রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০০৮

পবিত্র হজ বিশ্বমানবতার কল্যাণ ও শান্তি বয়ে আনুক


পবিত্র হজ বিশ্বমানবতার কল্যাণ ও শান্তি বয়ে আনুক



আজ পবিত্র হজ পালিত হচ্ছে। মক্কা নগরীর অদূরে আরাফাত ময়দানে সব হাজী একত্র হয়েছেন। সেখানে তারা সারাদিন অবস্থান করবেন। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান হজের তিনটি রুকনের একটি। সৌদি আরবের স্থানীয় হিসাব অনুযায়ী জিলহজ মাসের ৯ তারিখে আরাফাতের উকুফ বা অবস্থান পালিত হয়। যদিও জিলহজের ৮ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত হজের রুকন ও ওয়াজিবগুলো পালন করতে হয়। কিন্তু ৯ তারিখে আরাফাত ময়দানের অবস্থান সবচেয়ে দৃশ্যমান অংশ হওয়ায় সাধারণভাবে এ দিনটি হজের দিন হিসেবে পরিচিত।

হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। কালেমায়ে তাইয়েবা, সালাত, সিয়াম ও জাকাতের মতোই হজের গুরুত্ব। তবে তা আর্থিক সঙ্গতি ও মক্কা নগরী পর্যন্ত পৌঁছানোর উপায় সুলভ হওয়ার শর্তে মুসলমানদের ওপর ফরজ। দীর্ঘপথের সফর ও উল্লেখযোগ্য অঙ্কের অর্থব্যয় জড়িত থাকায় ইসলামের এই বুনিয়াদি ইবাদত পালনে সক্ষম হয় সীমিতসংখ্যক মুসলমান। জীবনে মাত্র একবার হজ করা ফরজ। তাই প্রত্যেক মুসলমানের কামনা থাকে এই বিশেষ ইবাদতটির সামর্থø অর্জনের। হজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি অনুরাগ ও আনুগত্য প্রকাশের চরম পর্যায়। আত্মীয়-পরিজন ও আবাসভূমি ছেড়ে মহান প্রভুর প্রতি ঐকান্তিক ভক্তি ও ভালোবাসা প্রকাশের জন্য মুমিন বান্দারা ছুটে যান মক্কা নগরীতে। তারা যখন লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারিকা লাকা­ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির, আমি হাজির, নিশ্চয়ই প্রশংসা, অনুগ্রহ ও রাজত্ব তোমার, তোমার কোনো শরিক নেই’­ ধ্বনিতে চার দিক মুখরিত করে তোলেন, তখন তাতে যোগ দেয় প্রকৃতির সব কিছু।

বায়তুল্লাহ প্রদক্ষিণ, সাফা-মারওয়ার মাঝখানে দৌড় ও আরাফাত ময়দানে উপস্থিতি, শয়তানের উদ্দেশে কঙ্কর নিক্ষেপ ও কোরবানির মাধ্যমে অতিবাহিত হয়ে যায় কয়েকটি দিন। আর সমগ্র পৃথিবী থেকে আসা মুসলমানরা একই পোশাকে সজ্জিত হয়ে একই ধ্বনি উচ্চারণ করে নিজেদের ঐক্য ও সংহতির ঘোষণা দেন। একই আদম-হাওয়ার সন্তানরা যেন পারিবারিক মেলবন গড়ে তোলেন এ উপলক্ষে। বর্ণ, গোত্র ও অঞ্চলের ভেদরেখা মুছে যায় তখন। আজকের তারিখেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়েছিলেন সেই বিখ্যাত ভাষণ, যা মানবাধিকারের সবচেয়ে সুস্পষ্ট দলিল। আরব-অনারব ও সাদা-কালোর ভিত্তিতে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণীত হবে না, খোদাভীতিই হবে মর্যাদার মানদণ্ড, সব মানুষ আদম আঃ-এর সন্তান, আর তিনি ছিলেন মাটির তৈরি­ বিশ্বমানবতার ঐক্যের এই চূড়ান্ত সূত্র তিনি উচ্চারণ করেছিলেন দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে। আজ সারা বিশ্বের মানুষ যখন সমস্যা ও জটিলতার আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছে, বিভেদ ও অনৈক্যের শিকার হয়ে অশান্তি ও দুর্দশা পোহাচ্ছে, বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ যখন অভ্যন্তরীণ গোলযোগ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাইরের দুশমনদের চক্রান্ত প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন আল্লাহর রাসূলের বিদায় হজের ভাষণ তাদের জন্য হতে পারে পরম পথনির্দেশ।

সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ এখন আরাফাত ও মিনায় অবস্থান করছেন হজের উদ্দেশে। আমাদের দেশ থেকেও প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ গিয়েছেন হজ করতে। আল্লাহ সবাইকে সুস্থ রাখুন, মাকবুল হজ আদায়ের তাওফিক দিন, তারা নিরাপদে দেশে ফিরে আসুন এই কামনা করি। হজ আমাদের মধ্যে বয়ে আনুক সাম্য ও মৈত্রীর বারতা। জাতীয় জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসুক, মুসলিম উম্মাহর গৌরব ও মর্যাদা আবার প্রতিষ্ঠিত হোক একই সূত্রে গ্রথিত হওয়ার মাধ্যমে।

কোন মন্তব্য নেই: