শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০০৮

আল কুরআন এবং আমরা


আল কুরআন এবং আমরা



এটা সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুত্তাকিদের জন্য পূর্ণাঙ্গ হিদায়াত।­ (সূরা বাকারা) মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ আসমানি কিতাবসমূহের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব হলো আল কুরআন। আমাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার একমাত্র দিক নির্দেশকই হলো কুরআন।
কুরআন মাজিদ আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি পড়ে থাকি। রমজান মাসে দেখা যায়, কুরআন পাঠ ও খতম নিয়ে প্রতিযোগিতা পর্যন্ত শুরু হয়ে যায়। কিন্তু কুরআন গতানুগতিকভাবে পাঠ কিংবা খতমের জন্য নয়। হ্যাঁ, কুরআন পাঠে অনেক নেকি পাওয়া যায় সত্যি। কিন্তু আল্লাহপাক যে উদ্দেশ্যে কুরআন মাজিদ নাজিল করেছেন তা সফল হয় না। কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহকে চেনা, তাঁর পথকে চেনা, তিনি যে বিধান জারি করেছেন তা পালন করা। অথচ বড়ই অনুতাপের বিষয় যে, কুরআন আমরা সেভাবে হিফাজত করি না।
বর্তমান বিশ্বে চতুর্দিকে চলছে হানাহানি, মারামারি, খুন, হত্যা, চুরি, সন্ত্রাস, আত্মসাৎ, প্রতারণা, ধর্ষণ, মাদক প্রকোপ, মরণব্যাধি এইডস, নানা রকমের অনাচার, অবিচার। আজকে আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক শীর্ষে অবস্থান করছি ঠিকই, কিন্তু কোথাও কোনো শান্তি পাচ্ছি না। এর একমাত্র কারণই হলো আমরা মুসলমানরা কুরআন থেকে অনেক পেছনে। কুরআন থেকে অনেক দূরে। এ যুগের মুসলমানরা কুরআন পড়ে না, আর যারা পড়েন তারাও এর হুকুম আহকাম মেনে চলেন না। অথচ কুরআনই একমাত্র সংবিধান যেটি সমগ্র বিশ্বে এনে দিতে পারে শান্তি তেমনি আমাদের দেবে পরকালীন মুক্তি। রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন­
‘যে ব্যক্তি কুরআন পাক অধ্যয়ন করবে (অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ জ্ঞান লাভ করবে) অর্থাৎ, তদানুযায়ী আমল করবে এবং জীবন গঠন করবে­ তার হালালকে হালাল জানবে, হারামকে হারাম জানবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন এবং তার পরিবার পরিজনদের ভেতর থেকে এমন দশ জনকে (জান্নাতের জন্য) সুপারিশ করার ক্ষমতা দান করবেন যাদের প্রত্যেকের জন্যই জাহান্নাম নির্ধারিত হয়েছিল।’
উপরিউক্ত হাদিসের আলোকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, কুরআন পড়া, বোঝা ও বুঝে প্রাত্যাহিক জীবনে আমল করাটা কত জরুরি। কিন্তু আমরা অধিকাংশই এটা উপলব্ধি করি না। আমাদের মধ্যে যারা কুরআন পড়ে তাদের সংখ্যা অতি নগণ্য। কুরআন থেকে আমরা অনেক দূরে। আর এ জন্য আল্লামা ইকবাল বলেছিলেন­ ‘সেই মুসলমান সম্মানিত হয়েছে যে পবিত্র কুরআনের অনুসরণ করেছে। আর তোমরা লাঞ্ছিত ও অধঃপতিত হয়েছো পবিত্র কুরআনকে বর্জন করে।’
সুতরাং পরিশেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, কুরআনকে কেবল গতানুগতিকভাবে তিলওয়াত নয়, বরং এর অর্থ ও ব্যাখ্যা বোঝা, এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা আমাদের জন্য ফরজ এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা দরকার নতুবা কাল হাশরের ময়দানে আল্লাহর কাছে কঠিন জবাবদিহি করতে হবে।
হাফসা ফারুকী প্রতীতি

কোন মন্তব্য নেই: