেশ-নির্দেশ মানতে বাধ্য হবে। মহান আলস্নাহ তো তাঁর গুণাবলী অর্জনের জন্য মানুষকে নির্দেশও দান করেছেন যে, তোমরা বল, আলস্নাহর গুণই উত্তম। মহান আলস্নাহতাআলাই আমাদের ইসলাম ধর্ম দান করেছেন, তাই তা সর্বোত্তম ধর্ম। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে ৈছিবগাতালস্নাহি, ওয়া মান আহ্‌সানু মিনালস্নাহি, ছিবগাতাও ওয়া নাহ্‌নু লাহূ আবিদূন” অর্থাৎ আমরা আলস্নাহর রং (দ্বীন ইসলাম) গ্রহণ করেছি- (তাঁর গুণে গুণাণ্বিত হওয়ার জন্য)। আলস্নাহর রং-এর চাইতে (তাঁর গুণাবলীর চাইতে) উত্তম রং (গুণাবলী) আর কার হতে পারে? আমরা (মুসলমানরা) তাঁরই ইবাদত করি (এবং তাঁর গুণে গুণাণ্বিত হতে চাই)।

সমগ্র মানবজাতিকেই আলস্নাহতাআলার গুণে গুণাণ্বিত হওয়া উচিত। যেহেতু তিনি মানুষকে তাঁর (আলস্নাহর) প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন। মহান আলস্নাহ ন্যায়-বিচারক, ন্যায়-বিচার হওয়া, তিনি (আলস্নাহ) অতিশয় দানশীল, দানশীল হওয়া, তিনি পরোপকার পছন্দ করেন, পরোপকারী হওয়া, আলস্নাহ সহনশীল, সহনশীল হওয়া, তিনি জুলুম করেন না, জুলুমকারী না হওয়া এবং মহান আলস্নাহতাআলা সকল বিচারকের সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক, তাই সুশাসক ও ন্যায় বিচারক হওয়াই সকল মানুষেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।

মহান আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর মহাশক্তি, দয়া ও করম্নণার কথা সূরা আর রাহ্‌মানের প্রশ্নের মাধ্যমে জ্বীন ও মানবজাতিকে শিড়্গা দিচ্ছেন।

মহান আলস্নাহ্‌তা’আলার অমীয় বাণীসমূহে হচ্ছে যে, করম্নণাময় আলস্নাহ্‌, শিড়্গা দিয়েছেন কুরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা। সূর্য ও চন্দ্র হিসাবমত চলে, এবং তৃণলতা ও বৃড়্গরাজি সেজদারত আছে অর্থাৎ আলস্নাহর বাধ্যগত আছে। তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদণ্ড, যাতে তোমরা সীমা লংঘন না কর তুলাদণ্ডে অর্থাৎ এর দ্বারা ন্যায় বিচার কায়েম করবে। তোমরা ন্যায্য ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিয়ো না অর্থাৎ আলস্নাহ্‌তাআলা দাঁড়িপালস্না স্থাপন করেছেন, যাতে তোমরা ওজনে কম-বেশী করে জুলুম ও অত্যাচারে লিপ্ত না হও। তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্ট জীবের জন্য। এতে আছে ফলমূল এবং বহিরাবরণ ৈবিশিষ্ট খেজুর বৃড়্গ। আর আছে খোসাবিশিষ্ট শস্য ও সুগন্ধি ফুল।

অতএব, তোমরা উভয়ে (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের পালন কর্তার কোন্‌ কোন্‌ অনুগ্রহকে (অবদানকে) অস্বীকার করবে? তিনি (আলস্নাহতাআলা) মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে এবং জ্বীনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে। অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন্‌ কোন্‌ অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে? তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তôাচলের (চন্দ্র ও সূর্যের) মালিক। অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন্‌ কোন্‌ অবদানকে অস্বীকার করবে? তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন (যেমন বাংলাদেশের পদ্মা ও মেঘনা, মেঘনার পানি ঘোলা এবং পদ্মার পানি খুবই স্বচ্ছ ও পরিষ্কার)।

উভয়ের (দুই দরিয়ার) মাঝখানে রয়েছে এক অন্তôরাল, যারা অতিক্রম করে না। অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন্‌ কোন্‌ অবদানকে অস্বীকার করবে?

উভয় দরিয়া (স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পানির ও ঘোলা পানির দরিয়া থেকে) থেকে উৎপন্ন হয় মোতি ও প্রবাল অর্থাৎ মণিমুক্তা ও পান্না-জহরত। অতএব, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কোন্‌ কোন্‌ অবদানকে অস্বীকার করবে?

দরিয়ায় বিচরণশীল পর্বত সাদৃশ্য জাহাজসমূহ তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন। অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন্‌ কোন্‌ অবদানকে অস্বীকার করবে? ভূ-পৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালনকর্তার সত্তা (ছাড়া) ব্যতীত। অতএব তোমরা উভয়ে (জ্বীন ও ইনসান) তোমাদের পালনকর্তার কোন্‌ কোন্‌ অবদানকে অস্বীকার করবে? (সূরা-আর-রহমান-১-২৮)।

মহান আলস্নাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর মহাশক্তির কথা প্রিয় নবী (সাঃ) এর মাধ্যমে ইসলামের শুরম্নতে শক্তিধর কোরাইশ বংশের বড় বড় নেতা ও পৌত্তলিক মুশরিকদের হুঁশিয়ার করে বলেন, যে, হে নবী (সাঃ) আপনি বলুন, তোমরা কি তাঁকে (আলস্নাহকে) অস্বীকার করবেই যিনি দু’দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তাঁর সমকড়্গ দাঁড় করাতে চাও? তিনি তো বিশ্ব জগতের প্রতিপালক। তিনি ভূ-পৃষ্ঠে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং পৃথিবীতে রেখেছেন কল্যাণ এবং চারদিনের মধ্যে এতে ব্যবস্থা করেছেন খাদ্যের, সমানভাবে সকলের জন্য যারা এর অনুসন্ধান করে। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন যা ছিল ধূম্রপুঞ্জ বিশেষ। অনন্তôর তিনি (আলস্নাহতা’আলা) ওকে (আকাশকে) ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আমার আদেশ পালনের জন্য ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় প্রস্তুত হও।’ ওরা (আকাশেও পৃথিবী) বলল, ‘আমরা তো অনুগত হয়ে থাকতে প্রস্তুত আছি।’ অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন এবং প্রত্যেক আকাশের নিকট তাঁর আদেশ প্রেরণ করলেন এবং আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরড়্গিত করেছি। এসবই পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ মহান আলস্নাহ কর্তৃক সুবিন্যস্তô।” (সূরাঃ হ্বা-মীম সিজদাহ্‌-৯-১২)।

মহান আলস্নাহতা’আলা তাঁর মহা বিজ্ঞানী শক্তি, অপার মহিমা ও করম্নণার যে নিদর্শন, তিন তাঁর অতিশয় প্রিয় বান্দা ও রাসূল, আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তôফা সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নামের মাধ্যমে দেখিয়েছেন। তা বিশ্বের মানুষের নিকট এখন পর্যন্তô রহস্যময় ও অচিন্তô্যনীয় ঘটনা, যদিও তা বর্তমানে বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় এর সততা প্রমাণের দ্বার খুলে গিয়েছে। আর সেই মহামহিমায় ঘটনা হল যে, মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর মে’রাজ বা ঊর্ধ্বাকাশে গমন এবং মহান আলস্নাহতা’আলার সাথে কর্থাবার্তা, তাঁর কুদরতি মোয়ামেলার অনেক কিছু দর্শন ও উম্মতে মুহাম্মদীর প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত উপহার।

এই মহা পবিত্র ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল মহানবী (সাঃ)এৈর হিজরতের পূর্বে রজব মাসের ২৭ দিবাগত রাতে। এ সম্পর্কে মহান আলস্নাহতা’আলা বলেন, “পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে (কা’বা শরীফ) মসজিদে আকসা পর্যন্তô (বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্তô) যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছিযৈাতে আমি তাঁকে (নবী করিম সাঃকে) কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি শ্রবণকারী ও দর্শনশীলা”। সূরা বনী ইসরাঈল-০১ আয়াত)।

মহান আলস্নাহতা’আলার মহা শক্তি ও কুদরতের আরো পরিচয় এই যে, সকল আরব গোত্র ও কোরাইশ নেতাগণের অনিচ্ছাসত্ত্বেও এই ঘটনার সততা প্রকাশ পেয়েছিল, তাদের নেতা আবু সুফিয়ানের মুখের ভাষায়।
মওলানা মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ইবনে ইউসুফ

কোন মন্তব্য নেই: